‘কারও দায়িত্ব পালনে গাফিলতি থাকলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিতে পারে’
সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ‘বাধ্যতামূলক অবসরে’ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার একদিন পরেই একইভাবে অবসরে পাঠানো হয় পুলিশ সুপার পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে। আরও দুইশ কর্মকর্তা বিশেষ নজরদারিতে আছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চলছে জোর আলোচনা-সমালোচনা। অস্থিরতা বিরাজ করছে প্রশাসনেও। নির্বাচনের আগে এমন অবসরে পাঠোনোকে রাজনৈতিক বার্তা বলে মনে করছেন কেউ কেউ। যদিও সরকারপক্ষ বলছে যা হচ্ছে, তা নিয়ম মেনেই হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে জাগো নিউজ কথা বলেছে সংবিধান বিশেষজ্ঞ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক এবং সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আইনজীবী শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গে।
ড. শাহদীন মালিক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আসলে আমলাদের এমন অবসরে পাঠানোর মধ্য দিয়ে কী বার্তা মিলছে, তা আমার কাছেও পরিষ্কার নয়। অবসর আইন ১৯৪৭, ৯/২ ধারায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরে পাঠানো হয়। এই ধারায় গত দশ বছরে কতজনকে অবসরে পাঠানো হয়েছে তা জানা দরকার।’
এমন অবসরে পাঠানো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে বিশেষ বার্তা কি না? উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাধ্যতামূলক অবসরে অহরহ পাঠানো হয় না সাধারণত। তবে প্রায়শই হয়ে আসছে। আইনে বলা আছে, কোনো সরকারি চাকরিজীবীর চাকরির বয়স ২৫ বছর হয়ে গেলে এবং সরকার যদি মনে করে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে পাঠানো যায়, তাহলে সেটা হতে পারে। খোঁজ নেওয়া দরকার গত দশ বছরে বাধ্যতামূলকভাবে অস্বাভাবিক হারে অবসরে পাঠানো হয়েছে কি না? আবার যদি দশ বছরে কাউকে না পাঠানো হয়, সেটাও ইস্যু হতে পারে। দুই সপ্তাহে পাঁচজনকে দিলেও ইস্যু হতে পারে।’
আরও পড়ুন >>> তথ্য সচিব মকবুল হোসেনকে অবসরে পাঠালো সরকার
অবসরে যাওয়া সচিব অভিযোগ করছেন, বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে পাঠানোর কোনো কারণ জানায়নি সরকার…
‘বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো আইনে আছে। এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করে মামলাও হয়েছিল। আদালত বলেছেন, সরকার প্রয়োজন মনে করলে অবসরে পাঠাতে পারে। নানা কারণেই এমন অবসরে পাঠানো হয়। যেমন তিন বছর আগে সচিব পদে পদায়ন হয়েছেন কেউ। জুনিয়ররা বঞ্চিত হচ্ছেন। তখন ওই সচিবকে অবসরে পাঠিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দিতে পারেন।’
‘কেন অবসরে পাঠানো হলো, এর কারণ দর্শাতেও সরকার বাধ্য নয়। তবে অবসরে পাঠানোর সংখ্যাটা যদি অস্বাভাবিক হয়, তাহলে আলোচনায় আসতে পারে।’ বলেন শাহদীন মালিক।
বর্তমান সরকার কোনোভাবেই প্রশাসনকে দলীয়করণে বিশ্বাসী নয় বলে মত দেন মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, ‘যারা ছাত্রজীবনে ভিন্ন দলের রাজনীতি করতেন, তাদের অনেকেই প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে আছেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় কারও বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
আরও পড়ুন >>> তিন এসপিকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠালো সরকার
‘১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি সরকার ১৯৭৩ সালের ব্যাচের প্রায় সংখ্যক সচিবকে বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে পাঠিয়েছিলেন। এটি করেছিলেন একেবারে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এই জাতীয় কোনো ভূমিকা বর্তমান সরকার রাখে না। তবে কোনো সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তার প্রয়োজন না হলে অথবা যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণে দায়িত্বে না থাকার প্রয়োজনবোধ করলে তাদের যদি আইনানুগ পদ্ধতিতে অবসরে পাঠানো হয়, সেটা কোনোভাবেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা অথবা প্রশাসনকে দলীয়করণ বলা যাবে না।’
রেজাউল করিম বলেন, ‘বিএনপি ঘোলা জলে মাছ শিকারের যে সমালোচনা করতে চায়, তার আগে তাদের পেছনে তাকাতে হবে। তারা কী নোংরা কাজ করেছিল ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে।’
বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন সরকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়নি?
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষই আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখেন। স্বাভাবিকভাবে অবসরে পাঠানো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়। বিভাগীয় তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া আর অবসরে পাঠানো এক বিষয় নয়। চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলে যে কেউ স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে পারেন। এজন্য তার কোনো ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। একইভাবে রাষ্ট্র যদি মনে করে অমুক কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো দরকার, তাহলে রাষ্ট্রও সে সুযোগটি গ্রহণ করতে পারে। এই সুযোগটি উভয়ের জন্য রয়েছে। এটি একটি আইন। এই আইন যতক্ষণ বহাল আছে, ততক্ষণ এর বাইরে কোনো বিতর্ক হওয়া সমুচিত নয়।’
১৯৯১ সালে বিএনপি একই কথা বলেছিল…
‘১৯৯১ সালে গণহারে অবসরে পাঠানো হয়েছিল। ’৭৩ ব্যাচ ধরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এখন কিন্তু এমন কোনো ব্যাচ ধরে অবসরে পাঠানো হচ্ছে না। নিয়ম মেনেই অবসরে পাঠানো হয়েছে।’
প্রশাসনের মধ্যকার কোনো ক্ষোভ বা সরকার শঙ্কিত কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না আমলাদের মধ্যে কোনো ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। অবসর নিয়ে প্রশাসনে কোনো অস্থিরতা নেই। ব্যক্তিগত কারও বিষয় নিয়ে আমলাদের মধ্যে সম্মিলিত কোনো ক্ষোভ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার কোনো কারণ নেই। এই জাতীয় কোনো পরিস্থিতি হবে বলেও মনে করি না।’
গুঞ্জন রয়েছে আরও দুইশ কর্মকর্তা নজরদারিতে আছেন। উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। যদি কারও দায়িত্ব পালনে গাফিলতি থাকে, উপযুক্ততা না থাকে, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে অনুমাননির্ভর কোনো বিষয়ে অনুমান করে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা ঠিক হবে না।’
এএসএস/এএসএ/জেআইএম