ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

‘বারি’ জাতে দীর্ঘ হচ্ছে আমের মৌসুম, তবুও চড়া দাম

আল-আমিন হাসান আদিব | প্রকাশিত: ০৯:৩০ এএম, ০৩ আগস্ট ২০২৩

মধুমাস (জ্যৈষ্ঠ) শেষ হয়েছে দেড়মাস আগেই। এ মধুমাস ঘিরে দেশে যেসব ফল পাওয়া যায়, তার প্রায় সবই ফুরিয়েছে। এখন মিলছে শুধু আম-কাঁঠাল। কাঁঠালও একেবারে শেষ দিকে। বাজারে মিলছেও কম। তবে কিছুটা ভিন্ন চিত্র আমের ক্ষেত্রে। মৌসুমের একেবারে শেষদিকেও বাজারে এখনো আমের সরবরাহ ভালো। আম্রপালি ও বারি জাতের কল্যাণে এখনো মিলছে আম।

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে বেশ কয়েক জাতের আম এখনো পাওয়া যাচ্ছে। অন্যবারের চেয়ে আগস্ট মাসে এবার আমের সরবরাহ কিছুটা বেশি। দাম একটু বেশি হলেও যেসব আম পাওয়া যাচ্ছে, তা স্বাদ-গন্ধে ভালো।

আরও পড়ুন: সম্ভাবনাময় আম রপ্তানিতে বাংলাদেশ

বিক্রেতারা জানান, দুই বছর আগেও এ সময়টাতে (আগস্ট) আম্রপালি ও ফজলি জাতের কিছু আম পাওয়া যেত। বারি আম থাকলেও সরবরাহ খুব কম ছিল। কিন্তু এবার ফজলি কম, আম্রপালি ও বারি আম বেশি। শেষ দিকে জাত ও মানভেদে ৯০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে আম পাওয়া যাচ্ছে। এই দাম তুলনামূলক কম বলে দাবি বিক্রেতাদের।

যেসব এলাকা থেকে তারা (ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা) আম আনছেন, সেখান থেকে আরও আম পাঠাতে চাচ্ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তাদের ধারণা- আরও ১০ দিন আম্রপালি এবং একমাস বারি জাতের আমের ভালো সরবরাহ পাওয়া যাবে।

দুই বছর আগেও আগস্টে আম্রপালি ও ফজলি জাতের কিছু আম পাওয়া যেত। বারি আম থাকলেও সরবরাহ খুব কম ছিল। কিন্তু এবার ফজলি কম, আম্রপালি ও বারি আম বেশি

মঙ্গল ও বুধবার (১ ও ২ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, পুরান ঢাকার বাদামতলী, মিরপুর-১ এর শাহ আলীর মাজারের পাশের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনো এসব বাজারে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ থেকে আম আসছে। মৌসুম শেষের দিকে হলেও এখনো আমের বেচাকেনা ভালো।

আরও পড়ুন: বেশি আম কিনে ঘরে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যা মানা জরুরি

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা বাজারেও মিলছে পর্যাপ্ত আম। গুলিস্তান, রামপুরা কাঁচাবাজার, মধ্যবাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নতুনবাজার, মহাখালী আমচত্বর, মিরপুর এলাকায় ফলের দোকানে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে আম্রপালি। এসব আম্রপালির ৯০ শতাংশই নওগাঁর সাপাহার থেকে আনার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আম্রপালির পরই বাজারে বেশি মিলছে বারি-৩, বারি-৪, বারি-১১, বারি-১২ বা গৌড়মতি জাতের আম। তবে সব আমই ‘বারি আম’ বলে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

খুচরা বাজারে আম্রপালি ও বারি আম মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফজলির কেজিও ১৫০ টাকা। ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্যানানা আম। এছাড়া আশ্বিনা আম পাওয়া যাচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। এরপর কাটিমন জাতের কিছু আম আসবে। সেগুলো ৩০০ টাকা কেজির নিচে পাওয়া যাবে না বলে জানান বিক্রেতারা।

আম্রপালি ও বারি আম মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফজলির কেজিও ১৫০ টাকা। ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্যানানা আম। এছাড়া আশ্বিনা আম পাওয়া যাচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে

আরও পড়ুন: একই গাছে মিলবে কাঁচা-পাকা আম

শাহ আলীর মাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী রজব আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন ফজলি নেই। আগে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রচুর ফজলি আম আসতো। শেষ দিকে ফজলি ও আশ্বিনা আম দিয়ে আমের সিজন (মৌসুম) শেষ হতো। এখন বারি আমের ছড়াছড়ি। বারি এখনো মাসখানেক পাওয়া যাবে। তবে দাম আরও বাড়বে।’

