সাইবার জগতে মানুষের প্রবেশ বাড়ায় ঝুঁকিও বাড়ছে
সাইবার জগতে মানুষের প্রবেশ দিন দিন বাড়ছে, সামনে আরও বাড়বে। ফলে কোনো না কোনোভাবে সাইবার অপরাধের ঝুঁকিতে পড়ছে যে কেউ। এখান থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজন পারিবারিক সচেতনতা। একই সঙ্গে প্রয়োজন যেসব বিষয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই সে সব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা ও সমাজে সাইবার অপরাধ থেকে বাঁচার জন্য নানা পদক্ষেপ।
শনিবার (২০ মে) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা ২০২৩’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। সাইবার স্পেস ভুক্তভোগীদের দেওয়া মতামতের ভিত্তিতে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আইএসপিএবি মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঞা বলেন, ‘সবাই কোনো না কোনোভাবে সাইবার অপরাধের ঝুঁকিতে পড়ছে। সাইবার জগতে মানুষের প্রবেশ দিন দিন বাড়ছে, সামনে আরও বাড়বে। চীনে কোনো কিছুর অনুমতি দেন না যেটাতে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। আমাদেরকেও সেটা করা উচিত। নয়তো ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে। অপরাধ ঘটার আগে সেটা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু আমরা আমাদের দেশে দেখি অপরাধগুলো ঘটার পর সেটা বন্ধের প্রশিক্ষণ নেয়, ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস মহাপরিচালক ব্রি. জে. মো. নাসিম পারভেজ বলেন, করোনার আগে সাইবার জগতে মানুষের সম্পৃক্ততা যত ছিল করোনার সময় থেকে এখন পর্যন্ত দ্বিগুণ বেড়েছে। এর নানা কারণও রয়েছে। একজন ব্যক্তি কোনো একটি কাজ করতে গেলে সেটা যদি অফলাইনে করতে হয় তখন তাকে সরাসরি যেতে হয়। লোক খুঁজতে হয়। আবার সেটা হারিয়ে যায় কি না বা কোনো সমস্যা হয় কি না বা কাজটা যথাযথ হবে কি না সেটা ভাবতে হয়। আর অনলাইনে করলে সেটা করার জন্য তাকে আর কোথাও যেতে হয় না। আবার একটা ডকুমেন্টও সে রাখতে পারছে।
তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বও সাইবার জগতে নিজেদের শক্তিমত্তা দেখানোর চেষ্টা করছে। এমনকি সাইবার বিষয় নিয়ে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধও প্রভাবিত হয়েছে। তাই সাইবার জগতটা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন> সাইবার অপরাধ/সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অপপ্রচারের শিকার শিশুরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কেন যান না তাই একটি বড় প্রশ্ন। ধর্ষণের বিষয়েই যদি বলি নানা ধরনের প্রমাণ একজন নারীকে দিতে হয়। আলামত নষ্ট হয়ে গেলে সেটা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ১৮ বছরের নিচে বাচ্চাদের কাছেও এখন যেভাবে মোবাইল পৌঁছে গেছে তাদের অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তাই এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, নানা কারণে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। আমাদের সন্তানদের সঙ্গে মিশতে হবে। কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগাযোগ হচ্ছে। আবার যখনই শেষ হয়ে যায় আর যোগাযোগ নেই। এই বিচ্ছিন্নতার কারণে আত্মহত্যাও করে কেউ কেউ। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বেশ কয়েকজন আত্মহত্যা করেছে। অথচ তাদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ ছিল। কিন্তু তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলেই আত্মহত্যা করেছে। সচেতনতার প্রধানই হলো পরিবার।
সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতাবিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, নিজেদের তৈরি নয় আমরা অজানা জায়গা থেকে আসা প্রযুক্তি ব্যবহার করি। তা ছাড়া সাইবার দুনিয়াটা পুরোটাই ধোঁয়াশায় পূর্ণ। এর মধ্যে এসেছে চ্যাটজিপির বিষয়টি।
নাহিয়ান রেজা সাবরিয়েত বলেন, গবেষণার মাধ্যমেই সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার হয়। সংখ্যাভিত্তিক গবেষণা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমাদৃত। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের এলাকা, পেশা, অবস্থান ইত্যাদি বিষয় প্রকাশের পরামর্শ দেন তিনি। একইসঙ্গে তাদের স্টোরিগুলো তুলে আনার আহ্বান জানিয়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে শিশু ও তরুণদের হারটা মোটেই নেগলিজেবল নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেছেন, মাল্টিস্টেক কমিউনিটি অ্যাপ্রোচে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
এর আগে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গত পাঁচ বছরে তুলনামূলকভাবে কমেছে সাইবার বুলিং। ২০২২ সালে ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। তবে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতে অভিযোগের হার দিন দিন কমছে। ২০১৮ থেকে পাঁচটি জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী অভিযোগকারীর শতকরা হার ছিল ৬১ শতাংশ, ২০২৩ এ গিয়ে তা কমে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে। এদিকে, ২০২৩ সালের জরিপে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে, যা ২০১৮ সালের জরিপের তুলনায় ১৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অপপ্রচারের শিকার হয় শিশুরা। বয়সভিত্তিক অপরাধের ধরনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে তরুণরা একই ধরনের অপরাধের শিকার।
আরএসএম/এসএনআর/এমএস