ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যের নেতৃতে র‌্যাব-ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:০০ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২৩

রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে ডাকাত চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পলিশ। গ্রেফতাররা নিজেদের ডিবি ও র‌্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করতেন। মাইক্রোবাসযোগে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তাদের গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগ।

গ্রেফতাররা হলেন- ডাকাত দলের নেতা মো. জালাল উদ্দিন ওরফে ক্যাপ্টেন জালাল, সেকেন্ড ইন কমান্ড মো. বাদল হোসেন শেখ ওরফে বাদল মাঝি, সাঈদ মনির আল মাহমুদ, মো. খোকন, শাহদাত হোসেন, মো. বাবুল ও মো. মহিদুল ইসলাম শেখ।

এসময় তাদের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তল, র‌্যাবের ৭টি জ্যাকেট, ডিবির একটি জ্যাকেট, হাতকড়া এক জোড়া, ওয়াকিটকি দুইটি, ব্যাটন দুইটি, পুলিশ লেখা ব্যাগ একটি, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস একটি, ৯টি মোবাইল ফোন ও নগদ ২ হাজার ৪০০ টাকা জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, গ্রেফতার ডাকাত দলের নেতা জালাল উদ্দিন নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন জালাল হিসেবে পরিচয় দেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য। মতিঝিলের ব্যাংক পাড়া থেকে মোটা অংকের টাকা তুললে তাকে টার্গেট করে ডাকাতি করতেন এই ডাকাত দলের সদস্যরা।

রোববার (১৬ এপ্রিল) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

jagonews24

তিনি বলেন, শনিবার রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিম। গ্রেফতাররা প্রথমে মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্কেট ইত্যাদিতে খোঁজ নিয়ে অধিক পরিমাণ নগদ অর্থ বহনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করতেন। পরে ডাকাত দলের সদস্যরা টার্গেট ব্যক্তির অবস্থান, বাসস্থান এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্র সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতেন। এরপর তারা টার্গেট ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য স্থান নির্ধারণ করে কয়েকবার মহড়া দিতেন।

এই ডাকাত দল সাধারণত চিটাগাং রোড থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত মহাসড়কে ডাকাতি করতো। ডাকাত দল তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে ৩টি গ্রুপে ভাগ হয়। নির্ধারিত দিনের একদিন আগেই দলের সব সদস্য তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিতেন। এই সময় দলনেতা জালাল উদ্দিন ওরফে ক্যাপ্টেন জালাল গ্রুপের সবাইকে নতুন সিমসহ একটি করে বাটন মোবাইল ফোন দিতেন এবং ডাকাতি শেষ হলে তা ফেরত নিয়ে নেন।

ডাকাতির কৌশল সম্পর্কে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, প্রথম গ্রুপের সদস্যরা টার্গেট ব্যক্তিকে নির্ধারিত দিনের একদিন আগে থেকে অনুসরণ করতেন। দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যরা একটি গাড়িসহ একদিন আগেই ডাকাতির জন্য নির্ধারিত স্থানের কাছে একটি ভালো মানের হোটেলে ডিবি বা র‌্যাব পরিচয় দিয়ে অবস্থান করতেন।

এই দলে র‌্যাবের পোশাক, ওয়াকিটকি, হাতকড়া, খেলনা পিস্তলসহ আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি থাকতো। প্রথম গ্রুপ সিগনাল দিলে দ্বিতীয় গ্রুপ টার্গেট ব্যক্তিকে আটক করে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তাকে নির্জন কোনো স্থানে ফেলে দিতো।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী প্রচণ্ড শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তৃতীয় গ্রুপের সদস্যরা ডাকাতির জন্য নির্ধারিত স্থানের দূরবর্তী অন্য একটি স্থানে একটি হোটেলে অবস্থান করতো। এই দলের কাজ হলো দ্বিতীয় গ্রুপ মিস করলে ডাকাতির কাজটা শেষ করা।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য সম্পর্কে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ডাকাত দলের নেতা জালাল উদ্দিন নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন জালাল হিসেবে পরিচয় দেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য। ডাকাতরা আগের দুটি ডাকাতির কথা স্বীকার করেছেন। একটি নারায়ণগঞ্জের মোগড়াপাড়া থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা ডাকাতি, দ্বিতীয়টি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মহাসড়ক থেকে ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ডাকাতি।

ডাকাত দলের নেতা গ্রেফতার মো. জালাল উদ্দিন ওরফে ক্যাপ্টেন জালালের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৪টি। গ্রেফতার সেকেন্ড ইন কমান্ড মো. বাদল হোসেন শেখ ওরফে বাদল মাঝির বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ১১টি। এছাড়া গ্রেফতার সাঈদ মনির আল মাহমুদের বিরুদ্ধে ৫টি এবং গ্রেফতার মো. খোকনের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা রয়েছে।

টিটি/কেএসআর/জিকেএস