ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

‘রাজনৈতিক কারণেই পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা হয় না’

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৯:৫৮ পিএম, ১১ আগস্ট ২০২২

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির ডিস্টিংগুইস ফেলো ও প্রথম নির্বাহী পরিচালক। তিনি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এ সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০০৭ সালে তিনি জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এবং ইউএন কার্যালয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অর্থপাচার ও ফেরত আনা প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন জাগো নিউজের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার পাহাড়। অথচ, সরকার কোনো তথ্য চায়নি বলে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত জানিয়ছেন। এই সংকটকালে বিদেশের ব্যাংকে জমা থাকা অথবা পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোন পথ অবলম্বন করতে পারে?

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: বাংলাদেশ বৈশ্বিক পর্যায়ের নানা ফোরাম বা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে নানা দেশকে সহযোগিতা করে।

প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার আসলে চায় কি না? বাংলাদেশ সরকার যদি বাইরে পাচার হয়ে যাওয়া বা আটকে থাকা টাকা ফেরত আনতে চায়, তাহলে আন্তর্জাতিক নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ফেরত আনা সম্ভব।

সরকার চাইলে কার্যকর পদক্ষেণ নিয়ে টাকা ফেরত আনতে পারে, যার প্রমাণ হচ্ছে সিঙ্গাপুর থেকে এক ব্যক্তির পাচারের টাকা ফেরত আনা। এটি একটি আলোচিত ঘটনা এবং সরকার এ ঘটনা থেকে বরাবরই বাহবা নিতে চাইছে।

জাগো নিউজ: তাহলে অন্যদের ক্ষেত্রে সরকার কী চাইছে না?

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: হয়তো অন্যদের বেলায় উৎসাহের ঘাটতি আছে। এটি তো একেবারে পরিষ্কার। সরকার তো ওই ব্যক্তির টাকা ফেরত আনার ক্ষেত্রে আন্তরিক ছিল। রাজনৈতিক ক্রেডিট নিলো। এখন কেন নিচ্ছে না, সেটাও মানুষের কাছে পরিষ্কার।

অর্থপাচার নিয়ে সরকার নানা কথা বলে আসছে। কিন্তু গতকাল সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝতে পারছি, সরকার পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে কোনো চেষ্টা করেনি।

জাগো নিউজ: গণমাধ্যম বা বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান অর্থপাচারের ব্যাপারে চিত্র তুলে ধরলেও সরকার অস্বীকার করে আসছে বারবার। এই জায়গা থেকেই অনীহা কি না?

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সরকারের আগ্রহ নেই। সরকারের আগ্রহ থাকলে অবশ্যই তথ্য সংগ্রহ করতো এবং চলমান প্রক্রিয়া দেখতে পেতাম। তথ্য-উপাত্ত যেটুকু আছে বা প্রকাশিত হয় সেখান থেকেও সরকার দূরত্ব বজায় রেখে চলার চেষ্টা করে।

রাজনৈতিক কারণেই পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা হয় না। এটি অর্থনৈতিক কোনো কারণ বলে আমি মনে করি না।

জাগো নিউজ: তথ্য গোপন রেখেও অর্থ ফেরত আনা সম্ভব কি না?

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: বিদেশি ব্যাংকে টাকা জমা থাকলেই যে তা অবৈধ, এটি মনে করার কোনো কারণ নেই। বৈধ টাকাও হতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই টাকার তিনি ঘোষণা দিয়েছেন কি না এবং আয়কর নথিতে আছে কি না? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি।

বিদেশি ব্যাংকে টাকা জমা আছে কিন্তু আয়কর নথিতে উল্লেখ নেই, এমনটি হলে তো সরকার সহজেই ব্যবস্থা নিতে পারে। ব্যবস্থা নেওয়ার অনেক আইন আছে।

আইনের ঘাটতি বা তথ্য-উপাত্ত নেই বলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, ব্যাপারটি এমন নয়। সরকার রাজনৈতিক কারণে ব্যবস্থা নেয় না। আমি আবারও বলছি, সরকার টাকা ফেরত আনার নজির স্থাপন করেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে থেকে যেমন টাকা পাচার হয়ে গেছে তেমনি আরও দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে গেছে। আফ্রিকার বহু দেশ থেকে টাকা পাচার হয়। কিন্তু তারা অল্প অল্প করে হলেও টাকা ফেরত এনেছে। আমরা পারছি না রাজনৈতিক অনীহার কারণে। যারা পাচারের সঙ্গে জড়িত তাদের নাম প্রকাশ হলে রাজনৈতিক পরাজয় হতে পারে, এমন ধারণা থেকেই হয়তো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। রাজনৈতিক কারণেই অর্থপাচারকারীদের সুরক্ষা দেওয়া হয়।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী ভূমিকা রাখতে পারে?

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: যারা অর্থপাচার করে আসছেন, তাদের অনেকেই হয়তো ঋণখেলাপি আছেন। ঋণ নিয়ে সে টাকা বাইরে নিয়ে গেছে। পিকে হালদারের ঘটনা তো সামনে আছেই। ঋণখেলাপির ব্যাপারে ব্যাংকগুলোও তো সহায়তা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কেউ কেউ বলছে, ১০ বা ১৫ শতাংশ কর দিয়ে এই অর্থ ফেরত আনা হোক। উদ্ভূত পরিহাসের প্রস্তাব এটি। যে ব্যক্তি টাকা পাচার করে সেই ব্যক্তি কর দিয়ে আবার টাকা ফেরত আনবে এটি চিন্তা করাও বোকামি। সরকার আয়কর নথি দেখেই সব ব্যবস্থা নিতে পারে।

এএসএস/এএসএ/এএসএম