পোস্তায় চামড়া আসছে কম, মিলছে ভালো দাম
প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ঈদুল আজহার নামাজ শেষে পশু কোরবানি করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। তবে কসাই সংকট ও নানা কারণে যারা ঈদের দিন পশু কোরবানি করতে পারেননি, তারা আজ কোরবানি করেছেন। কোরবানির পশুর চামড়া অনেকেই মাদরাসা ও এতিমখানায় দিয়ে দিয়েছেন। তবে কেউ কেউ আবার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে সেগুলো বিক্রি করেছেন। বিভিন্ন মহল্লা থেকে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করে সেগুলো আড়তে নিয়ে আসছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর লালবাগের পোস্তার আড়তগুলোতে এখন কোরবানির পশুর চামড়ার জমজমাট ব্যবসা।
শুক্রবার (৩০ জুন) রাজধাাবীর পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। মূলত ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে রাজধানীর লালবাগের পোস্তার আড়তগুলোতে কোরবানির পশুর চামড়া আসতে শুরু করে। এসব চামড়া দরদাম করে বেচাকেনা করছেন ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। চামড়ার মান ও আকারভেদে দামেও রয়েছে হেরফের। আজও পোস্তার আড়তগুলোতে কোরবানির পশুর চামড়া আসছে। তবে, সকালের তুলনায় দুপুরের দিকে বেশি চামড়া এসেছে। বিক্রিও গতকালের দামেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গতবছরের তুলনায় এবছর চামড়ার দাম বেড়েছে। তবে কয়েক বছর ধরেই পোস্তায় চামড়ার সরবরাহ কমছে বলে দাবি আড়তদারদের।
আরও পড়ুন: কাঁচা চামড়া কেনাবেচায় জমজমাট পোস্তার আড়ত, মানভেদে দামে হেরফের
পোস্তার আড়তদাররা জানান, রাজধানীর চামড়ার বাজার এখন কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এ কারণে কয়েক বছর ধরে পোস্তায় তুলনামূলক চামড়া কম আসছে। এখন সাভার, বেড়িবাঁধ ও আমিন বাজারেও চামড়া কিনছেন আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা চামড়া কেনা ও প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পোস্তা এলাকার আড়তদার মালিক ও শ্রমিকরা। ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চামড়া কিনেছেন তারা। এরপর রাত দেড়টা পর্যন্ত সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করেন।
আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর চামড়ার দাম বেশি। তবে লবণের বাড়তি দামে তাদের খরচ বেড়েছে। এছাড়া পোস্তায় কয়েক বছর ধরেই চামড়ার সরবরাহ কমে আসছে। ফলে এবারও অনেক আড়তদার চাহিদামতো চামড়া কিনতে পারেননি। কেউ কেউ জানান, তিন হাজার চামড়া কেনার টার্গেট ছিল তার, তবে কিনতে পেরেছেন দুই হাজার। কারও টার্গেট ছিল এক হাজার ৪০০, কিনতে পেরেছেন এক হাজার ২০০ পশুর চামড়া।
আরও পড়ুন: বৃষ্টি আর লবণ সংকটে চামড়া নষ্টের শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা
পোস্তা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এই এলাকার আড়তগুলো মান ও আকারভেদে বিভিন্ন দরে চামড়া কিনছে। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ১২শ টাকা দরে প্রতিটি চামড়া কিনছেন আড়তদাররা।
তবে শুধু আড়ত নয়, স্থানীয়ভাবে মাদরাসা ও এতিমখানা থেকেও তাদের সংগ্রহ করা চামড়া কিনছেন অনেক ট্যানারি মালিক। প্রতিনিধিদের মাধ্যমে লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করছেন তারা। সরাসরি ট্যানারিতে পৌঁছে দিলেও সেগুলো কিনছেন। এতে চামড়ার দামও মিলছে ভালো।
পোস্তা এলাকার যমুনা ট্রেডিংয়ের এক কর্মী জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল (ঈদের দিন) বিকেল থেকে এখন পর্যন্ত ২ হাজার চামড়া কিনেছি আমরা। আজ আরও কেনা হচ্ছে। তবে ৩ হাজারের বেশি চামড়া কিনবো না।
আরও পড়ুন: সংরক্ষণ ত্রুটিতে প্রতিবছর ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়
দিদার এন্টারপ্রাইজের মো. আনোয়ার জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল বিকেল থেকে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার চামড়া কিনেছি আমরা। এখনও কেনা চলছে।
অপর ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার চামড়া কিনেছি। আজ আরও কেনা হচ্ছে। তবে এবার কোরবানি বেশি হয়েছে, চামড়ার দামও ভালো। মান ও আকারভেদে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ১২শ টাকা দরে প্রতি পিস চামড়া কিনছি।
এক ট্যানারির মালিক হাজি মোহাম্মদ ফয়সাদ জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের দিন বিকেল থেকে আমি নিজে এবং আমার প্রতিনিধির মাধ্যমে পোস্তা, বেড়িবাঁধ এবং আমিনবাজার এলাকা থেকে প্রায় ১০ হাজার চামড়া কিনেছি। আমার টার্গেট ১৫ হাজারের মতো। দেখা যাক এবারের টার্গেট পূরণ হয় কি না।
আরও পড়ুন: সারাদেশে এক কোটি ৪১ হাজার পশু কোরবানি
তিনি বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া অনেক আছে। তবে, রাজধানীর ট্যানারির বাজার কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা চামড়ার বাজার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় পোস্তায় তুলনামূলক চামড়া আসা কমে গেছে।
হাজি মোহাম্মদ ফয়সাদ আরও বলেন, অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী এ বছর পোস্তায় চামড়া না এনে নিজ নিজ এলাকায় বিক্রি করছেন ও লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করছেন। আবার হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি সরিয়ে নেওয়ায় বেড়িবাঁধ, আমিনবাজার ও হেমায়েতপুর এলাকায় চামড়ার অনেক আড়ত তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে ঈদের দিন থেকেই ট্যানারির মালিকরা সরাসরি কাঁচা চামড়া কেনা শুরু করেছেন। এসব কারণে পোস্তায় চামড়ার কেনাবেচা ধীরে ধীরে কমছে।
এফএইচ/কেএসআর/এএসএম