‘টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ রক্ষার কোনো বিকল্প নেই’
দেশের পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সঠিক আইন ও আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতারা। তারা বলেছেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ রক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সবুজ বাংলাদেশ: সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির তিনদিনব্যাপী ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে সমাপনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বক্তারা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশে আসার পর থেকেই সবুজ বাংলাদেশ গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন। ‘৮৬ সালে কৃষকলীগ গঠনের মাধ্যমে তিনি সারাদেশে বৃক্ষরোপণের কাজ শুরু করেছিলেন। এখন পর্যন্ত পয়লা আষাঢ়ে তিনি এ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটি।
‘প্রতি বছর মানুষ বাড়ছে আর কৃষি জমি কমছে। সেইসঙ্গে শিল্প কারখানা, স্থাপনা নির্মাণ ও রাস্তাঘাট-অবকাঠামো উন্নয়নের ফলেও কৃষিজমি কমছে। এজন্য মানুষকে সচেতন করা দরকার। আইন থাকলেও কৃষিজমি রক্ষায় এর কোনো প্রয়োগ নেই। এজন্য নতুন একটি আইনের কথা ভাবা হচ্ছে, যাতে কৃষি জমি রক্ষা করা যায়।’
টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ রক্ষার কোনো বিকল্প নেই বলেও মতপ্রকাশ করেন তথমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যে দল এ সাবজেক্টের ওপর নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অন্য কোনো রাজনৈতিক দল এটা করছে না।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ২০০২ সালে এ পদটি সৃষ্টি করেছিলেন। পঁচাত্তরের জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পর যখন তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন তখন থেকেই তিনি একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, যেটি বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেইলক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। পরিবেশ রক্ষায় তিনি অনেক কাজ করেছেন। কৃষক লীগকে কাজে লাগিয়ে ওই সময় থেকে বৃক্ষরোপণ শুরু করেছিলেন, তখন তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রীও নন। এখন বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বড় কণ্ঠ।’
তিন দিনব্যাপী সেমিনারে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও সেমিনারে অংশ নেওয়া সদস্যদের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বন ও পরিবেশ উপ কমিটির চেয়ারম্যান খন্দকার বজলুল হক।
তিনি বলেন, ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের সেমিনারে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা বলেছেন, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, বাংলাদেশের শহরগুলো দূষণপ্রবণ হওয়ার কারণ হলো, পরিবেশগত সমস্যা। বাংলাদেশকে বায়ু ও পানিদূষণমুক্ত রাখতে শিল্প এলাকায় যথাযথ বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করা উচিত। মোটরগাড়ি, প্লেন, ট্রেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে নির্গমন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সেটআপ, ইটভাটা, অনাবৃতভাবে পোড়ানো বা জ্বালিয়ে দেওয়া, কঠিন বর্জ্য ডাম্পিং নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সঠিক আইন ও আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।’
কনফারেন্সের উদ্বোধনী অধিবেশন শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের বিভিন্ন বিভাগ এবং সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস (কারস) একযোগে পরিবেশ বিষয়ক ভিন্ন ভিন্ন সায়েন্টিফিক বিষয়ে আলোচনা, সায়েন্টিফিক সেশন, পোস্টার প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠি হয়।
কনফারেন্সে থিম স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথিতযশা পরিবেশবিদ অধ্যাপক আতিক রহমান। প্ল্যানারি স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ব্যঞ্জামিন হাওডেন এবং জাপানের পরিবেশবিদ অধ্যাপক হিরোওকু মাতসুদা। এছাড়া ২০ দেশের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা উপস্থিত ছিলেন।
এসইউজে/এমএএইচ/