ড্যাপ গেজেটের আগে ভবন নির্মাণে অনুমোদনের হিড়িক
দুই বছর আগে ঢাকা মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) খসড়া প্রকাশ করেছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তখন খসড়া ড্যাপে রাজউক এলাকার ঘনবসতি নিয়ন্ত্রণে আবাসিক ভবনের উচ্চতা সর্বোচ্চ আটতলা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তাই ড্যাপ গেজেট হওয়ার আগে হঠাৎ ভবন নির্মাণে আবেদনের হার অনেক বেড়ে যায়। তার সঙ্গে অনুমোদন দেওয়ার সংখ্যাও দ্বিগুণ বেড়েছে।
তবে নতুন ড্যাপে বহুতল ভবন নির্মাণে ওই বিধিনিষেধ (সর্বোচ্চ আটতলা) রাখা হয়নি। সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিক সুবিধা ও চওড়া সড়ক অনুযায়ী ভবনের উচ্চতা নির্ধারণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন রাজউক যথাযথভাবে ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে পারলে ঢাকা শহর টেকসই, বাসযোগ্য ও জীববৈচিত্র্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
গত ২৩ আগস্ট নতুন ড্যাপের অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। একই প্রজ্ঞাপনে ২০১০ সালে পাস হওয়া ড্যাপ রহিত করা হয়। তবে ২০১০ সালের ড্যাপের আলোকে যেসব কার্যক্রম হয়েছে তা বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন ড্যাপে তলাভিত্তিক ভবন নির্মাণের নিয়ম বাতিল করা হয়েছে। এখানে এলাকাভিত্তিক ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত এফএআরের মাধ্যমে একটি প্লটে কত আয়তন বা উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা হবে, তা নির্ধারণ করা হয়। তাই যেসব এলাকায় নাগরিক পরিষেবার মান ভালো, পার্ক বা উন্মুক্ত স্থান আছে, প্লটের পাশে প্রশস্ত রাস্তা আছে, সেসব এলাকায় এফএআরের মান বেশি ধরা হয়েছে। আর যেসব এলাকায় রাস্তা সরু ও নাগরিক সেবার মান তুলনামূলক খারাপ, সেসব এলাকায় এফএআরের মান কম ধরা হয়েছে। এই ড্যাপ ২০৩৫ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের অক্টোবরে নতুন ড্যাপের খসড়া প্রকাশ করা হয়। এর আগে রাজউকে থেকে বছরে গড়ে চার হাজার নতুন ভবন নির্মাণে অনুমোদন দেওয়া হতো। কিন্তু খসড়া প্রকাশের পর হঠাৎ আবেদনের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে অনুমোদনের সংখ্যাও দ্বিগুণ বাড়ে। কারণ, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ভবনমালিকই উঁচু আবাসিক ভবন বানাতে চান। নতুন ড্যাপ কার্যকর হলে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী উঁচু ভবন নির্মাণ করতে পারবেন না, এমন আশঙ্কা করেছিলেন ভবনমালিকরা। এখন তাদের সেই আশঙ্কা আর নেই।
ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে পারলে ঢাকা শহর টেকসই ও বাসযোগ্য হবে
রাজউক সূত্র জানায়, রাজউক এলাকায় প্রতি বছর গড়ে চার হাজার ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হতো। এর মধ্যে ২০২০ সালের অক্টোবরে যখন ড্যাপের গেজেট হয়, ওই বছর ৫ হাজার ৬১২টি ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। যদিও ওই সময় করোনার কারণে সারাদেশে লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ ছিল। তা সত্ত্বেও রাজউকে ভবন নির্মাণ অনুমোদনের আবেদন ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। এ ছাড়া ২০২১ সালে ১০ হাজার ৩২টি ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়, যার বেশিরভাগই ছিল আবাসিক ভবন। চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত ৯ হাজার ৬৫৬টি ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে রাজউক। আরও এক হাজারের বেশি আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
ড্যাপ মূলত একটি মহাপরিকল্পনা। এতে পুরো রাজউক এলাকায় ভূমি ব্যবহারসহ পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য নানা কৌশলের কথা বলা হয়। এসব কৌশলের পাশাপাশি ড্যাপে উল্লেখিত ভূমি ব্যবহার ধরেই রাজউকের ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত অন্য বিধিমালা হয়। এছাড়া ভবন নির্মাণ অনুমোদনের জন্য কেউ ছাড়পত্রের আবেদন করলে শুরুতে ড্যাপ–সংশ্লিষ্ট জমির শ্রেণি যাচাই করে দেখা হয় বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: সংশোধিত ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে ঢাকা হবে পূর্ণাঙ্গ মেগাসিটি
জানতে চাইলে ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ড্যাপের খসড়া প্রকাশ হওয়ার পরপরই রাজউকে ভবন অনুমোদনের চাপ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তবে এরই মধ্যে যারা ভবনের অনুমোদন নিয়েছেন, তারা অনুমোদনপত্র ও নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করতে পারবেন। নতুন করে আর অনুমোদন নেওয়া লাগবে না।
তিনি বলেন, বাসযোগ্য শহরের কথা বিবেচনা করে নতুন ড্যাপে এলাকাভিত্তিক ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আবাসিক ভবনের সর্বোচ্চ উচ্চতা বা তলার বিধানটি রাখা হয়নি। ফলে যেসব এলাকায় প্রশস্ত রাস্তা ও নাগরিক সুবিধা (পার্ক, মাঠ, জলাশয়, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রভৃতি) বেশি থাকবে, সেসব এলাকায় বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা যাবে।
ড্যাপে যে কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে তা ঢাকা শহরের জন্য ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন ইনস্টিটিউট ফরপ্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, নগর বাস্তবতায় ড্যাপ প্রণয়ন জরুরি হয়ে পড়েছিল। কিছুটা দেরি হলেও ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জন্য ড্যাপ নগরায়ন এবং নগর উন্নয়ন পরিকল্পনাকে সঠিক গতিপথে নিতে পারে। এতে ঢাকা শহর টেকসই ও বাসযোগ্য হবে।
এমএমএ/ইএ/এমএস