ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

পাকিস্তানে এখন নির্বাচন হলে ইমরান খানের দলই জিতবে

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ১২:৪৩ পিএম, ২২ মে ২০২৩

আলতাফ পারভেজ। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বিষয়ক গবেষক। লিখছেন রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক নানা প্রসঙ্গ নিয়ে। পাকিস্তান পরিস্থিতি, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, ভারতের কর্নাটকের নির্বাচন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: আবারও রাজনৈতিক সংকটে পাকিস্তান। এবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে নানা নাটকীয়তা। আসলে পাকিস্তানের জনগণ কি পাকিস্তানের শাসন জানলো না?

আলতাফ পারভেজ: পাকিস্তানে যা ঘটছে, তার জন্য দেশটির সাধারণ মানুষকে দোষারোপ করা যায় না। পাকিস্তানে যা ঘটছে, তা এলিটদের সমস্যা, শাসকগোষ্ঠীর সমস্যা। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ খুব অল্প সময় পেয়েছিল তাদের প্রতিনিধি বাছাই করার। সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিরা খুব অল্প সময় দেশটি শাসন করার সুযোগ পেয়েছে।

আরও পড়ুন>> দু’একটি দল ভোটে অংশ না নিলে গণতন্ত্র বিলীন হয়ে যায় না 

বেসামরিক আমলাতন্ত্র, সামরিক আমলাতন্ত্র এবং আমলাতন্ত্রবহির্ভূত কুলীন সমাজ মিলে দেশটা শাসন করেছে গত সাত-আট দশক ধরে। সুতরাং, বর্তমান সংকট কুলীনদের সংকট, এই সংকট অভিজাত শ্রেণির মধ্যকার সংকট। এর জন্য সেখানকার সাধারণ মানুষকে আপনি দায়ী করতে পারেন না।

জাগো নিউজ: নিজেদের শাসনের জন্য তো সাধারণ মানুষের জাগ্রত হওয়ার কথা। মানুষ তার অধিকার নিয়ে সরব হওয়ার কথা।

আলতাফ পারভেজ: পাকিস্তানে নেতৃত্ব দিচ্ছে মুসলিম লীগ, পিপিপি, প্রধান ইসলামি দলগুলো। এরা প্রায় সবাই এলিট শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। এমনকি ইমরান খানের দলও। পাকিস্তানের ওয়ার্কিং শ্রেণির জনগোষ্ঠী যেমন বালুচ, পশতু কিংবা হাজরা বা শিয়াদের কখনো ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে জায়গা দেওয়া হয়নি।

এলিটদের এক অংশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় দেশ শাসন করেছে, আরেক অংশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। এখনো পাকিস্তানে তাই চলছে। পিপিপি মূলত ভুট্টোর আদর্শের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে আবর্ত হচ্ছে আর মুসলিম লীগ হচ্ছে শরীফ আদর্শকে কেন্দ্র করে। এর বাইরে অভিজাত কিছু মুসলিম নেতা আছেন যাদের ঘিরে ইসলামি দলগুলো আবর্ত হচ্ছে।

এসবের মধ্যে ইমরান খানকে জায়গা দেওয়া হবে কি হবে না বা হলে কীভাবে তা হবে এর জন্য এলিটদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত আমরা দেখতে পাচ্ছি। তবে ইমরান খানকে ঘিরে একটা আসন্ন চুক্তির প্রয়োজন পড়ছে পাকিস্তানের রাজনীতিতে। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রটি আসলে কীভাবে শাসিত হবে এজন্য জনগণের মধ্যে একটি চুক্তি দরকার।

আরও পড়ুন>> ‘মিয়ানমার বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যাপকভিত্তিক নীতি-কৌশল দরকার’ 

ইমরানকে কেন্দ্র করে যে চুক্তি হচ্ছে তা জনগণের পক্ষ থেকে কোনো চাপ নয়। এটি কুলীনদের মধ্য থেকে এক ধরনের বোঝাপড়া।

জাগো নিউজ: ইমরান খানের পক্ষে তার সমর্থকরা যেভাবে মাঠে নামলো, তাতে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফও প্রধানতম শক্তি হয়ে উঠছে?

আলতাফ পারভেজ: সেনাবাহিনী পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে এটি সবাই জানি। পিপিপি বা মুসলিম লীগকে যেভাবে সহায়তা করে ক্ষমতায় এনেছে আবার বিরোধিতা করে নামিয়েছে। ঠিক একই ঘটনা ইমরান খানের বেলায় ঘটেছে। ইমরান খানকে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় এনেছিল এবং সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই সেনাবাহিনীর সঙ্গেই সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার আগে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা কম ছিল। ইমরান খান ক্ষমতায় আসার আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার কিছুই পূরণ করতে পারেননি। এটি জনপ্রিয় রাজনীতির সংকট।

যেভাবে উত্থান সেভাবেই পতন ঘটলো এবং সেনাবাহিনী তার মতো করেই ভূমিকা রাখলো। কিন্তু এভাবে পতনের মধ্য দিয়ে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা আবারও বাড়তে শুরু করে। এই মুহূর্তে সুষ্ঠু ভোট হলে ইমরান খানের দল আবারও জিতবে। কিন্তু ইমরান খানের এমন কোনো কর্মসূচি নেই, যা ক্ষমতায় এসে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করতে পারবেন।

জাগো নিউজ: ইমরান খান নির্বাচনে অংশ নিলে সেনাবাহিনী কী ভূমিকা রাখতে পারে?

