ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

শেষ বিকেলে ঢাকায় নামলো রাতের অন্ধকার!

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল | প্রকাশিত: ০৬:০২ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২৩

ঢাকার আকাশে সকাল থেকেই ঝলমলে রোদ ছিল। বেলা গড়াতেই বাড়তে থাকে তাপমাত্রার পারদ। গরমে হাঁসফাঁস হয়ে ওঠে জনজীবন। বিকেলে হঠাৎ আকাশে মেঘের আনগোনা। সাড়ে ৪টার দিকে আকাশ অনেকটাই মেঘে ঢেকে যায়। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় শেষ বিকেলেই রাতের অন্ধকার নেমে আসে রাজধানীতে। এতে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে বাধ্য হয়েছেন চালকরা।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। ক্রমে বাড়ে ঝড়ের তাণ্ডব। এতে ঢাকার সড়কে ধুলিঝড়ের সৃষ্টি হয়। প্রথমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নামে। ধীরে ধীরে বাড়ে বৃষ্টির গতিও। এ সময় ঢাকার অনেক এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে ছিল বজ্রপাতও।

শেষ বিকেলে সন্ধ্যা নামা ভিন্ন এক ঢাকায় দেখা যায় নানান বিচিত্র্য দৃশ্য। ঝড়-বৃষ্টি শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে শাহবাগে চার রাস্তার মোড়ের সিগন্যালে রাস্তা পারাপারের অপেক্ষায় ছিলেন কয়েকজন পথচারী। সূর্যাস্তের তখনও সোয়া এক ঘণ্টা বাকি। অথচ আকাশ এতটাই মেঘাচ্ছন্ন যেন সন্ধ্যা নেমেছে!

শেষ বিকেলে ঢাকায় নামলো রাতের অন্ধকার!

অন্ধকারাচ্ছন্ন এমন বিকেলে হঠাৎ বইতে শুরু করে ঝড়ো হাওয়া। প্রচণ্ড বাতাসে রাস্তার ধুলাবালি ও পরিত্যাক্ত কাগজ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ঝরে পড়ে গাছের পাতা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝড়ের সঙ্গে নামে মুষলধারে বৃষ্টি।

পথচারীদের সঙ্গে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দৌড় দেন ট্র্যাফিক পুলিশ সদস্যরাও। কয়েকজন আশ্রয় নেন শাহবাগ থানার মধ্যে। কয়েকজন কনস্টেবল ঝড়ে গাছ থেকে পড়া আম কুড়াচ্ছিলেন। অন্ধকার ও ঝড়-বৃষ্টিতে দুজন প্রাইভেটকারের চালক দ্রুত গাড়ি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন।

এদিকে, হঠাৎ বৃষ্টিতে অফিস থেকে ফেরার পথে ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে অনেককে ছোটাছুটি করতেও দেখা যায়। দৌড়ে অনেকে আশ্রয় নেন যাত্রী ছাউনিতে। কাকভেজা হয়ে গণপরিবহনে ওঠেন অনেকে।

কয়েকদিন বৃষ্টিহীন থাকায় ঢাকার তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং খুলনা বিভাগসহ রাজশাহী, পাবনা, পটুয়াখালী ও ভোলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। ঝড়-বৃষ্টির কারণে গরম অনেকটাই কমে স্বস্তি ফিরেছে ঢাকায়। বুধবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শেষ বিকেলে ঢাকায় নামলো রাতের অন্ধকার!

ঝড়ো হাওয়ায় রিকশাচালকের হাত থেকে উড়ে যায় নীল পর্দা। তা ধরতে সড়কে দৌড়াতে দেখা যায় চালককে। ফুটপাতের চায়ের দোকানিকে তড়িঘড়ি দোকানের ঝাপ ফেলতে দেখা যায়। সবমিলিয়ে গাঢ় কালো মেঘ, ঝড়-বৃষ্টিতে শেষ বিকেলে রাতের অন্ধকার নামে।

রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা ইয়াসিন আলী। ঝড়ের সময় তিনি শাহবাগ থেকে পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন। বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ফটক থেকে শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছাতেই প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়েন। দৌড়ে কোনোভাবে থানার বারান্দায় আশ্রয়।

রিকশাচালক রহিম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, হঠাৎ প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাসে আমার রিকশাটা উল্টে যাচ্ছিল। কোনোভাবে রিকশা সামলালেও হ্যান্ডেলের সঙ্গে আঘাত লেগে হাতে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি।

বৃহস্পতিবার রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন‌্য পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এছাড়া দেশের অন্যত্র পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এএএইচ/জেআইএম