মশা মারতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে ঢাকা
রাজধানীতে মশক নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতার আলোকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে দেখেছি কীভাবে তারা মশক নিধনে কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমরা বছরের ৩৬৫ দিনই সব এলাকায় একই ওষুধ একই মাত্রায় ছিটাই। কিন্তু মিয়ামিতে আগে মশার প্রজাতি নির্ণয় করা হয়। তারপর ওষুধ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। তাই আমাদের কাজ হবে ল্যাবে মশার প্রজাতি নির্ণয় করে এবং আচরণ গবেষণা করে ওষুধ প্রয়োগ করা।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গুলশান-২ নগর ভবনের হল রুমে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি ডিএনসিসির ২০ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্র সফর করে। এ সফরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এ ব্রিফিং আয়োজন করা হয়।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ল্যাব স্থাপন করা যেহেতু সময়সাপেক্ষ বিষয় তাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে, তাদের ল্যাবে কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে। যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতায় আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি৷ এরই মধ্যে দুটি সভা করেছি। সেখানে জাতীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কীটতত্ত্ববিদদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের অর্থায়নে নগর ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পদ্ধতি, মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব আহরণ পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিদলটি জানুয়ারি মাসে ফ্লোরিডার মিয়ামি সফর করেছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি মশক নিধনে সর্বস্তরের মানুষের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। মিয়ামি শহরের মতো আমাদের একটি পিআর (পাবলিক রিলেশন) টিম থাকবে, যারা শুধু মশা নিধনে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করবে৷ বিশেষ করে স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক কার্যক্রম করবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো আমাদের দেশেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সোসাইটিগুলোকে সচেতনতা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘মসকিউটস বাইটস আর ব্যাড’- শিরোনামে একটি পাঠ্যবই রয়েছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বইটি পড়ানো হয়। শিক্ষার্থীরা কার্টুন আকারে রং করে বইয়ের বিষয়বস্তু অধ্যয়ন ও অনুশীলন করে। আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্যও পাঠ্যপুস্তকে কার্টুন আকারে এ বিষয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য মশক নিধনে সচেতনতা বিষয়ক আর্ট বুক প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান মেয়র।
আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ডিএনসিসির চলমান বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি মিয়ামি শহরের প্রকল্পের মতোই করা হচ্ছে। তারা যেভাবে বর্জ্য সংগ্রহ করে আমরাও সেভাবেই বর্জ্য সংগ্রহ করবো। আমরা এরই মধ্যে ডিএনসিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক শহরগুলোর মতো ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার স্থাপন করেছি। সিটি করপোরেশনের সব গাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। এছাড়াও মাঠ, পার্ক, খালসহ অন্য স্থাপনাগুলোতেও সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার থেকে এগুলো মনিটরিং করা হবে।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতে স্থানীয় সংস্থাগুলোর সব এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) আপডেট আইনের আলোকে করা হয়। আমাদের পুরনো রাজস্ব আইন আপডেট করতে হবে। এছাড়াও ডিএনসিসির এইচআর (হিউম্যান রিসোর্স/মানবসম্পদ) ঢেলে সাজাতে হবে। মিয়ামি ডেড কাউন্টি এ বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আদলে পশু ও বৃক্ষ হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে বলেও জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম।
ডিএনসিসি ও ডেট্রয়েট সিটির সমঝোতা স্মারকের বিষয় উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এই সফরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের ডেট্রয়েট সিটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি ইতিহাস সৃষ্টি হলো। ফলে দুই সিটির মধ্যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে। দুই সিটির উত্তম কার্যক্রমগুলো শেয়ার করা হবে।
ডেট্রয়েট সিটি ডিএনসিসির কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবে বলেও জানান তিনি।
ব্রিফিংয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।
ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকের সঞ্চালনায় এতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলামসহ ডিএনসিসির সব বিভাগীয় প্রধান, কাউন্সিলর ও অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এমএমএ/এমকেআর/এএসএম