ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বীর নিবাস

‘আপ্যায়ন’ ব্যয়ে আরও ৬৫ লাখ টাকা আবদার

মফিজুল সাদিক | প্রকাশিত: ১২:৩২ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২৩

বীর নিবাস। অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও শহীদ বীরদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ‘বীর নিবাস’ নামে এই আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সারাদেশে ৪৯৩টি উপজেলায় ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এই আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের সময় ও ব্যয় দুটোই ফের বাড়ছে।

নতুন করে প্রকল্পের আওতায় ‘আপ্যায়ন’ খাতে ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ‘সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও কনফারেন্স’ খাতে ৪৪ লাখ, ‘অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ’ খাতে ১ কোটি ৬৫ লাখ, ‘কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক (ল্যাপটপ)’ খাতে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হচ্ছে এতে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রথমে আপত্তি ছিল, পরবর্তীসময় আলোচনা সাপেক্ষে এসব রাখা হয়। তবে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় ‘অন্যান্য ভাতা’ খাতটি আরডিপিপি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্পের পরিচালক এম ইদ্রিস সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। প্রকল্পের ওপর পিইসির (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা হয়েছে। প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে অনেক নির্মাণ কাজের রেট সিডিউল বেড়েছে।’

নতুন করে ৬৫ লাখ টাকার ‘আপ্যায়ন ভাতা’ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, বিষয়টি নিয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারবো না।

এদিকে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রচার ও বিজ্ঞাপন খাতে ব্যয় আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী প্রাক্কলন করতে হবে। বীর নিবাসে পানির সুব্যবস্থার জন্য পাম্প স্থাপনে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে অনুমোদিত রেট সিডিউল অনুযায়ী, বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। এছাড়া ভবিষ্যতে অপ্রত্যাশিত ব্যয় নির্বাহের জন্য ‘ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সি’ বাবদ সর্বোচ্চ ১ শতাংশ এবং ‘প্রাইস কনটিনজেন্সি’ বাবদ সর্বোচ্চ ১ শতাংশ বায়ের সংস্থান বিধি মোতাবেক রাখা যেতে পারে।

আরডিপিপিতে প্রাইস কনটিনজেন্সি ও ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সি বাবদ ব্যয় প্রাক্কলনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক কমিশনকে জানান, ডিপিপিতে ভবনের সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনের জন্য ১৫০ ফুট গভীরতা বিবেচনা করে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ স্থানে এ গভীরতায় পানি পাওয়া যায় না। তাই পানির সুব্যবস্থার জন্য পাম্প স্থাপনে প্রয়োজনে বর্ধিত ব্যয় নির্বাহের লক্ষ্যে প্রাইস কনটিনজেন্সি ও ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সির সংস্থান রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন> ১৪০০০ ‘বীর নিবাস’ নির্মাণের প্রস্তাব, একটিতে ব্যয় সাড়ে ১৯ লাখ

পরিকল্পনা কমিশনের সভায় আরও আলোচনা হয়, ভবিষ্যতে প্রকল্পের সংশোধিত মেয়াদে প্রাইস কনটিনজেন্সি ও ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সি খাতের অর্থ ব্যয়ের জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকবে না বিধায় এ খাতসমূহে ন্যূনতম বরাদ্দ রাখা, যে খাতে বরাদ্দ বেশি প্রয়োজন হতে পারে। যেমন, পাম্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বরাদ্দ রাখার বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদা, বীরাঙ্গনা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধাদের বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার। সারাদেশের ৪৯৩টি উপজেলায় ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ১২২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর এই মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬০ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে প্রতিটি ৭৩২ বর্গফুট পরিমাণের একতলা বিশিষ্ট ৩০ হাজার ভবন (বীর নিবাস) নির্মাণ। প্রতিটি ভবনে দুটি কক্ষ, একটি টয়লেট, বারান্দা ও পাম্প রয়েছে। নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছেন জেলা প্রশাসক (মহানগর সংশ্লিষ্ট) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। রেট সিডিউল পরিবর্তনের কারণে নির্মাণকাজের ব্যয় প্রাক্কলন বৃদ্ধি এবং ভবনের আয়তন ও মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পটির সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন> প্রধানমন্ত্রীর চাবি হস্তান্তর/‘বীর নিবাস’ পেলেন ৫ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা

প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী এবং মহান স্বাধীনতা ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে এটি একটি অন্যতম।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, ২০২১ সালের মার্চ মাসে অনুমোদিত হলেও করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পটি শুরু করতে দেরি হয়। এর মধ্যে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় রেট সিডিউল পরিবর্তীত হয়ে ২০২২ সালে নতুন রেট সিডিউল কার্যকর হলে নতুন টেন্ডার আহ্বান করা হয়।

আরও পড়ুন> বিনামূল্যে ‘বীর নিবাস’ পেয়ে খুশি টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধারা!

প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত ২৪ হাজার ৭৫০টি ভবনের প্রশাসনিক আদেশ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৮৫টি ভবনের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নপূর্বক কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে পাঁচ হাজার ‘বীর নিবাস’ উদ্বোধন করা হয়েছে। এসব ভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার বসবাস করছে। বর্তমানে কাজ চলছে আরও ১০ হাজার ৭২৯টির।

এমওএস/এসএনআর/এমএস