‘স্মার্ট ওয়াসা’ করতে চান তাকসিম এ খান
আগামীতে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণার সঙ্গে মিল রেখে ঢাকা ওয়াসাকে ‘স্মার্ট ওয়াসা’ করতে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।
তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসা এরইমধ্যে ৯৪ শতাংশ ডিজিটালাইজ হয়েছে। আগামীতে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণার সঙ্গে মিল রেখে স্মার্ট ওয়াসা বাস্তবায়নে আমরা এরইমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘সুপেয় পানি প্রাপ্তি ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ।
আলোচনা সভায় তাকসিম এ খান বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব পানীয় জলের সার্বজনীন অ্যাক্সেসসহ শিল্প, শক্তি, কৃষি এবং বাস্তুতন্ত্রের জন্য পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করার নতুন পথ তৈরি করবে। এর সুফল আমরা কতটা নিতে পারবো তা নির্ভর করবে আমাদের প্রয়োজনীয় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর। একই সঙ্গে পানি ব্যবহারে সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল। ঢাকা ওয়াসা এককভাবে এই কাজ করতে পারবে না। তবে ওয়াসার প্রস্তুতি আরও বেগবান করতে হবে। এছাড়া বিদ্যমান বিভিন্ন পরিকল্পনা আগামীর পানি ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসব সমাধানের উপযোগী করতে হবে। প্রয়োজনীয় অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিত করে পানি সরবরাহ এবং ব্যবস্থাপনা খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলেই আগামীতে সার্বজনীন পানির অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান আরও বলেন, পৃথিবীতে সরাসরি ব্যবহারযোগ্য সুপেয় পানির প্রায় ৯৮ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি। যার কারণে আমরা এ কথা সহজেই বলতে পারি যে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও পানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. কাজী মতিন আহমেদ।
ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে আলাদা উপস্থাপনায় ওয়াসার উপদেষ্টা সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, বিশ্বে বিরাজমান পানি সংকটের মধ্যেই আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রবেশ করছি। এটা নিয়ে আমরা অনেক কথা বলছি এবং প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু এর ফলে পানি সম্পদ এবং এর ব্যবস্থাপনার ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে খুব বেশি কথা হচ্ছে না আমাদের দেশে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আমাদের জন্য কী সংকট নিয়ে আসতে পারে অথবা কোন ধরনের নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিতে পারে তা নিয়ে বিশদ আলোচনা দরকার। একই সঙ্গে দরকার সংকট সমাধান অথবা নতুন সম্ভাবনার সদ্ব্যবহারের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি। আমাদের শিল্পখাতে আর পানি সবরাহ কাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলির চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পাশাপাশি চতুর্থ পানি বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা এখনই প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শুরু হওয়া কর্ম পরিকল্পনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশের উপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন এবং প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির পদক্ষেপ বেগবান করা দরকার।
জার্মানিতে বসবাসকারী প্রকৌশলী প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সাইফুল্লাহ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সম্ভাবনা এবং ওয়াসার করণীয় সম্পর্কে বেশ কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন। প্রযুক্তিগত আলোচনার বিশ্লেষণ করেন প্রযুক্তিবিদ মো. খায়রুল আলম সবুজ। তিনি বলেন, সরকার এরইমধ্যে সারাদেশে ফাইবার অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য নাগরিকদেরকেও দক্ষভাবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা কেবলমাত্র মোবাইল ডিভাইস ও কম্পিউটার-ল্যাপটপের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছি। বাকি আরও চারটি অর্থাৎ শিল্প, নাগরিক সুবিধা ও সেবাসমূহকে একসঙ্গে প্রযুক্তিবান্ধব করে গড়ে তুললেই স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ করা সম্ভব।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা এখনও ফাইভ-জি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। দ্রুতগতির ফাইভ-জি বাস্তবায়ন না করা গেলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। এজন্য সরকারকে ইকোসিস্টেমের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
এমএমএ/কেএসআর/এমএস