মেট্রোরেলের ‘জঞ্জাল’ সরিয়ে সড়ক সবুজায়ন, কমছে দুর্ভোগ
# সরানো হচ্ছে ‘ভোগান্তি’র ট্রাফিক ব্যারিয়ার
# সড়কে নানা প্রজাতির ফুলের গাছ রোপণ
# চলন্ত সিঁড়ি ও লিফটের কাজ শেষপর্যায়ে
# মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় এখনো জনদুর্ভোগ
অপেক্ষার দিন ফুরাচ্ছে। ডিসেম্বরে ঢাকার বুকে ছুটবে বহুল আকাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল। খুলে যাবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট। এ পথ পাড়ি দিতে ৯টি স্টেশনে থামবে মেট্রোরেল। নতুন প্রজন্মের স্বপ্নের মেট্রোরেল চালু হলে নগরবাসীর যানজটের দুর্ভোগ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে তার আগেই দুর্ভোগ কিছুটা কমেছে। নির্মাণকাজের জন্য সড়কে রাখা সামগ্রী ও ট্রাফিক ব্যারিয়ার সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে ট্রাফিক ব্যারিয়ার সরানোয় সড়কে স্বস্তি ফিরছে। এ ব্যারিয়ারের কারণে এতদিন সড়কের ৩০-৪০ শতাংশ বন্ধ থাকতো। চলাচল করতে হতো সরু সড়কে। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত এ ‘জঞ্জাল’ সরানোর পাশাপাশি সড়কের মাঝে লাগানো হচ্ছে নানা ধরনের ফুলের গাছ। চাষ হচ্ছে সবজির। ফলে দুর্ভোগের সড়ক হয়ে উঠছে সবুজ। কদিন বাদে তাতে ফুটবে ফুলও।
নগরবাসী ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেট্রোরেলের পিলার বসানোসহ নির্মাণকাজের জন্য কংক্রিট ও স্টিলের রোড ট্রাফিক ব্যারিয়ার বসানো হয়। ফলে মেট্রোরেলের রুট যে সড়কের আশপাশ দিয়ে গেছে, সেসব সড়কে চলাচলে দুর্ভোগ বাড়ে। সরু হয়ে গিয়েছিল রাস্তা। নির্মাণকাজ শেষ হওয়া অংশ থেকে ট্রাফিক ব্যারিয়ার সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যেসব এলাকায় পিলার বসানো শেষ, সেখান থেকেও নিমাণসামগ্রী সরানোর কাজ চলছে।
তবে মেট্রোরেলের স্টেশনে ওঠার সিঁড়ি ও লিফটের কাজ চলায় কিছুটা ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে। সঙ্গে ফুটপাতে বসানো হচ্ছে টাইলস। দ্রুতই এসব কাজও শেষ হবে বলেও জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর আগারগাঁও থেকে পরিকল্পনা কমিশন পর্যন্ত রাস্তার মাঝে নানান প্রজাতির ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। মাঝে মাঝে সবজিও চাষ হচ্ছে। মেট্রোরেলের নির্মাণসামগ্রী বা জঞ্জাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। স্টিল দিয়ে বানানো ট্রাফিক ব্যারিয়ারও তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন চলছে সবুজায়নের কাজ। পর্যায়ক্রমে অন্য এলাকার সড়কেও এমন সবুজায়ন করা হবে
আরও পড়ুন: সড়কে সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি, বেড়েই চলেছে খরচ
আগারগাঁও তালতলা এলাকার বাসিন্দা মিনজারুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের কারণে এক সময় এ পথে অনেক দুর্ভোগ ছিল। কাজ শেষ হওয়ায় আগারগাঁও থেকে পরিকল্পনা কমিশন রুটে নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে এ সড়ক বেশ প্রশস্ত হয়েছে। রাস্তার মাঝে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে দেখছি। এটা ভালো উদ্যোগ। এ গাছগুলোর ঠিকমতো যত্ন করা হলে ফুল ফুটলে দারুণ দেখাবে।’
এদিকে, ডিসেম্বরে বিজয় দিবসে মেট্রোরেল চালু হচ্ছে। কাজ শেষ করতে রাতদিন পরিশ্রম করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর কাজীপাড়া এলাকায় মেট্রোরেলের ৭ নম্বর স্টেশনের পাশে ফুটপাতে টাইলস বসানোর কাজ করছেন আলী হোসাইন।
