তিনগুণ ভাড়া নিচ্ছে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা
চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে এসে নামেন মাঈন উদ্দীন। সিএনজি অটোরিকশায় যাবেন কারওয়ান বাজারে। কমলাপুর স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় অর্ধশতাধিক সিএনজি অটোরিকশা চালকের মাঝে ৫-৬ জনকে জিজ্ঞেস করলে ৩০০ টাকা করে ভাড়া চান। মাঈন উদ্দীন মিটারের বিল থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে দিতে চাইলেও রাজি হয়নি কেউ।
মাঈন উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, কমলাপুর থেকে কারওয়ান বাজারের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। পুনঃনির্ধারিত ভাড়া হিসেবে মিটারের সর্বোচ্চ ৮০-৯০ টাকা হবে। আমি ৫০ টাকা বাড়িয়ে দিতে চাইলেও রাজি হয়নি তারা।
কমলাপুর রেলস্টেশনে সরেজমিন দেখা যায় কমলাপুরে সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা সিন্ডিকেট করে দাঁড়িয়ে থাকেন। একজন যে পরিমাণ ভাড়া চান বাকিরা এর কমে কোনভাবেই যেতে চায় না। এ চিত্র শুধু কমলাপুরে নয়, সারা রাজধানী জুড়েই বিরাজ করছে একই চিত্র। মিটারের ভাড়ার চেয়ে প্রায় তিনগুণ ভাড়া নিচ্ছে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা।
মাঈন উদ্দীনের মতো একই অভিযোগ করেন মগবাজারের আব্দুর রহমান। স্টেশন থেকে মগবাজারের ৪ কিলোমিটার পথ যেতে ভাড়া চায় ২৫০ টাকা। এভাবে প্রতিদিন কমলাপুরের যাত্রীদের জিম্মি করে দুই-তিনগুল ভাড়া আদায় করছে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা।
এদিকে চলতি বছরের শেষ দিকে সিএনজির অটোরিকশার ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করে দিলেও তা মানছেন না তারা। প্রথম ২ কিলোমিটার ৪০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রথম কয়েকদিন এ ভাড়া মেনে মিটারে চললেও এখন মোটেই চলতে রাজি নয় তারা।
মাঈন উদ্দীন জাগো নিউজকে আরো বলেন, ভাড়া বৃদ্ধির পর ড্রাইভাররা মিটার থেকে ১০-২০ টাকা বেশি দাবি করতো। তবে কমলাপুরে গ্রাহকদের রীতিমত জিম্মি করে টাকা আদায় করছে সিএনজি চালকরা। তারা জানে যে লাগেজ নিয়ে ভিআইপি রোডে সিএনজি ছাড়া যাওয়ার উপায় নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নানা অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কে ‘যৌক্তিক’ দাবি করেন কমলাপুরের সিএনজি চালক সাফায়াত আহমেদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, স্টেশনে একজন যাত্রী তুলতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। স্টেশনের লোকদের টাকা দিতে হয়। সারাদিনের জমা ১ হাজার ২৫০ টাকা। রাস্তায় যানজট, সময়মত গ্যাস পাওয়া যায় না বলে মিটারে গেলে পোষায় না। তাই অতিরিক্ত ভাড়া চাইতে হয়।
যাত্রাবাড়ীর সিএনজি অটোরিকশা গ্যারেজের মালিক জামাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, গত একমাস ধরে ফিলিং স্টেশনে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। গ্যাস পেলেও প্রেসার (চাপ) নেই। এ কারণেই অনেক সিএনজি চালক মিটারে যেতে রাজি হচ্ছে না।
তবে সিএনজি ড্রাইভারদের নিয়মিত মিটার চালানোর নির্দেশ দেয়া আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ যদি মিটারে যেতে না চায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিএনজি অটোরিকশাকে মিটারে যেতে বাধ্য করতে সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসেছে, তাতেও টনক নড়েনি সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভারদের। গত বৃহস্পতিবার বিআরটিএ’র এক অভিযানে অংশ নিয়ে ওবায়েদুল কাদের বলেছেন, “৯৫ শতাংশ সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে সিএনজি মালিক ও ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এআর/আরএস/এমএস