চেহারা-জাত-জন্মপরিচয়েও বুলিংয়ের শিকার হতে হয়: ড. জোবাইদা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক, সহপাঠী ও হলের শিক্ষার্থীদের দ্বারা বুলিংয়ের শিকার হয়। কেউ নিজের চেহারা, জাত-জন্মপরিচয় বা পারিবারিক অবস্থার কারণে বুলিংয়ের শিকার হয়। বুলিং ব্যক্তির মানসিক অবস্থাকে বিপর্যস্ত করে, যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মুনীর চৌধুরী অডিটোরিয়ামে হিউম্যান রাইটস ভয়েস অ্যান্ড হিউম্যানিটি (এইচআরভিএইচ) আয়োজিত ‘মানবাধিকার সচেতনতা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বুলিংয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ড. জোবাইদা বলেন, আমাদের নিজের ঘর থেকে বুলিং ও মানবাধিকার শিখতে হবে। আমরা নিজের অজান্তেই কাছের মানুষকে হয়রানি করছি। আমরা একে অপরের ঘাড়ে দায়িত্ব দিই। কিন্তু আমরা নিজেরাও অনেক দায়িত্ব পালন করতে পারি না, পালন করতেও চাই না।
তিনি বলেন, গণমাধ্যম মানবাধিকার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চিন্তা বিনিময় করতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাজের জায়গাটা তড়িৎ হয়। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজের সমন্বয় হলে সেটি বেশ কাজে দেবে।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব বলেন, আমরা যখন মানবাধিকারের কথা বলি তখন আমাদের মাথায় কোনো জাত-ধর্ম-বর্ণ থাকে না। মাথায় থাকে শুধু মানুষ। শিক্ষার্থী হিসেবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করে ফেলবে সেটা আমি চাই না। তবে মানবাধিকার বিষয়টি ভালোভাবে জেনে, বুঝে ও তা ধারণ করে যদি এখান থেকে যেতে পারা যায় সেটা আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্রে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। কারণ, আপনাদের এখান থেকেই রাজনীতিবিদ, আমলা, কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক বের হবে। তারা তাদের কর্মক্ষেত্রে গিয়ে যদি মানবাধিকারচর্চা করে তাহলেই কিন্তু মানবাধিকার নিয়ে আর কোনো ঝামেলা হয় না।
তিনি বলেন, দেশে মানবাধিকার বিষয়ে জানাশোনা লোকের অভাব রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে এই সংগঠনটিতে যারা কাজ করছেন তারা মানবাধিকার বিষয়ে জানা ও তথ্যভিত্তিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করবে বলে আশা রাখি। আবেগ বা কোনো মতের প্রতি অনুগত না হয়ে তথ্যনির্ভর ও মানবাধিক সচেতনতার কাজ করতে হবে।
মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মাহবুল হক বলেন, মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করলেই যে সরকারবিরোধী হয়ে যাবে তা নয়। মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনা বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো ধরিয়ে দেওয়া বরং সরকারের জন্য সহায়ক। কিন্তু আমাদের দেশে এটা অনেক সময় উল্টোভাবে দেখা হয়।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা রাসেল মাহমুদ বলেন, মানবাধিকারচর্চা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সমাজে মানবাধিকার বিষয়ে মানবিক মানুষের বিস্তার ঘটাবে। মানবাধিকার সচেতন শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে গিয়ে যদি মানবাধিকারচর্চা করে তাহলেই মানবাধিকার লঙ্ঘন অনেকটা কমে আসবে।
এইচআরভিএইচের সভাপতি আবদুল আওয়াল খান নয়নের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন- সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ওমর কাইয়্যুম, বোরহান উদ্দিন ফয়সাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিদওয়ান ইসলাম দুর্জয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সিনিয়র সদস্য ও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা। সেমিনারে অংশ নেওয়া সদস্যদের জন্য কুইজের আয়োজন করা হয়। এতে পুরস্কার জিতে নেন রবিউল ইসলাম, মাহমুদা আক্তার রিমু ও কাওসার জাহান ইরিন।
আরএসএম/এমকেআর