বাংলাদেশকে তামাকের ক্ষতিহ্রাসে কৌশল প্রণয়নের পরামর্শ
তামাকসৃষ্ট মৃত্যু কমিয়ে আনতে ভেপিংসহ তামাকের ক্ষতিহ্রাস সহায়ক পণ্যসমূহের সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে গবেষণা এবং নীতি প্রণয়ন সংস্থা থলোস ফাউন্ডেশন। তামাকের ক্ষতিহ্রাস নিয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে তুলনামূলক নিরাপদ বিকল্প ভেপিং সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করতেই এপ্রিলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে থলোস ফাউন্ডেশন।
‘ভেপিং এবং তামাকের ক্ষতিহ্রাস: লাখো মানুষের জীবন বাঁচানোর উপায়’ শীর্ষক এ তথ্য সহায়িকা বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং আইনপ্রণেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হতে পারে।
থলোস ফাউন্ডেশন বিভিন্ন নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভর করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে তামাক ও ধূমপান জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হিসেবে হাজির হয়েছে। এমন বাস্তবতায় থলোস ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ ঝুঁকিতে থাকা অন্যান্য দেশেগুলোকে প্রচলিত ধূমপান ছেড়ে তুলনামূলক নিরাপদ বিকল্প বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ভেপিংয়ের মতো তুলনামূলক নিরাপদ বিকল্প বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশেগুলোকে তামাকসৃষ্ট ক্ষতি উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে বলে মত থলোস ফাউন্ডেশনের। কারণ, তামাক নিষিদ্ধ করার তুলনায় এর ক্ষতিহ্রাসের কৌশল বাস্তবায়ন অধিক সফল এবং বাস্তবসম্মত হবে।
ভেপিং নিকোটিন নির্ভর এবং তাপের সাহায্যে পরিচালিত। এতে প্রোপাইলিন গ্লাইকল অথবা ভেজিটেবল গ্লিসারিন এবং সুগন্ধীমিশ্রিত থাকে। অন্যদিকে সিগারেট পোড়ালে এর ভেতরে থাকা ক্যানসার সৃষ্টিকারী হাজারো বিষাক্ত রাসায়নিক, যেমন টার ওকার্বন মনোক্সাইড, নিকোটিনের তুলনায় বহুগুণে বেশি ক্ষতিকর।
তামাকের ক্ষতিহ্রাস নিয়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা রয়েছে ডা. কনস্টান্টিনোস ফারসালিনোসের। তার মতে, ভেপিংয়ের মতো একটি প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করা বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত হবে না। কারণ, জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তায় এর বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
ভেপিংয়ের বাজারজাত করার ক্ষেত্রে নীতি অনুসরণ করতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে বিক্রি ক্ষেত্রে বড় অর্থদণ্ডের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এর পাশাপাশি পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করতে হবে।
থলোস ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে ভেপিং নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তির জবাব দেওয়া হয়। অনেকের মাঝে ভুল ধারণা আছে, নিকোটিনের থেকে ক্যানসার হয় এবং ভেপিংয়ের ফলে ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির গবেষণায় বলা হয়েছে, ভেপিং সাধারণ সিগারেটের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস ধূমপান ছাড়ার জন্য ভেপিং বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর নীতিপ্রণেতাদের এখন তামাকের ক্ষতিহ্রাসের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। ক্ষতিহ্রাসের কৌশল বাস্তবায়ন এবং তুলনামূলক নিরাপদ বিকল্প উৎসাহিত করার মাধ্যমে লাখো লাখো লোকের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি এবং তামাকের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতিও হ্রাস করা যাবে।
বাংলাদেশ সফরের সময় ফারসালিনোস বলেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য ঝুঁকি আনুপাতিক নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এ অঞ্চলে তামাকের ক্ষতিহ্রাস উদ্যোগে নেতৃত্ব দিতে পারবে।
আইএইচআর/জেএইচ/জেআইএম