টাকা নিয়ে বিত্তবানদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দিলেন সার্ভেয়ার
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে কয়েকহাজার ঘরহীন মানুষকে আধপাকা টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ঘরহীনদের জন্য এই বরাদ্দ থাকলেও পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার ৪২ জন বিত্তবান পেয়েছেন এই ঘর। একজন সার্ভেয়ার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের ঘর পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ এসেছে, টাকার বিনিময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্বাক্ষরিত মূল নথি গোপন করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে তিনি রেজিস্ট্রি করেছেন। কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এসেছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ আগস্ট হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার আগে একই বিষয়ে গত ৪ আগস্ট তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বাদী হয়ে কলাপাড়া থানায় মামলা করেন। মামলাটি দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় থানা থেকে দুদকের কাছে পাঠানো হয়। মামলার পরদিন ৫ আগস্ট সার্ভেয়ারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ওবায়দুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ৪২ জনের নামে প্রায় ৭২ একর ৬৩ শতাংশ খাসজমি রেজিস্ট্রি করেছেন সার্ভেয়ার মো. হুমায়ুন কবির। এর ফলে বিত্তবানদের কব্জায় গেছে প্রায় ৩০ কোটি টাকার সরকারি সম্পদ।
মামলার এজহারে বলা হয়েছে, ভূমিহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমিসহ সেমিপাকা একটি ঘর প্রদানের লক্ষ্যে চলতি বছরের মার্চ থেকে মে মাসে একাধিক স্মারকে ১৯৫টি বন্দোবস্ত কেসের কবুলিয়াত রেজিস্ট্রি করতে খেপুপাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসে পাঠানো হয়। ভূমিহীনদের চূড়ান্ত নামের তালিকায় স্বাক্ষর করে ওই তালিকা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দিতে হুমায়ুন কবিরকে নির্দেশ দেন ইউএনও।
একই সঙ্গে ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি রেজিস্ট্রি করে দিতে সার্ভেয়ারকে ক্ষমতাও দেন তিনি। আর এই সুযোগে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চূড়ান্ত তালিকা পাল্টে নিজের পছন্দের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন হুমায়ুন কবির। ওই তালিকায় তিনি অতিরিক্ত ৪২ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। পাল্টে দেওয়া তালিকায় ইউএনওর স্বাক্ষর স্ক্যান করে সুকৌশলে বসিয়ে দেন সার্ভেয়ার হুমায়ুন। পরে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তাদের অনুকূলে খাসজমি রেজিস্ট্রিও করে দেন।
জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত মূল ফরোয়ার্ডিং গোপন রেখে সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে গত ২৮ মার্চ ইস্যুকৃত এক নম্বর স্মারকে ২২ ভূমিহীনের স্থলে ৩১ জন, ২৪ এপ্রিল দুই নম্বর স্মারকে ১২০ জনের পরিবর্তে ১৩২ এবং ৯ মে তিন নম্বর স্মারকে ৫৩ জনের স্থলে ৭৪ জন ভূমিহীন দেখিয়ে কবুলিয়ত রেজিস্ট্রি করেন। সবমিলিয়ে ১৯৫ জনের পরিবর্তে ২৩৭ জনকে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়।
দুদকের পক্ষে পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. জাভেদ হাবীব। হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪০৮/৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় মামলা করেছে দুদক।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, ওই ৪২ জনের কারও নামে মুজিব শতবর্ষের কোনো খাসজমি, বাড়ি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। সাব-রেজিস্ট্রার তালিকা দেখে রেজিস্ট্রি করে দেবেন, এটাই ছিল নিয়ম। কিন্তু তিনি তালিকা যাচাই না করে কবুলিয়ত রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আইনি কার্যক্রম চলমান আছে।
এসএম/কেএসআর