ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বাংলাদেশ কখনো ঋণের ফাঁদে পড়েনি, খেলাপিও হয়নি: প্রধানমন্ত্রী

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০:৪৬ পিএম, ০১ মে ২০২৩

বাংলাদেশ কখনো ঋণের ফাঁদেও পড়েনি। ঋণ পরিশোধে কখনো খেলাপিও হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করার লক্ষ্যে ডিজিটাল ও ভৌত অবকাঠামোতে বিশ্বব্যাংকসহ বৈশ্বিক উন্নয়ন সহযোগীদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

সোমবার (১ মে) ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদরদপ্তরে শিহাতা সম্মেলনকক্ষে নির্বাহী পরিচালক পর্ষদের সঙ্গে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব উপলক্ষে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুযোগ এবং খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশ কখনোই ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি বা তথাকথিত ঋণের ফাঁদে পড়েনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আরও বেশি অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে চায়। আমরা এখন আমাদের অংশীদারত্বের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই। বিশ্বব্যাংককে অবশ্যই দারিদ্র্য বিমোচন এবং উন্নয়ন অর্থায়নের মূল লক্ষ্যের বিষয়ে মনোযোগী থাকতে হবে।

আরও পড়ুন>> স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক, আশা প্রধানমন্ত্রীর

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক সক্রিয়ভাবে আমাদের ডিজিটাল রূপান্তরে সম্পৃক্ত রয়েছে। বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে আমাদের জনগণের কাছে তার কথা রেখেছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার জন্য আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক, আশা প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের মতো উন্নয়ন সহযোগীদের বাংলাদেশের ডিজিটাল ও ভৌত অবকাঠামোতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা বাণিজ্য বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ উৎপাদনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংক এখন বাংলাদেশে দেড় হাজার কোটি ডলার ব্যয়সাপেক্ষ ৫৩টি বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ অর্থ এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তিন হাজার ৯০০ কোটি ডলারের অনুদান ও ঋণের অংশ।

তিনি বলেন, মানব পুঁজি গঠনে আমাদের কর্মক্ষমতা অবকাঠামো মেগাপ্রকল্পে বিনিয়োগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশের নিজস্ব আর্থিক ও কারিগরি সংস্থান দিয়ে ৬.১ কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ আমাদের অর্থনৈতিক পরিপক্বতার লক্ষণ। বাংলাদেশ খাদ্যনিরাপত্তা, বিনামূল্যে ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, বিদ্যুৎ সুবিধা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।

সরকাপ্রধান বলেন, আমরা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, শিশুকল্যাণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, নগর উন্নয়ন, টেকসই শিল্পায়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের সুযোগ দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংককে অর্থায়ন বাড়াতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী পরে বিশ্বব্যাংকের ইস্ট ডাইনিং রুমে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট, এমডি ও ভিআইপিদের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পর মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন। পরে শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের প্রেস্টন অডিটরিয়ামে ‘বিশ্বব্যাংক-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের ৫০ বছর বিষয়ে প্রতিফলন’ শীর্ষক বক্তৃতা দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের সঙ্গে যৌথভাবে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এবং প্রদর্শনীর কিছু অংশ ঘুরে দেখেন।

বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পরমেশ্বরন আইয়ার, পরিচালক জুনাইদ আহমেদ কামাল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনা বিয়েরদে, বিকল্প নির্বাহী পরিচালক আহমেদ কায়কাউস ও অন্য পরিচালকরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা ও জ্ঞান তৈরিতে বিশ্বব্যাংককে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। এটি উৎসাহজনক যে বিশ্বব্যাংক জলবায়ু অর্থায়নের ওপর জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশের মতো একটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য প্রশমন ও অভিযোজন উভয়ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত অর্থায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে তার নিজস্ব জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল থেকে ৮০০টি প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মূল খাতগুলোতে আমাদের সবুজ পরিবর্তনকে দ্রুত এগিয়ে নিতে আমরা একটি মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা চালু করছি। শুধু অভিযোজনের জন্য ২০৫০ সালের মধ্যে আমাদের ২৩০ বিলিয়ন ডলার লাগবে। জুন মাসে প্যারিসে জলবায়ু অর্থায়ন শীর্ষ সম্মেলনকালে বিশ্বব্যাংক এ বিষয়ে আমাদের ফলপ্রসূ আশ্বাস দেওয়ার একটি সুযোগ পাবে।

বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরদের সঙ্গে এ বৈঠকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চলতি বছর ভূ-অর্থনীতিতে কিছু বড় পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করছি। উত্তরণকালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এগুলোর প্রভাব রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বব্যাংকও ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে।’

সরকারপ্রধান আরও বলেন, ২০২২ সালে আমাদের দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে, চরম দারিদ্র্যের হার দ্রুত হ্রাস পেয়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারি, ইউরোপে যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এসব সাফল্য এসেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো সহিষ্ণুতা। আমরা গণহত্যার পর আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং ১৯৭১ সালে ধ্বংসের মুখে থাকা একটি অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। বাংলাদেশ বারবার সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল, চরমপন্থি হুমকি এবং মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। গত দেড় দশকে জাতি অবশেষে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য বিশ্বব্যাংক অনুদান সহায়তা বাড়িয়েছে। তাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ দেখিয়েছে যে, তারা প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারে। আমি আস্থাশীল যে আমাদের তরুণ প্রজন্ম সঠিক রাজনৈতিক পরিবেশে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা দেশের দায়িত্বশীল ও অবদানকারী সদস্য হিসেবে আমাদের ভূমিকা আরও প্রসারিত করতে চাই।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এ বৈদেশিক নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কূটনীতি অব্যাহত রয়েছে। আমি আশা করি, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অংশীদারেরা আমাদের অগ্রযাত্রার ইতিবাচক দিনগুলোর বিষয়ে দৃষ্টি দেবে এবং ভবিষ্যতে একটি প্রতিশ্রুতিশীল উন্নয়নযাত্রায় আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে।

এএএইচ