ভালোবাসায় জড়িয়ে বসন্ত এলো ধরণীতে
প্রকৃতিতে আজ কোকিল গান ধরেছে। হাওয়ায় লেগেছে ফাগুনের আগুন। মর্মে জেগেছে দোলা। প্রকৃতির এ অপরূপ আবাহন জানান দিচ্ছে, ঋতুচক্রে বছর ঘুরে আবার এসেছে বসন্ত। রাজধানী ঢাকার পথে পথে আজ হয়তো রক্তির পলাশের শোভা নেই। কোকিলের গান হয়তো হারিয়ে গেছে অজস্র যানবাহনের বিকট হর্নে। তাতে কী, বসন্ত যে আজ সত্যিই দুয়ারে দাঁড়িয়ে। শুধু তাই নয়, আজ ভালোবাসার দিনও। তাইতো বসন্ত আর ভালোবাসার মহামিলন মন্ত্রে মত্ত ফাল্গুনের প্রথম দিন।
বাংলা বর্ষপঞ্জিতে সংশোধনের ফলে ২০২০ সাল থেকে ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একই দিনে পড়ছে। পয়লা ফাল্গুন কিংবা বসন্ত যে নামেই ডাকা হোক না কেন, ভালোবাসার উষ্ণতা নিয়েই আজ বসন্ত এসেছে কোটি হৃদয়ের আঙিনায়।
ঋতুচক্রের পালাবদলে সবার শেষে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। শীতের রুক্ষতা ঝেড়ে নতুন রূপে আবির্ভূত হয় প্রকৃতি। গাছে গাছে ফোটে ফুল, উঁকি দেয় কচি সবুজ পাতা। পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিল কুহু কুহু সুর গান ধরে। প্রকৃতির পাশাপাশি মানবমনেও জাগে আনন্দের জোয়ার। প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাসন্তী রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়ে ভালোবাসা বিনিময়ে মাতোয়ারা হন প্রেমিক-প্রেমিকারা। পয়লা ফাল্গুনের সঙ্গে ভালোবাসা দিবস যোগ হওয়ায় এ দিনটি দোলা দিয়ে যায় সব বয়সী মানুষের প্রাণে।
বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে গত কদিন ধরেই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিশেষত ফুলের দোকানগুলোতে ছিল ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। রাজধানীজুড়ে শুরু হয় উৎসব আমেজ। শাহবাগ, টিএসসি, চন্দ্রিমা উদ্যান কিংবা ধানমন্ডি লেক, রমনা পার্কে বাসন্তী সাজে তরুণ-তরুণীরা এরই মধ্যে বসন্তের উচ্ছ্বাস আর আনন্দ উদযাপন শুরু করেছেন।
এদিকে বসন্তবরণ আর ভালবাসা দিবসে বর্ণিল রূপ ধারণ করেছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। ভার্চুয়াল দুনিয়াতেও লেগেছে বসন্ত আর ভালোবাসার ছোঁয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে চলছে বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়। রেস্টুরেন্ট, খাবারের দোকান ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো সেজেছে নিজস্ব ঢঙে। সেসব স্থানে পরিবার-পরিজন নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন নগরবাসী।
প্রায় তিন দশক আগে ১৪০১ বঙ্গাব্দে দেশে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপনের রীতি চালু হয়। তখন থেকেই প্রতিবছর জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ এ উৎসব আয়োজন করে আসছে। রাজধানীতে বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠানমালা আরও ব্যাপকতা লাভ করেছে। এর সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে যোগ হয়েছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।
শুধু তরুণ-তরুণী নয়, সব বয়সী মানুষের ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপ প্রকাশের দিন আজ। এ ভালোবাসা যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনই বন্ধুর প্রতি বন্ধুর কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকাদের। প্রায় তিন দশক ধরে এদেশে পশ্চিমা রীতির ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা ভালোবাসা দিবস বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশেই উদযাপন হচ্ছে।
ভালোবাসা দিবস উদযাপনের ইতিহাস নিয়ে প্রচলিত আছে একাধিক কাহিনি। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত গল্পটি সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকের ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের একটি ঘটনা নিয়ে।
দিনটিকে ঘিরে সারাদেশেই বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে চলছে আকর্ষণীয় অফার। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয়েছে কনসার্টের। থাকছে বিভিন্ন সংগঠনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও।
এসএম/এমকেআর/জিকেএস