ইন্টারপোলের রেড নোটিশে ৬২ বাংলাদেশি, দ্রুতই যুক্ত হবেন আরাভ
আন্তর্জাতিকভাবে পুলিশকে সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। এ সংস্থার ওয়েবসাইটে ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছে ৬২ বাংলাদেশির নাম। জঙ্গি, সন্ত্রাসী, খুনি, সাইবার ক্রাইম, মাদক চোরাকারবারি, ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম, মানবপাচারে অভিযুক্ত তারা। তালিকায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা। রয়েছে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর নামও।
বাংলাদেশ পুলিশের চাওয়া সহযোগিতার কারণে এসব বাংলাদেশির নাম ও ছবি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। তালিকায় থাকা এসব ব্যক্তির বর্তমান অবস্থান জানার চেষ্টা করছে ইন্টারপোল। এরপর তাদের স্থানীয় আইনে গ্রেফতার করে আইনি প্রক্রিয়ায় দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
কয়েকদিন দেশে ইন্টারপোল প্রসঙ্গ নিয়ে বেশ চর্চা চলছে। দুবাইয়ে পালিয়ে থাকা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে ঘিরে এ চর্চা।
সম্প্রতি পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে হৃদয়ের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। তার নামে রেড নোটিশ জারি হলে ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড তালিকায় উঠবে বাংলাদেশের ৬৩ অপরাধীর নাম।
আরও পড়ুন>> হঠাৎ ফাঁকা আরাভ জুয়েলার্স, কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ-ভারত-দুবাই
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশ সদরদপ্তর থেকে ইন্টারপোলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা আমাদের চিঠি গ্রহণ করে ফিরতি মেইলও করেছে। ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে নতুন করে অপরাধীর ছবি ও তথ্য আপডেট হতে তিন থেকে চারদিন সময় লাগে। আশা করছি, শিগগির আরাভ খানের ছবিসহ ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড পারসন ক্যাটাগরিতে দেখা যাবে।
আরও পড়ুন>> আট নামে ৫ দেশের নাগরিক, যে কোনো সময় রেড অ্যালার্ট
পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, ইন্টারপোলের মাধ্যমে কয়েক ধাপে চিঠি চালাচালি করে বিদেশে আত্মগোপন করা সন্ত্রাসীদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এটা নিশ্চিত হতে হতেই আটককৃত অপরাধী ওই দেশের আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে অধরা থেকে যায়। ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টি ওরফে জিসান দুবাইয়ে আটক হওয়ার পরও তাকে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। এক সপ্তাহের মাথায় জিসান মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পাওয়ার পর লন্ডনে চলে যান।
কোন অপরাধী কোন দেশে অবস্থান করছেন- সেটা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে ইন্টারপোল। ইন্টারপোলকে সহয়তা করে পুলিশ সদরদপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) নামে একটি শাখা। এ শাখাটি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইন্টারপোলের তালিকায় থাকা অপরাধীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানে কাজ করে থাকে।
আরও পড়ুন>> ভুয়া পরিচয়ে মেহেরপুরে বিয়ে, মামাশ্বশুরের বাইক নিয়ে পালান আরাভ
এনসিবি সূত্রে জানা গেছে, অপরাধীর অবস্থান নিশ্চিত হতে পারলে অনেক সময় ধরা যায়। তবে অনেক সময় দেখা যায়, অবস্থান নিশ্চিত হতে হতেই অপরাধীরা অবস্থান বদলে ফেলে। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট দেশের আইনের ফাঁক গলিয়ে অধরা থেকে যায়। ইন্টারপোলের কিছু নিয়ম আছে, সেগুলো মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়। ইন্টারপোলের এ লাল নোটিশে অপরাধীদের বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতি পাঁচ বছর পরপর তথ্য হালনাগাদ করা হয়।
আরও পড়ুন: আরাভ খানের গ্রেফতার তথ্যে ধোঁয়াশা, দুবাইয়ে সোনার দোকান বন্ধ
ইন্টারপোলের ‘ওয়ান্টেড পারসন্স’ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ঝুলছে বাংলাদেশের পলাতক ৬২ শীর্ষ অপরাধীর নাম ও ছবি। এ তালিকায় রয়েছেন যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্তরা।
মাঝে-মধ্যে দু-একজন ভারত, দুবাই ও নেপালে আটক হওয়ার তথ্য পুলিশ সদরদপ্তরের এনসিবি শাখা পেয়েছে। তবে তাদের সবাইকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। ভারতে মোল্লা মাসুদ, শাহাদত, তানভীরুল ইসলাম জয়, নেপালে সুব্রত বাইন, দুবাইয়ে জিসান ও আতাউর ধরা পড়লেও ওই দেশের আইনের ফাঁক গলিয়ে তারা এখনও অধরা।
আরও পড়ুন>> ক্যামেরা চুরির মামলার আসামি আরাভ খান, করেছেন একাধিক বিয়ে
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদেশে আত্মগোপন করা সন্ত্রাসীরা একাধিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে ফেরারি থাকছে। বছর দশেক আগে নেপালে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন আটক হওয়ার পর তার কাছ থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়া যায়। ওই পাসপোর্টের ভিত্তিতে তাকে নেপালের কাঁকরভিটা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পুশব্যাক করা হয়।
আরও পড়ুন>> দুবাই পালানোর আগে আরাভ খান থাকতেন কলকাতার বস্তিতে!
