হালদায় মৎস্য প্রজননক্ষেত্র ব্যবস্থাপনায় প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন
হালদা নদীতে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে কুমিল্লায় মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিভাগের মৎস্য সম্পদের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ করণীয় শীর্ষক কর্মশালায় রাজধানীর মৎস্য ভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান।
এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, হালদা নদী বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নদীতে এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য হালদার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। হালদাকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এ হেরিটেজের গুণগত মান, ঐতিহ্যগত অবস্থা, সাংস্কৃতিক পরিবেশ সবকিছু আমাদের বিবেচনায়রাখতে হবে। এর স্বতন্ত্র অবস্থা যেন বিনষ্ট না হয়, এখানে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এর যাতে দূষণ না হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এটি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়গুলো নিয়ে সরকার কাজ করছে। হালদা নদী নিয়ে আমাদের প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। শিগগির এটি অনুমোদন হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে হালদাকে আরও সময়োপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাহিদ রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় কুমিল্লা প্রান্তে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক। কুমিল্লা প্রান্তে স্বাগত বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় মৎস্য দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবদুস ছাত্তার। ঢাকা প্রান্তে আরও বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (ব্লু ইকোনমি) ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর এবং মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার।
কর্মশালার বিষয়বস্তু নিয়ে উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ শরিফুল আজম। মৎস্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা কর্মশালায় অংশ নেন।
কর্মশালা শেষে কুমিল্লার আহমেদ নগরে নবনির্মিত ৫ তলা বিশিষ্ট নান্দনিক মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।
মাছ রপ্তানির বিষয়ে এসময় মন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের নানা উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় বিদেশে বাংলাদেশের মাছের চাহিদা তৈরি হয়েছে। বিদেশি ক্রেতাদের নানাভাবে আকৃষ্ট করা জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। শিগগির দেশে একটি ফিশ উৎসব আয়োজন করা হবে, যেখানে ২০টির ও অধিক দেশের প্রতিনিধি অংশ নেবে। আমাদের দেশের মাছ বিদেশে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য। তারপরও কিছু অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মাছে ভেজাল মেশানোর কারণে পরীক্ষায় কোথাও কোথাও রপ্তানি করা মাছের চালান আটকে যাচ্ছে। যারা এ ধরণের অসাধু কাজ করবে তাদের ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকবে। এ জাতীয় ঘটনায় যারা জড়িত, যারা বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে তাদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করা থেকে সরকার সরে আসবে। অন্যদিকে যারা রপ্তানিতে ভালো করবে তাদের সরকার সহায়তা করবে।
এ বিষয়ে মন্ত্রী আরও জানান, রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য দেশে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি করা হয়েছে, পরীক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এসব ল্যাবরেটরিতে কারিগরি দিকে অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তারা কাজ করছে।
তিনি বলেন, যারা বৈজ্ঞানিক উপায়ে মৎস্য আহরণ করে না তাদের বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমুদ্রে, নদীতে, বিল, হাওর, বাওড়ে যারা মাছ আহরণ করে তারা অনেক সময় মা মাছ ও পোনা মাছ আহরণ করে। অবৈধ জাল ব্যবহার করে অথবা বিষ প্রয়োগ করে যারা দেশের মৎস্যসম্পদ ধ্বংস করার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান কঠোর। কোনোভাবেই তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
নবনির্মিত মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুবই সময়োপযোগী উল্লেখ করে এখানে শুধু মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদেরই নয় বরং মৎস্য উৎপাদন, বিপণন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্তদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। মৎস্য খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী।
আইএইচআর/এমআইএইচএস/জেআইএম