ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিটের জন্য দীর্ঘ সারি, সবাই পাচ্ছেন না
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবারের ট্রেনযোগে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে সোমবার (১৭ এপ্রিল)। ওইদিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাজশাহী অভিমুখী ধূমকেতু এক্সপ্রেসের মাধ্যমে ঈদযাত্রা শুরু হয়। আজ বুধবার (১৯ এপ্রিল) চলছে ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন। এরই মধ্যে ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর ঈদযাত্রা ও ঈদের ফিরতি যাত্রার শতভাগ টিকিট অনলাইন মাধ্যমে সংগ্রহ করেন যাত্রীরা।
অপরদিকে, যারা অনলাইন মাধ্যমে টিকিট কাটতে পারেননি তাদের জন্য যাত্রার দুই ঘণ্টা আগে দাঁড়িয়ে যাওয়ার (স্ট্যান্ডিং টিকিট) টিকিটের ব্যবস্থা রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। স্ট্যান্ডিং টিকিট পেতে বুধবার ভোর থেকেই বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রীরা কাউন্টারগুলোর সামনে ভিড় করেছেন। তবে, শতকরা ২৫ শতাংশ টিকিটের বেশি বিক্রি করা হচ্ছে না। এতে অনেকেই টিকিট কাটতে না পেরে স্টেশন ত্যাগ করছেন।
আরও পড়ুন>> যাত্রার দিন কাউন্টারে মিলবে ট্রেনের স্ট্যান্ডিং টিকিট
কমলাপুর রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এবার আন্তঃনগর ট্রেনে ৩০ হাজার যাত্রী যাত্রা করবেন। যাদের প্রত্যেকে টিকিট সংগ্রহ করেছেন এরই মধ্যে। যারা টিকিট পায়নি তাদের জন্য শতকরা ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে, ২৫ শতাংশ টিকিট বিক্রির কথা থাকলেও যাত্রীর চাপ রয়েছে প্রচুর। এতে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাচ্ছেন অনেকেই।
কাউন্টারগুলোর সামনে দেখা যায়, ২৫ শতাংশ টিকিট শেষ হওয়ার পরপরই বাকিদের লাইন থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। পরে অন্য ট্রেনের জন্য আবারও টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন>> স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনতে ভোর থেকে কমলাপুরে যাত্রীদের ভিড়
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের ২৫ শতাংশের বেশি স্ট্যান্ডিং টিকিটের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে টিকিটপ্রত্যাশী বেশি হলেও বাকিরা টিকিট পাবেন না এটাই স্বাভাবিক।
সরেজমিনে কথা হয় স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য সেহরির পরপরই স্টেশনে আসা তিস্তা এক্সপ্রেসের যাত্রী তাবাসসুমের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, অনলাইনে টিকিটের জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। তাই স্টেশনে স্বামীসহ স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য এসেছি। কিন্তু টিকিট ২৫ শতাংশ বিক্রি শেষ হয়ে যাওয়া খালিহাতেই ফিরতে হচ্ছে। এখন বেশি ভাড়া দিয়ে বাসযোগে গ্রামে যেতে হবে।
আরও পড়ুন>> ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনেও দেরিতে ছাড়ছে ট্রেন
হাসনাইন নামে অপর একজন যাত্রী বরেন, দাঁড়িয়ে আছি স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য। অনেকেই টিকিট পাননি, জানি না আমি পাবো কি না। ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে এসেছি, টিকিট না পেলে অন্যদের মতো আমাকেও বিকল্প পথে (বাস) গ্রামে ফিরতে হবে।
টিকিট পেয়েছেন ঈশ্বরদীর আবু আহমেদ। তিনি বলেন, সড়কপথে দীর্ঘ যানজট থাকে এ কারণে স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য এসেছিলাম। ভাগ্য সহায় ছিল, দীর্ঘ অপেক্ষার পর একটা টিকিট পেয়েছি।
কমলাপুর স্টেশনে টিকিট ছাড়া কেউ প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন না। টিকিট না থাকলে তাকে দাঁড়ানো টিকিট কেটে স্টেশনে প্রবেশ অনুমতি নিতে হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ঈদযাত্রায় উত্তরাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা সাতটি ট্রেন রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে থামছে না। ট্রেনগুলো সরাসরি কমলাপুর স্টেশনে চলে যাবে। ঈদযাত্রায় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঠেকাতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঈদযাত্রা শুরুর দিন অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঢাকাগামী একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান, পঞ্চগড়, নীলসাগর, কুড়িগ্রাম, লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেস ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে না।
আরও পড়ুন>> স্টেশনে মিলছে ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট
এছাড়া ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস ১৮ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত এবং মৈত্রী এক্সপ্রেস ২০ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে, আন্তঃদেশীয় বন্ধন এক্সপ্রেস যথারীতি চলাচল করবে। এবার ঈদযাত্রায় আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয় গত ৭ এপ্রিল। ওইদিন বিক্রি হয় ১৭ এপ্রিলের টিকিট। এরপর ৮ এপ্রিল ১৮ এপ্রিলের, ৯ এপ্রিল ১৯ এপ্রিলের, ১০ এপ্রিল ২০ এপ্রিলের এবং ১১ এপ্রিল বিক্রি হয় ২১ এপ্রিলের টিকিট।
একইভাবে ঈদের ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে ১৫ এপ্রিল থেকে। ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথমদিন বিক্রি হয়েছে ২৫ এপ্রিলের টিকিট। ১৬ এপ্রিল বিক্রি হয়েছে ২৬ এপ্রিলের, ১৭ এপ্রিল ২৭ এপ্রিলের, ১৮ এপ্রিল ২৮ এপ্রিলের, ১৯ এপ্রিল হচ্ছে ২৯ এপ্রিলের এবং ২০ এপ্রিল বিক্রি করা হবে ৩০ এপ্রিলের টিকিট। প্রতিদিন আন্তঃনগর ট্রেনে টিকিট ও দাঁড়ানো টিকিট মিলে প্রায় ৪৫ হাজার যাত্রী ঢাকা ছাড়ছেন।
ইএআর/এমএএইচ/এমএস