ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

রওশনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন এরশাদ

প্রকাশিত: ১২:৫৫ পিএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এ যেনো এক দাবার কোট। কখনও এরশাদ, আবার কখনও তার স্ত্রী রওশন এরশাদ এগিয়ে। কেউ কিস্তি চাললে তার জবাবে কিস্তির চাল। দর্শক হিসেবে রয়েছেন দলীয় সংসদ সদস্য, প্রেসিডিয়াম এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এবার এরশাদ-রওশনের দাবার কোর্টে গোড়ার চালে রওশনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন এরশাদ।

রওশনের পক্ষে সাবেক দলীয় মহাসচিব জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ বাবলু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ দলের বেশিরভাগ সংসদ সদস্য এবং প্রেসিডিয়াম থাকলেও তৃণমূলের সমর্থন এরশাদের দিকেই।

গত ১৯ জানুয়ারি থেকে চলমান এ পরিস্থিতিরি ধারাবাহিকতায় রোববার দলীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় রওশন এরশাদকে দলের এক নম্বর কো-চেয়ারম্যান না করা পর্যন্ত এরশাদের কোনো সভায় যোগ দিবেনা সংসদ সদস্য এবং দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা।

এ সিদ্ধান্তের জবাবে সোমবার দলীয় এক কর্মসূচিতে স্ত্রী রওশনের উদ্দেশ্যে এরশাদ বলেন, নতুন প্রজন্মের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিন। আমাদের দিন শেষ হয়ে গেছে।

যদিও তিনি তার সিদ্ধান্তের কথা আবারও পূর্নব্যক্ত করে কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে সাম্প্রতিক রদবদলের সিদ্ধান্তে ‘অটল’ থাকার কথা বলেন। পাশাপাশি জাতীয় পার্টিতে ‘রওশনপন্থি’ নেতা হিসেবে পরিচিতদের ‘দলে কোনো অবস্থান নেই’ বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

রোববার সংসদ ভবনে বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয়ের বৈঠক থেকে দলের চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে তিনটি দাবি জানানো হয়।

তাদের দাবি-কো চেয়ারম্যান পদ থেকে জিএম কাদের ও মহাসচিব পদ থেকে রুহুল আমিন হাওলাদারকে প্রত্যাহার করতে হবে, রওশন এরশাদকে দলের কো চেয়ারম্যান করতে হবে এবং প্রেসিডিয়াম ও পার্লামেন্টারি কমিটির সঙ্গে আলোচনা না করে দলের চেয়ারম্যান কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।

এই দাবিগুলো পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত দলের কোনো কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয় বৈঠকে উপস্থিত জাতীয় পাটির ৩১ জন এমপির স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে। ওই সভার সভাপতি ছিলেন রওশন।

সোমবারের সভায় রওশনপন্থি নেতাদের ইঙ্গিত করে এরশাদ বলেন, একটি দলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শৃঙ্খলা। এটা যারা ভঙ্গ করেছে, তাদের পরিণতি তোমরা দেখেছ। তারা জানে যে তৃণমূলে যাদের কোনো অবস্থান নেই। আমাদের কাছে তাদের কোনো মূল্য নেই।

এরশাদ বলেন, অনেকে ষড়যন্ত্র করেছে জাতীয় পার্টিকে নিঃশেষ করার জন্য। কিন্তু সফল হয়নি। কারণ জনগণ আমাদের ভালোবাসে। আমি জানি, আজকের যৌথ সভায় যেন কেউ না আসে সেজন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল, টেলিফোন করা হয়েছিল।

সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ সাত্তার, সাইদুর রহমান টেপা, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এসএম ফয়সল চিশতি, এম এ মান্নান, সোলাইমান আলম শেঠ, মাহমুদুল ইসলাম, মহসিন রশিদ, তাজ রহমান, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, এম এ কাশেম, গোলাম কিবরিয়া টিপু, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলম ভূঁইয়া, জহিরুল আলম রুবেল, সুলতান মাহমুদ, ইসহাক ভূঁইয়া প্রমুখ।

সভায় এমপিদের তেমন উপস্থিতি ছিলনা। এমপিদের মাঝে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, সালমা ইসলাম এবং রত্না আমিন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।

এ উপস্থিতির হিসেব কষলে দেখা যায়, এরশাদ যাই বলুক না কেন দলের বেশির ভাগ সংসদ সদস্য এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশনের পক্ষেই রয়েছে। তার গতকালের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজকের সভায় যোগ দেননি।

সোমবারের যৌথ সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, তিন বছর আগে বর্ধিত সভা হয়েছিল, আর দুই বছর আগে প্রেসিডিয়াম বৈঠক। একটা দল বাঁচে কী করে! এখনো যে জাতীয় পার্টি আছে তার কৃতিত্ব সম্পূর্ণ তোমাদের।

তিনি রওশন অনুসারীদের হুমকি দিয়ে বলেন, ইতোপূর্বে যারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে তাদের অবস্থা কি হয়েছিলো তা তোমরা জানো। এরশাদ অভিযোগ করে বলেন, রোববার রাতে দেশের সব জেলায় তারা (রওশনপন্থিরা) আজকের এই তৃণমূল সভায় যেন না আসে এজন্য নিষেধ করেছিল। ওদের কোনো মূল্য নেই আমাদের কাছে। ‘রওশনপন্থি’ নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আসুন, এসে দেখে যান এই সভা কেমন হচ্ছে, কারা কারা এসেছে এখানে।’ আজকে এ সভায় এমন কোনো জেলা নাই যে আসে নাই।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, মুক্ত মানুষ ছিলাম না, এখনো নই। তবে আমি যোগ্য উত্তরসূরি নির্বাচিত করেছি। সে আমার ছোটভাই। আমার বয়স হয়েছে, বেশিদিন বাঁচব না। সে আমার দলের হাল ধরতে পারবে। জীবন থাকতে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না।

তৃণমূল সভায় জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার সূচনা বক্তব্য রাখেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

এএম/এমএএস/আরআইপি