ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

আতঙ্ক কাটলেও রয়ে গেছে ভয়াল জঙ্গিবাদের বীজ

সালাহ উদ্দিন জসিম | প্রকাশিত: ০১:২৮ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০২৩

১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার দিন। ২০০৫ সালের এই দিনে নজিরবিহীন সন্ত্রাস দেখেছে দেশ। দেশের হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি-আধা-সরকারি স্থাপনা লক্ষ্য করে বোমা হামলা হয় এই দিনে। একই সময়ে ৬৩ জেলার ৪শ স্পটে বিস্ফোরণ ঘটে ৫শ বোমার।

সেই থেকে নানান সময়ে নানান প্রক্রিয়ায় ছড়িয়েছে এই সন্ত্রাস। ২১ আগস্ট, হলি আর্টিসান হয়ে সর্বশেষ মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার দুর্গম কালাপাহাড়ে গিয়ে ঠেকেছে। কখনো হামলার পরে সামনে এসেছে, কখনো সংগঠিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আবার কখনো অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা গেছে সন্ত্রাসের মূল। তবে ভয়াবহ এই সন্ত্রাসের কবল থেকে মুক্ত হওয়া যায়নি।

বিশিষ্টজনরা বলছেন, সন্ত্রাস নির্মূলে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রাখতে হবে চৌকস টিম। রাজনৈতিক দলগুলোসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতা থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখতে হবে।

আরও পড়ুন: নতুন মোড়কে ফের চাঙা হওয়ার চেষ্টা পুরোনো জঙ্গিদের

কর্তৃপক্ষ বলছে, সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ একেবারে নির্মূল করা না গেলেও নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। তবে সেই ২০০৪-০৫ এর মতো পরিস্থিতি এখন নেই। সে অবস্থা হবেও না। এখন সন্ত্রাস দমনে বিশেষায়িত বাহিনী নিয়মিত কাজ করছে। সন্ত্রাসী বা জঙ্গি সংগঠন সংগঠিত হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তর ও র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, সিরিজ বোমা হামলার ঘটনার পরপরই সারাদেশে ১৫৯টি মামলা দায়ের করা হয়। এগুলোর মধ্যে ১৪২টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। বাকি ১৭টি মামলায় ঘটনার সত্যতা থাকলেও আসামি শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয় ৯৬১ জনকে। ১ হাজার ৭২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ৩৪৯ জনকে দেওয়া হয়েছে অব্যাহতি।

jagonews24

সারাদেশে ১৫৯টি মামলার মধ্যে ৯৪টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এসব মামলায় ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ২৭ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে ৮ জনের। এসব মামলায় খালাস পেয়েছে ৩৫৮ জন। এছাড়া ঢাকায় বিচারাধীন ৫টি মামলা সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখনো বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে ৫৫টি মামলা। এসব মামলার আসামি ৩৮৬ জন।

আরও পড়ুন: ইমাম মাহমুদের কথায় সপরিবারে পাহাড়ে ‘হিজরত’

এভাবে ২১ আগস্ট, হলি আর্টিজানসহ সন্ত্রাসী-জঙ্গি দমনে চাঞ্চল্যকর সব মামলারও বিচার হয়েছে। কিছু চলমান রয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে এটিও কার্যকর ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষেয় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, সে সময়ে (২০০৪-০৫) সন্ত্রাসী-জঙ্গি সংগঠনগুলো অবাধে কাজ করার সুযোগ পেত। তখন বিশেষায়িত কোনো টিম ছিল না তাদের দমনে। এখন জঙ্গিদের কাজ করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। তারা সংগঠিত হওয়ার আগেই আমরা আইনের আওতায় আনি। আমাদের সেই সক্ষমতা সরকার বৃদ্ধি করেছে। এখন তো সন্ত্রাস দমনে বা জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করার জন্য সিটিটিসি, এটিইউ (এন্টি টেরোরিজম ইউনিট) সহ অনেকে কাজ করে।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করি। তাদের সংগঠিত হওয়ার আগেই আমরা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলি। সম্প্রতি জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া, ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ বা অন্য যেসব সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, এদের নিয়ন্ত্রণই তার প্রমাণ।

আরও পড়ুন: জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নিষিদ্ধ

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, সন্ত্রাসবাদ খুব সহজে নির্মূল করা সম্ভব নয়, যদি আমরা আমাদের মধ্যকার রাজনৈতিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট চিন্তাচেতনা মুক্ত না হতে পারি। সন্ত্রাস দমনের নামে যদি বিরোধীমত দমন হয় বা বিরোধীরাও যদি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য সন্ত্রাস লালন করে, তাহলে আসল সন্ত্রাসীরা রেহাই পেয়ে যাবে। রাজনৈতিক এই বাধা দূর করে সবার মধ্যে সচেতনতা আনতে হবে।

তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি সাময়িক দমন নয়, এ নিয়ে নিয়মিত নজরদারি ও কার্যক্রম চালাতে হবে। তাহলে সন্ত্রাস নির্মূল সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, সরকার রাজনৈতিক সন্ত্রাস, এলাকাগত সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি নির্মূলে সফল হয়েছে। জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাস দমনে সরকারের সফলতা অতি উচ্চ পর্যায়ের। কিন্তু জঙ্গিবাদ নির্মূলের দাবি করা উচিত হবে বলে আমি মনে করি না। জঙ্গিবাদ এখন একটি বৈশ্বিক ইস্যু। সমগ্র পৃথিবীতে জঙ্গিবাদ গোপনে লালিত হচ্ছে। কখন, কোথায় আত্মপ্রকাশ করবে সেটি বলা দুষ্কর। সমগ্র পৃথিবী জঙ্গিবাদ দমনে কাজ করছে। আমরাও পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সফলতা অর্জন করেছি। কিন্ত নির্মূল করা সম্ভব বলে আমি মনে করি না। প্রতিক্ষণ জঙ্গিবাদ দমনে চৌকস টিম নিয়োজিত রাখতে হবে।

১৭ আগস্ট সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলার ঘটনা ঘটায় জঙ্গিরা। সেসময়কার সরকার মিডিয়ার সৃষ্টি বলে এড়িয়ে গেলেও এখন আমাদের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী অত্যন্ত দক্ষ। তারা এ জঙ্গিবাদকে নিষ্ক্রিয় করছে এবং যথাসময়ে তাদের (জঙ্গিদের) আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।

তিনি বলেন, জঙ্গিগোষ্ঠীর কিছু কিছু ঘুমন্ত সেল এখনো রয়ে গেছে। তারা আত্মপ্রকাশ করার চেষ্টাও করছে। জঙ্গি একেবারে নির্মূল করতে পারিনি, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এসইউজে/এমএইচআর/এমএস