ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ডিডব্লিএসএনআইপি

বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের উদ্যোগ ওয়াসার, খুশি ঢাকাবাসী

মুসা আহমেদ | প্রকাশিত: ০৮:২১ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২

‘আগে ওয়াসার সরবরাহ করা পানি নিয়ে প্রায়ই বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। কালচে পানিতে দুর্গন্ধ ছড়াতো। বিভিন্ন সময় পানিতে পোকা পাওয়া গেছে। এই পানি ফুটিয়েও পান করা যেত না। এখন ওয়াসার পানি অনেকটাই বিশুদ্ধ। নির্দ্বিধায় পানি পান ও রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করতে পারছি।’

কথাগুলো বলছিলেন গৃহিণী রাবেয়া সুলতানা। তার বাসা পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের মিউনিসিপ্যাল রোডে। তিনি জানান, পুরান ঢাকা অত্যন্ত ঘিঞ্জি এলাকা। এক বছর আগে পানি সরবরাহে নতুন পাইপ স্থাপন করেছে ওয়াসা। এই পাইপ বসানোর পর মহল্লার সবাই বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন। পানির মান নিয়ে কারও কোনো আপত্তি নেই।

মুগদা-বাসাবো এলাকায় ওয়াসার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পানির দাবিতে মানববন্ধনসহ নানান কর্মসূচি পালনও করেছেন তারা। মুগদা থানা রোডের বাসিন্দা হাবিবুল ইসলাম বলেন, আগে ওয়াসার পানি দিয়ে খাবার রান্না করলে রং পরিবর্তন হয়ে যেত। পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর থেকেও দুর্গন্ধ আসতো। বছরখানেক আগে পানির নতুন পাইপ বসায় ওয়াসা। এখন পানির মান অনেকটা ভালো।

মহাখালীর আইপিএইচ এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, আগে তো ওয়াসার লাইনে পানিই পাওয়া যেত না। দিনে একবার যখন পানি দিতো, সেই পানিও ব্যবহার উপযোগী ছিল না। তবে বছরখানেক ধরে এই কষ্ট লাঘব হয়েছে।

wosa1

ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরবাসীকে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ২০১৬ সালে ‘ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ডিডব্লিএসএনআইপি)’ অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। তবে ২০২০ সালে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ১৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা শহরের ৩৯ হাজার বাড়িতে ‘এইচডিপিই পাইপ’ স্থাপন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে আরও ১০টি নতুন গভীর নলকূপ স্থাপন এবং সংস্কার করা হচ্ছে ৭৫টি পুরোনো গভীর নলকূপ।

গত অক্টোবরে ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (ডিডব্লিএসএনআইপি) সবশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা শহরবাসীকে সার্বক্ষণিক নির্ভরযোগ্য পানির সরবরাহ এবং ঢাকা ওয়াসার সেবার মান ও সক্ষমতা বাড়ানোই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিডব্লিএসএনআইপির ৬০ দশমিক ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর্থিক অগ্রগতি ২৯ শতাংশ। প্রকল্পে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। এখন প্রকল্পটি এফএসএল অ্যান্ড সিআরএফজির সঙ্গে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে আরএফএল প্লাস্টিকস লিমিটেড। এজন্য ঢাকা শহরকে ১৪৫টি ক্লাস্টারে (ডিস্ট্রিক্ট মিটার এরিয়া বা ডিএমএ) ভাগ করা হয়েছে। এরই মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ডিএমএর কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াসা।

ডিডব্লিএসএনআইপির প্রকল্প পরিচালক আবদুল লতিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগের পুরান লাইন থেকে গড়ে ৩৯ শতাংশ পানি অপচয় হতো। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হতো ওয়াসা। লাইনের বিভিন্ন স্থান ফেটে ময়লা পানি ঢুকতো। এখন সম্পূর্ণ আধুনিক পদ্ধতিতে মেশিনের সাহায্যে পানির লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। এতে পানি অপচয় অনেক কমে যাবে। পানিতে জীবাণু মিশতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে এ বিশুদ্ধ পানি দিতে চায় ওয়াসা। যে কেউ খুব সহজেই এই পানির লাইনের সংযোগ নিতে পারবেন। নতুন পাইপ লাইন যেখানে চালু করা হচ্ছে, সেখানে পুরোনো লাইনটি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। নতুন লাইন থেকেও অবৈধ লাইন স্থাপনের সুযোগ নেই।

wosa1

বংশালের কাজী আলাউদ্দিন রোড ওয়াসার মডস জোন-২ এর আওতাধীন। ছয় মাসের বেশি সময় আগে এই রোডের দুপাশের সব গলিতে ওয়াসার প্লাস্টিকের পাইপ বসানো হয়েছে। এখন কাজী আলাউদ্দিন রোডে বড় মোটা পাইপ স্থাপনের কাজ চলছে। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, এই রোডে নাজিরা বাজার বড় মসজিদের সামনে পাইপ স্থাপনের কাজ করছেন ওয়াসার লোকজন। এবং বড় পাইপ থেকে আশপাশের গলিতে যেসব পাইপ ঢুকছে সেগুলোতে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। আর প্রতিটি বাড়িতে লাগানো হচ্ছে ডিজিটাল মিটার। এসব মিটারে ওয়াসার বিল উঠবে।

ওয়াসার মডস জোন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ আলম জাগো নিউজকে জানান, মাঠ পর্যায়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে তার জোন থেকে সব সময়ই খোঁজ-খবর রাখছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার মানুষ উপকৃত হবে।

কয়েক বছর আগে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ঢাকা ওয়াসা সরবরাহ করা পানি ৯১ শতাংশ গ্রাহকই ফুটিয়ে পান করেন। পানি ফোটানোর এ প্রক্রিয়ায় রাজধানীর বাসাবাড়িতে বছরে পুড়ছে ৩৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ঘনমিটার গ্যাস, অর্থাৎ এতে ব্যয় হচ্ছে ৩৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

তবে এখন ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে তা বিশুদ্ধ বলে জানিয়েছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ওয়াসার সরবরাহ করা পানি ৯৫ শতাংশ বিশুদ্ধ। পাঁচ ভাগ পানিতে সমস্যা থাকে। সেক্ষেত্রে ১০ মিনিট ফুটিয়ে পানি পান করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি একেবারেই থাকবে না। ভবিষ্যতে এই স্বচ্ছতা শতভাগে নিয়ে যেতে চাই।

তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসার মূল লক্ষ্য পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও গণমুখী পানি ব্যবস্থাপনা। এ লক্ষ্য সামনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনায় ঢাকা ওয়াসার পানির চাহিদা পূরণে ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা কর্মসূচি’র আওতায় নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। তারই পরিক্রমায় ঢাকা ওয়াসা আজ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি রোল মডেল।

এমএমএ/এএসএ/এমএস