ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

তুরাগপাড়ে নদীকথনে বক্তারা

দূষণ-দখলে নদীকেন্দ্রিক পেশা বিলুপ্তির পথে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:৫৯ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২২

‘নদীদূষণের কারণে নদীকেন্দ্রিক সব পেশা বিলুপ্ত হতে চলেছে। সাগড়পাড়ের জেলেদের খাদ্য সহায়তার কার্ড দেওয়া হয়। অথচ যারা ছোট নদীর পাড়ে থাকেন, তাদের জীবিকা রক্ষা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করার কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না।’

বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম আয়োজিত অষ্টম নদীকথন অনুষ্ঠানে আমীন বাজার ব্রিজঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ আলী লাল এসব কথা বলেন।

নদীদূষণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তুরাগ নদীর তীরবর্তী মিরপুর, কাউন্দিয়া ও শ্মশানঘাট এলাকায় ‘নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকা’ শির্ষক অষ্টম নদীকথন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কনসোর্টিয়ামের প্রধান শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে আমজাদ আলী লাল ছাড়াও আলোচক হিসেবে অংশ নেন- রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেইন, ও মাঝি নিত্য বাবু রাজবংশী।

নদীদূষণ রোধে কাজ করেন এরকম স্থানীয় কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরাও এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে শরীফ জামিল বলেন, যদি নদী রক্ষা করা না যায়, তাহলে নদীমাতৃক দেশকেও রক্ষা করা যাবে না। তাই নদীদূষন প্রতিরোধ করতে হবে ও নদীকেন্দ্রিক জীবিকা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

‘নদীরক্ষার জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, তবে এ ধরনের পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য প্রথমে নদীপাড়ের মানুষদের মতামতা নেওয়া দরকার। কারণ তারা ভূক্তভোগী ও তারাই নদী রক্ষার জন্য সঠিক পরামর্শ দিতে পারবে।’

প্রণীত প্রকল্পগুলো নদী রক্ষার জন্য না কী নদী ধবংসের জন্য, তা বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে। কাজেই আমরা নদী রক্ষায় গণমানুষের সম্পৃক্ততা চাই, এ বিষয়ে যারা কাজ করেন তাদের জবাবদিহিতা ও সর্বোপরি এমনসব সমন্বিত উদ্যোগ চাই, যার মাধ্যমে নদীকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকা রক্ষা করা সম্ভব।

নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকা প্রসঙ্গে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, নগরায়নের একটি সেবা হলো- মাছ সরবরাহ নিশ্চিত করা, যা মূলত জেলে সম্প্রদায় করে থাকে। কিন্ত বর্তমানে এ জেলে সম্প্রদায় বছরে আট মাসই বেকার থাকছে, কারণ নদীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ নেই। এর প্রধান কারণ নদীদূষণ।

jagonews24

তুরাগ নদীর সঙ্গে ২১টি জেলেগ্রাম যুক্ত আছে, যাদের জীবিকা নদীর সঙ্গে যুক্ত। এরা মূলত রাজবংশী, কিছু নদীভাঙা অভিবাসী ও বর্মন জনগোষ্ঠী। জেলে ছাড়াও অনেক শ্রমিক আছেন, যারা নদীঘাটে কাজ করেন।

তুরাগ নদীতে ১০০টি ঘাট আছে, যেখানে কাজ করে অনেক শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করেন। তাছাড়া একসময় নদীকেন্দ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল, যা এখন কমে যাচ্ছে। এর ফলে নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষের আয়ের পথগুলো সীমিত হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এ সম্প্রদায়গুলোকে উন্নয়ন পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত করা ও জেলে সম্প্রদায়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে আলোচনায় এনে পরিকল্পনা করলে নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকা রক্ষা করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

মো. মনির হোসেন বলেন, তুরাগ নদী রক্ষায় অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন উদ্যোগ এসব সমস্যার জন্য অনেকাংশে দায়ী। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মাঝি সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি কার্যকর অংশীদারত্ব তৈরির মাধ্যমে নদীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

মাঝি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নিত্য বাবু রাজবংশী বলেন, এ এলাকার মানুষের পেশা হলো- মাছ শিকার ও বিক্রি করা। জেলেরা আগে এ নদী থেকে প্রচুর পরিমাণ মাছ পেতেন। সেসব মাছ বিক্রি করেই আয়-রোজগার আসতো, তাই জেলে সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করেনি।

‘এখন এ নদীর দূষিত পানিতে মাছ নেই বললেই চলে। আর যেহেতু জেলে সম্প্রদায়ের কারও অন্য কোনো কাজ করার দক্ষতা নেই, সেহেতু আমরা অধিকাংশই এখন বেকার জীবনযাপন করছি। এ এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার জেলে পরিবারের লোকজন অনেক কষ্টে দিন যাপন করছেন।

একসময় যে জেলেরা পুষ্টি সরবরাহ করতেন, তারাই এখন আর পুষ্টি পান না। কারন তাদের যে পেশা ছিল, নদীদূষনের কারনে তা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

নদীদূষণের প্রভাবে জেলে ও মাঝিদের জীবন ও জীবিকায় যেসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে সেসবের পরিপ্রেক্ষিতে করনীয় কি তা তুলে ধরাই নদীকথন আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

এফএইচ/এসএএইচ/জিকেএস