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি মনজুর রহমান বলেন, পুলিশ বা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কোনো ইউনিট যদি মনে করে তার আসামি বিদেশে পালিয়ে আছে এবং ফিরিয়ে আনা জরুরি, তখন তার বিষয়ে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেওয়া হয়। অপরাধীদের অবস্থান ও গ্রেফতারের বিষয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে সেই দেশের পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়। অবস্থান নিশ্চিত জানা গেলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়।
ইন্টারপোলের লাল তালিকাভুক্ত ৬২ বাংলাদেশি
ইকবাল জাফর, তানজিরুল, স্বপন, মোল্লা নজরুল ইসলাম, মিয়া মিন্টো, খান মো. শহীদ উদ্দিন, ওয়াসিম, খোরশেদ আলম, গিয়াস উদ্দিন, অশোক কুমার দাস, মিয়া মিজান, চন্দন কুমার রায়, রাতুল আহমেদ বাবু, মো. মোস্তফা সিরাজ লালু, আব্দুল হারিস চৌধুরী, জাহিদ হোসেন খোকন, সৈয়দ মো. হোসাইন ওরফে হোসেন, সৈয়দ মো. হাসান আলী, রহমান আজিজুর, অজয় বিশ্বাস, তরিকুল ইসলাম, হানিফ, আব্দুল জব্বার, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ সবুজ ফোকিদ, মোহাম্মদ মনির ভুঁইয়া, শফিক-উল, আমান উল্লাহ শফিক, আবুল কালাম আজাদ, জাহিদুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন খান, মো. নাঈম খান ইকরাম, ফেরদৌস কালা জাহাঙ্গীর, মো. ইউসুফ, আব্দুল আলিম শরীফ, মজনু আহমেদ, নুরুল দিপু, মোহাম্মদ ফজলুল আমিন জাবেদ, এস এইচ এম বি নুর চৌধুরী, আব্দুর রশীদ খন্দকার, নাজমুল আনসার, শারফুল হোসেন আহমেদ, শরিফুল হক ডালিম, রউফ উদ্দিন, খান মোসলেমউদ্দিন, এ ম রাশেদ চৌধুরী, আতাউর রহমান মাহমুদ চৌধুরী, আলহাজ মাওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দীন মিয়া, মিন্টু সালাহউদ্দিন, গোলাম ফারুক অভি, শেখ হারুন, সুলতান সুজিদ, তৌফিকুল আলম, জাফর আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, আমিনুর রসুল, জিসান আহমেদ, সুব্রত বাইন ত্রিমতি, হোসাইন নবী, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, আব্দুল জব্বার ও খন্দকার তানভীর ইসলাম জয়।
আরও পড়ুন>> ফিরিয়ে আনা হবে আরাভ খানকে, কীভাবে দেশত্যাগ খতিয়ে দেখছে পুলিশ
ইন্টারপোলের ইতিহাস
ইন্টারপোল একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যার প্রধান কাজ আন্তর্জাতিক পুলিশকে সহায়তা করা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করে থাকে ইন্টারপোল। প্রথমে এর নাম ছিল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ কমিশন। পরবর্তীতে বর্তমান নামে পরিবর্তিত হয়। এটি জাতিসংঘের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থা। ইন্টারপোলের বর্তমান সদস্য দেশ ১৯৪টি।
ফ্রান্সের লিয়নে অবস্থিত ইন্টারপোল সদরদপ্তর থেকে পরিচালিত সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ‘রেড নোটিশ অব ওয়ান্টেড পারসন্স’ তালিকায় বিভিন্ন দেশের মোট সাত হাজার ১৮ জন অপরাধীর নাম, পরিচয়, ছবি ও জাতীয়তা তথা দেশের নাম উল্লেখ আছে। এ তালিকায় বাংলাদেশের ৬২ জন অপরাধীর নাম রয়েছে।
টিটি/এএএইচ