অজ্ঞান হওয়ার পর সর্বস্ব ছিনিয়ে নিতেন তারা
বাসে উঠেন তিনজন। দুজন বসেন টার্গেট যাত্রীর পাশে। তৃতীয়জন হকার সেজে বিক্রি করতে থাকেন নানারকম ব্যথা, যৌন শক্তি বৃদ্ধিকারক ওষুধ, মলম ও গ্যাসের ওষুধ। টার্গেট যাত্রীকে কৌশলে বিনামূল্যে খাওয়ানো হয় সেই ওষুধ। আবার টার্গেট ব্যক্তিকে প্রলুব্ধ করতে নিজেরাও কিনে খান।
অজ্ঞান হওয়ার পর ছিনিয়ে নেওয়া হয় সর্বস্ব। চক্রটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আর রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির সদস্য অন্তত ২০০ জন আছে বলে তাদের ধারণা। চক্রটি নানান কৌশলে পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৭০০ ভুক্তভোগীকে সর্বস্বান্ত করেছেন।
তবে চক্রটির শেষ রক্ষা হয়নি। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা মিজান হোসেনসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, চক্রের মূলহোতা মিজান হোসেন কখনো তরকারি আবার কখনো দিনমজুরের কাজ করলেও সহজ উপায়ে বেশি টাকার লোভে পা বাড়ান অপরাধ জগতে। সদস্য হন অজ্ঞান পার্টির। খাবারের সঙ্গে ওষুধের গুঁড়া মিশিয়ে বিশেষ হালুয়া তৈরিতে পটু তিনি। ভুক্তভোগী অজ্ঞান হওয়ার পরে পাশে যে থাকে, সে সবকিছু নিয়ে নেয়।
আরও পড়ুন: প্রবাসীদের টার্গেট করে সর্বস্ব লুটে নিতেন তারা
দীর্ঘদিন ধরে এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত মিজান। নানান কৌশলে অন্তত ৭০০ সর্বস্বান্ত হয়েছেন তার হাতে। তাদের এমন অপকর্মে ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন কয়েকজন।
পুলিশ বলছে, সাধারণত ঈদকে টার্গেট করে অজ্ঞান পার্টি সক্রিয় হলেও তাদের অনেকেই পেশাদার অপরাধী, যারা ১২ মাসই এসব অপকর্মে করে বেড়ান।
পুলিশ আরও জানায়, দুই থেকে তিন ধরনের ঘুমের ওষুধ গুঁড়া করে এর সঙ্গে চ্যাবনপ্রাশ মিশিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ টোটকা। যা খেলে মানুষের নেশা ও তীব্র ঘুম আসে। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সেবনকারী।
গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এ ধরনের ওষুধ খাওয়ার পর দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী, তখন তার সর্বস্ব লুটে নেন। এই বিষয়গুলো ঈদ, পূজা বিশেষ করে সামাজিক উৎসবগুলোতে বেশি হয়ে থাকে। গড়ির মধ্যে বা বাইরের কারও চটকদার কথায় ভুলবেন না ও তাদের দেওয়া খাবার খাবেন না। নিজে সচেতন হন, অন্যকেও সচেত করুন।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ২০ লাখ টাকা ছিনতাই করেন ‘শাহীন পুলিশ’
মিজান পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন দাবি করে তিনি বলেন, পাঁচজনের দলটি অজ্ঞান করার ওষুধ নিয়ে বাসে উঠেন। একজন হকার সেজে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। বলা হয়, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, গ্যাস্ট্রিক ও যৌন সমস্যার সমাধান মিলবে তাদের তৈরি করা দাওয়াই খেলে। টার্গেট ব্যক্তিকে প্রলুব্ধ করতে নিজেরাই কেউ কেউ কিনে খান। কখনো বিনামূল্যে খাওয়ানো। এভাবেই তারা কাজটি করে আসছেন।
বাসে, ট্রেনে বা লঞ্চে মানুষকে অজ্ঞান করে সবকিছু লুটে নেওয়ার পাশাপাশি প্রায়ই বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে বলে জানান গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, যাত্রীর বেশে গাড়ি উঠে অন্য যাত্রীদের অজ্ঞান করে মালামাল লুট করছেন তারা। আমরা অনেক অভিযোগ পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে, এরপর অভিযানে অজ্ঞানপার্টির সদস্যদের গ্রেফতার করা হয় এবং তারা স্বীকারও করেছেন এ কাজ তারা করেন। তারা বলেছেন, বাসে, ট্রেনে ও লঞ্চে এ ধরনের কাজ বেশি করে থাকে। অজ্ঞান পার্টির ক্ষপ্পরে পড়ে আমাদের পুলিশ সদস্যসহ হতাহতের সংখ্যা অনেক।
আরও পড়ুন: প্রাইভেটকারে যাত্রী নিয়ে ছিনতাই করতেন চান মিয়া
গণপরিবহনে হকারদের নিরুৎসাহিত করতে তাই বাসচালক ও হেলপারদের আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
টিটি/এমআরএম