তিনি বলেন, ‘পিলার নির্মাণের সময় ঝুঁকি এড়াতে সড়ক বন্ধ রাখা হতো। কাজ শুরুর পর থেকে সড়কের বড় অংশ বন্ধ ছিল। এখন সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে সড়কের বেশিরভাগ অংশ ব্যবহার করা যাচ্ছে। এখন আমরা স্টেশনের ফুটপাতে টাইলস বসানোর কাজ করছি। লিফট ও চলন্ত সিঁড়ির কাজও চলছে। এরমধ্যে সিঁড়ির কাজও শেষপর্যায়ে।’
আরও পড়ুন: লোডশেডিংয়ের বাইরে থাকবে মেট্রোরেল
সরেজমিন দেখা গেছে, মিরপুর শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়া এলাকার ৭ ও ৮ নম্বর স্টেশনের ফুটপাত ও সড়কের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। বেহালদশা ফুটপাতের। অনেক জায়গায় ফুটপাত ভেঙে যাওয়া চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পথচারীরা। পশ্চিম শেওড়াপাড়ার রোকেয়া সরণি এলাকার সড়কের বিটুমিন উঠে গেছে। সেখানে ধুলা-বালিতে একাকার। বাতাস হলেই ওড়ে এসব ধুলা। আবার হালকা বৃষ্টিতে কাদাপানিতে চলা দায় হয়ে পড়ে।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ। এ রুটে নিয়মিত পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করছে মেট্রোরেল। উত্তরার উত্তর ও দক্ষিণ, উত্তরা সেন্টার, পল্লবী, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া এবং আগারগাঁও স্টেশনের কাজ শেষ হয়েছে। মিরপুর-১০ নম্বর থেকে আগারগাঁও তালতলা সড়কের অবস্থা বেহাল। অনেক স্থানে খানাখন্দ। ব্যবহারের অযোগ্য ফুটপাতও। পল্লবী থেকে উত্তরার উত্তর স্টেশন পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাতের কাজ সম্পন্ন। ফলে এ রুটে চলাচলে স্বস্তি ফিরেছে।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলে কোন গন্তব্যে কত ভাড়া
রোকেয়া সরণিতে পান-সিগারেট বিক্রি করেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল চালুর আগে ফুটপাত ও রাস্তা পুরোপুরি মেরামত করাও দরকার। ধুলা-বালিতে দোকানে বসা যায় না। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কেউ যে এক কাপ চা খাবেন, সেই পরিবেশও নেই। ওদিকে (আগারগাঁও থেকে পরিকল্পনা কমিশন) যেমন রাস্তা ক্লিয়ার করা হয়েছে, মাঝখানে গাছ লাগানো হয়েছে, এদিকেও এমনটা করলে ভালো হতো।’
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আশা করছি, ডিসেম্বর মাসে মেট্রোরেল উদ্বোধন করতে পারবো। সেই টার্গেট মাথায় নিয়ে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছি।’
ফুটপাত ও সড়কের বেহালদশা নিয়ে জানতে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্টের প্রকল্পের (লাইন-৬) পরিচালক মো. আফতাবউদ্দিন তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০, সর্বোচ্চ ১০০ টাকা
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড সূত্র জানায়, উত্তরার উত্তর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮৩ দশমিক ১৩ শতাংশ।
প্রথম পর্যায়ে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ২২ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্তকাজের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ১৬ ডিসেম্বর চালু হবে মেট্রোরেল
ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল সিস্টেম, রোলিং স্টক (রেলকোচ) এবং ডিপো ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৮৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এ রুট ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বাড়ানোর জন্য নকশা অনুযায়ী সব কাজ করা হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণ চূড়ান্ত পর্যায়ে। শুরু হয়েছে এ অংশের পরিষেবা যাচাইয়ে কাজও।
এমওএস/এএএইচ/এমএস