আলতাফ পারভেজ: এই প্রশ্নের উত্তর অনেকগুলো ‘যদি’র ওপর নির্ভর করছে। এখন নির্বাচন হলে ইমরান খানের দল ব্যাপকভাবে জিতবে। জনমত জরিপও তাই বলছে। প্রশ্ন হচ্ছে ভোট সুষ্ঠু হতে দেওয়া হবে কি না? যদি ভোট সুষ্ঠু হতে হয় তাহলে নির্বাচনের আগেই ইমরান খানকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বোঝাপড়ায় যেতে হবে। এখন যা চলছে, তা সেনাবাহিনীর সঙ্গে দরকষাকষির জন্য।

জাগো নিউজ: পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্থায়িত্ব হয়নি ঠিক, তবে মানুষ মাঠে নেমে আন্দোলন করে এবং সেটা বেসামরিক বা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধেও। মানুষের এই চেষ্টাকে গণজাগরণও বলা যায়?

আলতাফ পারভেজ: ইমরান খান ক্ষমতায় যাওয়ার আগেও এমন গণজোয়ার দেখেছি এবং ক্ষমতায় যাওয়ার পরেও এমন জোয়ার দেখেছি। এমন গণজোয়ার আসলে দলীয় কর্মীদের জোয়ার। এখানে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ আসলে কম। ইমরান খানের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে নেতাকর্মীরা জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর করলো। দেশ অচল করে দিতে সক্ষমও হয়তো। কিন্তু তাতে পাকিস্তানের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণে কিছু যায় আসে না। ইমরান খান যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও আমরা বালুচিস্তানে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে দেখেছি। এখনো দেখছি। আগেও হয়েছে।

এই গণজোয়ার আমরা দেখি সাধারণত এক সরকারকে পতনের সময় আর আরেক সরকারকে ক্ষমতায় আনার সময়। এই জোয়ার কোনো যৌক্তিক পরিণতি এনে দিতে পারছে না। সামরিক সরকার এসব জোয়ারে ইন্ধন দেয়। ইমরান খানের পক্ষে যে আন্দোলন চলছে, তার ফল ভোগ করতে হলে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসতে হবে।

৭০-৮০ বছর পর পাকিস্তান দেউলিয়া হওয়ার পথে। তাহলে এতদিনে কারা সুবিধা নিলো? কারা অর্থনৈতিক চাকায় ভর করে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করলো? এসব বিষয় নিয়ে মানুষের মাঝে হতাশা কাজ করে আর এমন জোয়ারে তাদের হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তবে পিটিআইয়ের আন্দোলনে সবাই অংশ নিয়ে ক্ষোভ-হতাশার প্রকাশ ঘটাচ্ছে ব্যাপারটি এমনও নয়।

জাগো নিউজ: ইমরান খানের আটক ও আটকের পরমুহূর্তে জামিনের ঘটনায় আদালত-সেনাবাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রমাণ মেলে কি না?

আলতাফ পারভেজ: ঘটনাদৃশ্যে মনে হচ্ছে সেনাবাহিনী যা চাইছে আদালত তা চাইছে না। উচ্চ আদালতের চাওয়া ভিন্ন দেখা যাচ্ছে। আদালত যে সিদ্ধান্ত দিচ্ছে তা ইমরান খানের পক্ষে যাচ্ছে। ইমরান খানের পক্ষে যাওয়া মানেই আদালতের বিপক্ষে যাওয়া। মুসলিম লীগ, পিপিপির চাওয়ার সঙ্গেও আদালতের চাওয়া মিলছে না। সরকার, আদালত, সেনাবাহিনী আর পিটিআই- এই চারটি শক্তির মধ্যে দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হচ্ছে। তবে সরকার সেনাবাহিনীর সঙ্গে রয়েছে। এই মুহূর্তে ইমরান খান সুবিধাজনক অবস্থানে আছে আদালতের কারণে।

জাগো নিউজ: পাকিস্তানের রাজনীতির চলমান পরিস্থিতিতে বাইরের কোনো শক্তি কাজ করবে কি না?

আলতাফ পারভেজ: পাকিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। পাকিস্তানের কাছে পারমাণবিক বোমা আছে। এসব কারণে পাকিস্তান খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র বলে বিবেচিত। কিন্তু বর্তমান সংকটের পেছনে বাইরের কোনো শক্তির ইন্ধন আছে, আমি তা মনে করি না। এই সংকট তাদের নিজস্ব এবং ধারাবাহিকভাবে হয়ে আসছে। পাকিস্তানের সংকট পাকিস্তানের মানুষকেই নিরসন করতে হবে। আমি এ-ও মনে করি না বিদেশি কোনো শক্তি চলমান সংকটের সমাধান করে দিতে পারবে।

জাগো নিউজ: পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কী? কী ঘটতে চলেছে সেখানকার রাজনীতিতে?

আলতাফ পারভেজ: আমার মনে হয় ইমরান খানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর একটা বোঝাপড়া ঘটবে। পাকিস্তানের কুলীনরা চাইবে না সব ভেঙে পড়ুক। এক প্রকারের ছাড়ের মধ্য দিয়ে দরকষাকষি হবে। সেনাবাহিনীকেও ছাড় দিতে হবে। ইমরান খানকে অল্প হলেও ছাড় দিতে হবে। তবে সেনাবাহিনীকে যে পরিমাণ ছাড় দিতে হবে এবার তা হয়তো পাকিস্তানের ইতিহাসে অভিনব।

এএসএস/এএসএ/জিকেএস