ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

কমলাপুরে দালালের দৌরাত্ম্যে চিড়েচ্যাপ্টা যাত্রীরা

প্রকাশিত: ০৪:০৯ এএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

যাত্রীসেবায় বাংলাদেশ রেলওয়ের উল্লেখযোগ্য কোনো সফলতা না থাকলেও রেলের উপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ। হাজারো সমস্যা মোকাবিলা করে দৈনন্দিন প্রয়োজনে ট্রেনে ভ্রমণ করতে হয় তাদের। নিরাপদ ও তুলনামূলক সাশ্রয়ী হওয়ায় বাস, লঞ্চ, উড়োজাহাজের চেয়ে ট্রেনই মানুষের বেশি পছন্দ হলেও নানা সমস্যার কারণে  শেষ পর্যন্ত ট্রেন ভ্রমণে অনিচ্ছুক অনেকেই।

কোটিরও বেশি মানুষের বাস রাজধানী ঢাকাতে। কাজ-কর্ম, লেখা-পড়া, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ঘোরাঘুরি ইত্যাদি নানা কারণে হাজারো মানুষ প্রতিদিন যেমন ঢাকা আসেন আবার ঢাকা ছেড়ে অন্য কোথাও যান। এর একটা বড় অংশ ভ্রমণ করেন ট্রেনে, দেশের প্রধান রেল স্টেশন কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে। তবে এই স্টেশন থেকে যাত্রায় নিত্যদিনের দুর্ভোগের এক নাম দালালচক্র। স্টেশন কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই দালালদের অস্তিত্ব দেখতেই পায় না।

স্টেশন কর্তৃপক্ষ দেখতে না পেলেও হঠাৎ করে দেখে যে কারো এমন মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক যে, টিকিট বিক্রির মূল কাউন্টারের বাইরে যেন ভ্রাম্যমাণ কাউন্টারের দায়িত্ব নিয়েছে দালালচক্র। অবশ্য এসব দেখার জন্য স্টেশন মাস্টারের কক্ষে বসানো রয়েছে সিসি ক্যামেরার মনিটর। মনিটরে ফুটেজ আসলেও, ফুটেজে দালালদের অস্তিত্ব ধরা পড়লেও, ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কিছুই।      

KOMLAPUR

গত সপ্তাহে কমলাপুর রেলস্টেশনে সরেজমিনে দেখা গেছে, কাউন্টারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কাঙ্খিত টিকিট পাচ্ছেন না যাত্রীরা। অন্যদিকে টিকিট বিক্রয়কারী (বুকিং মাস্টার), ট্রেন টিকিট এক্সামিনার (টিটিই), নিরাপত্তাকর্মী, ট্রেনের পরিচালক, অ্যাটেন্ডেন্টের মাধ্যমে দালালচক্র বিক্রি করছে টিকিট।

দেশের প্রধান রেলস্টেশন থেকে দালালদের মাধ্যমে টিকিট কেনার বিষয়টিকে লজ্জার বলে মনে করেন সাধারণ যাত্রীরা।

শুধু তাই নয়, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও সরেজমিনে দেখা গেছে, সাদা ও নীল রঙের পোশাক পরে বিনা টিকিটধারী যাত্রীদের কাছ থেকে রসিদ ছাড়াই টাকা আদায় করছে দালালচক্র। দূরের যাত্রীদের ভুয়া টিকিট দিয়ে প্রতারিত করা হচ্ছে। এ কাজে সহায়তা করেছেন রেলওয়ের নিরাপত্তাবাহিনীর কতিপয় সদস্য।

চক্রটি যাত্রী বুঝে কখনো আসল টিকিট দিয়ে দ্বিগুণ দামও আদায় করছে। কাউন্টারের সামনে বা এর আশপাশেই মূলত দালালচক্রটি সক্রিয় থাকে। এজন্য রেলস্টেশন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বুকিং মাস্টার পর্যন্ত পেয়ে থাকেন মোটা অঙ্কের টাকা।

ঢাকা-রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী আশিকুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে জাগো নিউজকে বলেন, এখনতো ঈদ নেই যে টিকিট পাবো না। তবুও বলা হচ্ছে টিকিট নেই। স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে টিকিট চাইতেই স্লিপ লিখে দিয়ে পাঠানো হলো কাউন্টারে। ৫ মিনিট পরেই হাতে পেলাম টিকিট।

তিনি বলেন, আমার মতোতো সবাই নয়। দেশের মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তের মানুষই বেশি রেলে যাওয়াত করেন। তাদের টিকিট কে দেবে? আবার বিনা টিকিটে চলাচল করলেও তাদের দণ্ড পাওয়ার ভয়ও আছে।

লালমনি এক্সপ্রেসের যাত্রী ফয়সাল জানান, দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। রেল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অভিযোগ করেছি যে, কাউন্টারে টিকিট পাচ্ছি না, কিন্তু বাইরে ঠিকই টিকিট বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। স্টেশন মাস্টারের কক্ষে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও তাতে নজর নেই কারোরই।

KOMLAPUR

কমলাপুর রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে মোট ৬৪টি আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ক্যান্টনমেন্ট থেকে মৈত্রী ও নীল সাগর নামে দুটি মেইল সার্ভিস চলাচল করে।

দালালদের কুকর্মে যে রেল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মদত রয়েছে তার সত্যতা পাওয়া গেলে এক দালালের কথায়। স্টেশন চত্বরে দালালচক্রের সদস্য স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, রেলস্টেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কাউন্টার মাস্টার আমাদের ভালো করে চেনেন। তারাও এই টিকিট বাবদ বাড়তি টাকার ভাগ নেন। নইলে কী আর এখানে দাঁড়াতে পারি?

শুধু শাহ আলম কিংবা স্বপন নন, রশিদ, মটকা নিজাম কিংবা গোফরানদের মতো অর্ধশত দালাল রয়েছে কমলাপুরে রেল স্টেশনে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে দেখা যায় সিসি ক্যামেরার মনিটরে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দালালদের টিকিট বিক্রি ও যাত্রীদের সঙ্গে দর কষাকষির চিত্র। রেল স্টেশন মাস্টার-২ নৃপেন্দ্র চন্দ্র শাহার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কি বলেন! এখানে দালাল আসবে কই থেকে? সব কাউন্টারেইতো টিকিট বিক্রি হচ্ছে।’

পরে দালাল স্বপন ও রশিদের অবস্থান দেখিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই আপনার টিকিট লাগবে নাকি বলেন, এতো ঝামেলা কইরা লাভ কী আপনার?’

যোগাযোগ করা হলে কমলাপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মজিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘রেলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। দালাল ধরার দায়িত্বে আমরা নেই। তবে রেলওয়ে কর্তৃকক্ষ চাইলে অভিযান চালানো হবে।’

জেইউ/এমজেড/এনএফ/পিআর