নতুনবাজার এলাকায় ভাটারা থানার সামনে রয়েছে বেশ কিছু ফলের দোকান। বুধবার (২ আগস্ট) সেখানে এক দোকানে আমের দরদাম করছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘বাসায় ফেরার সময় প্রতিদিন দুই-এক কেজি আম নিয়ে যাই। বাচ্চারা খায়। আম্রপালি নেওয়া হয় বেশি। গত দুইদিন বারি-৪ নিচ্ছি। আমটা বেশ ভালো। আঁটি ছোট এবং রসালো। দাম বেড়ে যাচ্ছে। অন্যবারের তুলনায় দাম এবার এখনো কমই মনে হচ্ছে।’

কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘আম আছে এখনো ভালোই। আমাদের লোক রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং সাপাহারে (নওগাঁ)। আরও মাসখানেক আম পাওয়া যাবে।’

ডিসেম্বর-জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যাতে আম পাওয়া যায়, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। কাটিমন জাতের আম নিয়ে আরও গবেষণা দরকার। তাহলে দেখা যাবে, ফেব্রুয়ারিতেও বাজারে আম পাওয়া যাবে

আরও পড়ুন: আম-দুধ একসঙ্গে খেলে শরীরে যা ঘটে

তিনি আরও বলেন, ‘বাগান থেকে বারি আম কিনছি ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে। লেবার খরচ, পরিবহন খরচ দিয়ে সেটা ৫ হাজার টাকার ওপরে পড়ছে। আমরা পাইকারিতে ৫ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে ছেড়ে দিচ্ছি। খুচরাতে যারা বিক্রি করছেন, তারা হয়তো সেটা কেজিতে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। আম্রপালি একেবারে শেষ দিকে। আম্রপালির দাম বাগানেই বাড়ছে প্রতিদিন।’

উত্তর বাড্ডার ফল ব্যবসায়ী রাজু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘মৌসুম তো শেষ। ১০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। অন্যবার জুলাইয়ের পর আর আম বিক্রি করিনি। কিন্তু এবার আম আছে, মানুষ কিনছেও। বাজারে সব জিনিসপত্রের যেভাবে দাম বেড়েছে, তাতে অন্যবারের চেয়ে এবার আমের দাম খুব বেশি না।’

তিনি বলেন, ‘বাদামতলী বাজারে এখনো আম পাচ্ছি। তবে প্রতিদিন কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। সপ্তাহখানেক পর সাধারণ ক্রেতারা আর আম কিনে খেতে পারবেন না হয়তো। তখন আমরাও বেচবো না।’

দীর্ঘ হচ্ছে আমের মৌসুম
নতুন কয়েকটি জাত উদ্ভাবনে দেশে আমের মৌসুম দীর্ঘ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফল গবেষকরা। অর্থাৎ অসময়েও বাজারে আমের সরবরাহ অনেকাংশে ‘স্বাভাবিক’ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বারি-৪ ও বারি-১২ আম শ্রাবণ-ভাদ্র মাসেও পাওয়া যাচ্ছে। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে বারি-১২ আম ‘গৌড়মতি’ নামে পরিচিত। এছাড়া কাটিমন জাতের আমের চাষও বাড়ছে, যা বছরে তিনবার ফলন হয়।

আরও পড়ুন: আম খাওয়ার পর যে ৫ খাবার খেলে হতে পারে বিপদ

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন ড. আব্দুল আলীম। সম্প্রতি তিনি অবসরে গেছেন। দীর্ঘদিন রাজশাহী অঞ্চলের আম নিয়ে গবেষণা করেছেন এ ফল গবেষক। ড. আব্দুল আলীম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমের মৌসুমটা বড় হয়েছে এবং হচ্ছে। এটা তো একদিনের বিষয় না। তবে বারি জাতের আম মৌসুম বড় করার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। শুনছি, এখন কাটিমন জাতের আম নিয়েও ফল গবেষণা কেন্দ্র তৎপর। সেটা করা গেলে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসেও আম পাওয়া যাবে।’

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আরও কয়েকমাস অর্থাৎ ডিসেম্বর-জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যাতে আম পাওয়া যায়, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। কাটিমন জাতের আম নিয়ে আরও গবেষণা দরকার। তাহলে দেখা যাবে, ফেব্রুয়ারিতেও বাজারে আম পাওয়া যাবে।’

এএএইচ/কেএসআর/এএসএম