সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ যে তথ্য দেয়, তা সঠিক নয়: ইলিয়াস কাঞ্চন
‘নিরাপদ সড়ক চাই’- এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে পুলিশ যে তথ্য দেয় তা সঠিক নয়। তাদের তথ্য হলো এফআইআর রোড ক্রাশের তথ্য। এ ধরনের তথ্যের কারণে সরকার যেভাবে চায় সড়ক নিরাপত্তা তেমনটা হয় না।
তিনি বলেন, পুলিশের তথ্য অনুযায়ী আমাদের সড়ক নিরাপত্তার দরকারই হয় না। সারাবিশ্বের মধ্যে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাই, অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। তবে জাতিসংঘ যেসব তথ্য দিচ্ছে, তা সঠিক। আমরা ওই তথ্য ধরেই কাজ করছি।
শনিবার (১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে রোড সেইফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, চার বছরেও সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাস্তবায়িত হয়নি। এটি বাস্তবায়নে একটি গোষ্ঠীর বাধা আছে, তা আমরা জানি। আমরা আইনটিকে শক্তিশালী করতে চাচ্ছি, অন্যদিকে আরেকটি গোষ্ঠী চাচ্ছে এটিকে দুর্বল করতে।
‘আমরা প্রতিবছরই সরকারকে অনুরোধ করছি- তারা যেন সঠিক তথ্য দেয়। কিন্তু সেটি করা হচ্ছে না। তথ্য একটি বড় ব্যাপার। কেন দুর্ঘটনা হচ্ছে, কতজন মারা যাচ্ছেন, কতজন আহত হচ্ছেন তার সঠিক তথ্য না থাকলে আমরা সঠিক পরিকল্পনা করতে পারবো না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্র্যাকের রোড সেইফটি প্রোগ্রাম (প্রজেক্ট) ম্যানেজার এম. খালিদ মামুন।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস হয়। কিন্তু চার বছরেও তা বাস্তব রূপ পায়নি। ফলে সড়ককে নির্বাপণ করে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও আইনের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
‘রোড সেইফটি কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে সড়ক পরিবহন বিধিমালা দ্রুত জারি ও বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানাই।’
খালিদ মামুন আরও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে জাতিসংঘের উদ্যোগসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগ কমানো। এর জন্য টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) ৩ দশমিক ৬ অর্জনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া ও কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করা। 'গ্লোবাল প্ল্যান ফর সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেইফটি ২০২১-২০৩০' নিশ্চিত করতে কার্যকর কর্মপন্থা নির্ধারণ করে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা।
সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর কিছু সবল দিক থাকলেও এর সীমাবদ্ধতাও রয়েছে প্রচুর। যার মধ্যে অন্যতম হলো- আইনটিতে হেলমেট পরিধানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এর মানদণ্ড ও ব্যবহারবিধি আইনে অনুপস্থিত।
আইনে গতিসীমা লঙ্ঘনে শাস্তির বিধান থাকলেও গতিসীমা নির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা সন্নিবেশিত হয়নি। এছাড়া যাত্রীদের সিটবেল্ট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা ও শিশুদের ক্ষেত্রে চাইল্ড রেস্ট্রেইন্ট বা নিরাপদ আসন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আইনটিতে সংযোজন করা হয়নি।
ইলিয়াস কাঞ্চনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন- গ্লোবাল হোম অ্যাডভোকেসি ইনকিবিউটরের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ড. শরিফুল আলম, ব্র্যাকের রোড সেইফটি প্রোগ্রামের পরিচালক আহমেদ নাজমুল কারদন, বুয়েটেরি অ্যাক্সিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান, বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুল নেওয়াজ।
আরও উপস্থিত ছিলেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) পরিচালক ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও আকাশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ, বিএনএনআরসির প্রধান নির্বাহী এএইচএম বজলুর রহমান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মিডিয়া কো-অডিনেটর রেজওয়ান নধীন, ইমপ্রেসিভ কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুজ্জামান প্রমুখ।
এএএম/এসএএইচ/এমএস