সাকরাইন উৎসব
পুরান ঢাকার অলিগলিতে ঘুড়ি বেচাকেনার ধুম
চলছে পৌষ মাসের শেষ সপ্তাহ। দুদিন পার হলেই বাংলা বর্ষপঞ্জিকার মাঘ মাসের প্রথম দিন। এ দিন উদযাপন করা হয় পৌষ সংক্রান্তি বা সাকরাইন উৎসব। তবে, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পৌষ মাসের শেষ দিনটিকে পৌষ সংক্রান্তি হিসেবে পালন করে থাকেন। এ দিনটিকে সামনে রেখে রাজধানীর পুরান ঢাকায় চলে ঘুড়ি উৎসব।
ঐতিহ্যের আলোয় পৌষের শেষদিনকে রঙিন করতে মাতোয়ারা পুরান ঢাকাবাসী। তাই উৎসব ঘিরে পুরান ঢাকার অলিগলিতে চলছে ঘুড়ি বেচাকেনার উৎসব। শিশু, তরুণ, বৃদ্ধরা কিনছেন ঘুড়ি, নাটাই, সুতা। চলছে সুতায় মাঞ্জা দেওয়ার কাজ। পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজারে চলছে ঘুড়ি বেচাকেনার ধুম।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানে দোকানে হরেকরকমের ঘুড়ি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রঙ-বেরঙের ঘুড়ি আর নাটাই-সুতা সারি সারি করে সাজিয়ে রেখেছেন দোকানিরা। বাজারে বিভিন্ন নামের ঘুড়ি পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম- চোখদার, চশমাদার, কাউটাদার, লাভবার্ড, পঙ্খিরাজ, প্রজাপতি, চক্ষুদার, ঈগল, সাদাঘুড়ি, চার বোয়া, দুই বোয়া, টেক্কা, লাভঘুড়ি, তিন টেক্কা, মালাদার, দাবা ঘুড়ি, বাদুড়, চিল, অ্যাংগ্রি বার্ডস হরেক রঙের ঘুড়ি।
আরও পড়ুন>> যেভাবে পালিত হয় ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব
ঘুড়িভেদে দামও ভিন্ন। এবারের চলমান কাগজ সংকট ও কাগজেত মূল্যবৃদ্ধির ফলে ঘুড়ির দামও বেড়েছে। একেবারে সাদামাটা ঘুড়ি মিলছে ৮ টাকায়। যেগুলো মূলত গত বছর ৫ টাকা ছিল। হাতেগোনা কয়েকটি দোকান ছাড়া ১০ টাকার নিচে ঘুড়ি নেই শাঁখারিবাজারে। এছাড়া দেশি ঘুড়ির দাম বেড়ে ৫ থেকে ১০ টাকা হয়েছে।
চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বিদেশি ও নকশা করা ঘুড়ি। সেগুলোর দাম ১৫০-৩৫০ টাকা। নানা রকমের বাটিওয়ালা, মুখবান্ধা, লোহা নাটাই, কাঠের নাটাই, চাবাডি নাটাই বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সুতাও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের। যেমন- ড্রাগন সুতা, ভুত সুতা, বিলাই সুতা। সুতাভেদে দাম ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন>> সাকরাইন উৎসব ঢুকে গেছে আতশবাজি-ডিজে পার্টিতে
শাঁখারিবাজারে ঘুড়ি কিনতে এসেছে পোগজ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র তামিম ও হাসান। তারা জাগো নিউজকে বলে, প্রতি বছর শাঁখারিবাজার থেকে ঘুড়ি কিনি। এখানে দাম একটু কম। তবে, এবার ১০ টাকার নিচে ঘুড়ি নেই। সাকরাইনের জন্য ১৫ টি ঘুড়ি কিনেছি।
রাজধানীর গেন্ডারিয়া থেকে সন্তানকে নিয়ে ঘুড়ি কিনতে এসেছেন অন্তরা সেন। তিনি বলেন, সাকরাইনে বাচ্চাদের আনন্দ হচ্ছে ঘুড়ি ওড়ানো। সেজন্য আমি নিজেই নিয়ে এসেছি। পড়াশোনার চাপ সামলে এ দুইদিন তারা আনন্দ করবে।
তিনি আরও বলেন, এ দিনে আমরা বাড়িতে বিভিন্ন পিঠা বানিয়ে থাকি। বাড়িতে মেহমান আসে। বাচ্চাদের বন্ধু-বান্ধবরাও আসে।
শাঁখারিবাজারের শঙ্খশ্রী ভাণ্ডারের চন্দন রায় বলেন, এবার পাইকারি বেচাকেনা কম। খুচরা ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ না থাকায় এখনো ক্রেতা কম। আগামীকাল বেচাকেনা আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন>> পুরান ঢাকায় সম্প্রীতির সুর সাকরাইন উৎসবে
খুচরা বিক্রেতা সুবীর নন্দী বলেন, ‘বেচাকেনা স্বাভাবিক। তবে, কাগজের দাম বাড়ায় ঘুড়ির দামও বেড়েছে। বিগত ৫-৬ বছরের পর এবার ঘুড়ির দাম বেড়েছে। ঘুড়ির কারিগররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের বেশি দাম ঘুড়ি কিনতে হচ্ছে।
জানা যায়, আগামী শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে ঐতিহ্যবাহী উৎসব সাকরাইন শুরু হবে। এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি বাড়িতে বাড়িতে চলবে পিঠাপুলির উৎসব। সন্ধ্যার পর বর্ণিল ফানুশ উড়ানো ও আতশবাজি হবে।
রায়হান আহমেদ/এমএএইচ/জেআইএম