শেখ হাসিনা বিশ্ব ব্যাংকে এলেন, দেখলেন, জয় করলেন
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির বিশ্ব ব্যাংক সদরদপ্তরে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালকদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাইরের চাপে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করেছিল। বাংলাদেশ তার নিজেদের অর্থায়নে একটি নির্মাণ করে অর্থনৈতিক সক্ষমতা পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যে ২.২৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা চুক্তি সই হয়েছে।
সোমবার (১ মে) ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংক সদর দপ্তরে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাসের উপস্থিতিতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
আঞ্চলিক বাণিজ্য ও কানেকটিভিটি, দুযোর্গ প্রস্তুতি এবং পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাংলাদেশকে ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে বিশ্ব ব্যাংক। এ লক্ষ্যে ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে দাঁড়িয়ে সংস্থাটির প্রেসিডেন্টের হাতে পদ্মা সেতুর বাঁধাই করা বড় একটি চিত্রকর্ম তুলে দিয়ে এ যেন এক মধুর প্রতিশোধ নিলেন শেখ হাসিনা।
সোমবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনার মাধ্যমে স্বাগত জানায় বিশ্ব ব্যাংক কর্মকর্তারা। সেখানে তিনি বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ কার্যক্রমের আলোকচিত্র উদ্বোধন করেন।
বিশ্ব ব্যাংক নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রধানমন্ত্রীর সামনে প্রদর্শন করা হয় বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বাঙালির চিরায়ত খাবার পরিবেশনাও।
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিশ্বব্যাংকের অংশীদারত্বের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫ বিলিয়ন ডলারের ৫৩টি বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে বিশ্বব্যাংকের। এটি এখন পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংকের দেওয়া ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান এবং ঋণের অংশ।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কখনো ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি বা তথাকথিত ‘ঋণের ফাঁদে’ পড়েনি। নিজস্ব অর্থায়ন ও প্রযুক্তি সম্পদ দিয়ে ৬ দশমিক ১ কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার লক্ষণ বলে অভিহিত করেন শেখ হাসিনা।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা অব্যহত রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞান-ভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বিশ্বব্যাংকসহ আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের আমাদের ডিজিটাল এবং ভৌত অবকাঠামোতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিশ্বব্যাংক ১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গার জন্য অনুদান সহায়তা বাড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলেও আশা করেন করেন তিনি। রোহিঙ্গাদের কথা ভুলে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলেন, বিশ্ব যেন এই অসহায় মানুষগুলোকে ভুলে না যায়।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জিডিপির সঙ্গে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বিশ্ব ব্যাংক সদর দপ্তরের ভেতরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তখন বাইরে চলছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জয় বাংলা সমাবেশ এবং বিএনপি এবং তার অঙ্গ সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ।
প্রধানমন্ত্রীর দিনের কর্মসূচি শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান। এ সময় তিনি কোন কোন খাতে ঋণ সহায়তাটি ব্যয় করা হবে তার বর্ণনা করেন।
৫টি প্রকল্প হলো-
১. ‘অ্যাকসিলারেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া প্রোগ্রাম পেইজ-১’ এর আওতায় পরিবহন এবং ট্রেন কানেকটিভিটি বাড়াতে ৭৫৩ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প। এটি আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং কানেকটিভিটি বাড়াতে সাহায্য করবে।
২. ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ‘রেজিলিয়েন্স ইনফ্রাসট্রাকচার বিল্ডিং প্রকল্প’। এটি ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নে প্রথম বড় বিনিয়োগ প্রকল্প। এটি অভ্যন্তরীণ বন্যার বিরুদ্ধে দুযোর্গ মোকাবিলায় প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে।
৩. তৃতীয়টি হলো ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রথম বাংলাদেশ সবুজ এবং জলবায়ু সহিষ্ণু উন্নয়ন প্রকল্প। এটি দেশকে সবুজ এবং জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নে সহায়তা করবে।
৪. চতুর্থটি হলো ২৫০ মিলিয়ন ডলারের সাসটেইনেবল মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট ট্র্যান্সফরমেশন (স্মার্ট) প্রকল্প। এটি ক্ষুদ্র শিল্প সেক্টরকে আরও গতিশীল, কম দূষণকারী, দক্ষ এবং জলবায়ু সহনশীল প্রবৃদ্ধির খাতে রূপান্তর করতে সাহায্য করবে।
৫. পঞ্চমটি হলো ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবলিটি অ্যান্ড ট্র্যান্সফরমেশন প্রকল্প। এ প্রকল্প পরিবেশ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে এবং সবুজ বিনিয়োগে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে সহায়তা করবে।
জাপানে দ্বিপক্ষীয় সফর শেষে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ-বিশ্ব ব্যাংক অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদান উপলক্ষ্যে ওয়াশিংটন সফরে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের আমন্ত্রণে তার সিংহাসনে আরোহন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটন থেকে লন্ডন যাবেন। সেখান থেকে ঢাকা ফিরবেন।
এমআরএম/জিকেএস