ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়

অভিযোগ আসছে কম, বেশিরভাগই তফসিলবহির্ভূত

সাইফুল হক মিঠু | প্রকাশিত: ০৮:১২ এএম, ০৮ আগস্ট ২০২২

সারাদেশে দুর্নীতি দমন কার্যক্রম বিস্তৃত ও অনিয়মবিরোধী কার্যক্রম গতিশীল করতে গত ৩ জুলাই নতুন ১২ জেলায় সমন্বিত কার্যালয় চালু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০ দিন পার হলেও এসব কার্যালয়ে অভিযোগ আসছে কম। কোথাও অভিযোগ এসেছে মাত্র দুটি। এছাড়া তফসিলবহির্ভূত অভিযোগও আসছে।

কার্যক্রম শুরু হওয়া জেলাগুলোর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভুক্তভোগীরা আসছেন, অভিযোগ করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইছেন। তবে ব্যক্তিগত বিরোধ কিংবা তফসিলবহির্ভূত অভিযোগ জমা করছেন। নতুন কার্যালয়ের সবকিছু গোছাতে ও ঈদের ছুটিতে কাজে সামান্য স্থবিরতা এসেছে। এখন তারা মাঠে নামছেন, এনফোর্সমেন্টের অভিযানও জোরদার হচ্ছে।

চলতি মাসের শুরুতে যে ১২ জেলায় দুদকের কার্যালয়গুলো উদ্বোধন হয় তার মধ্যে ৯টি কার্যালয় দুটি করে জেলার সমন্বিত জেলা কার্যালয় হিসেবে কাজ করছে। এগুলো হলো— নারায়ণগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ), গাজীপুর (গাজীপুর ও নরসিংদী), জামালপুর (জামালপুর ও শেরপুর), নওগাঁ (নওগাঁ ও জয়পুরহাট), কুড়িগ্রাম (কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট), চাঁদপুর (চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর), বাগেরহাট (বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা), পিরোজপুর (পিরোজপুর ও ঝালকাঠি) ও ঠাকুরগাঁও (ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়)।

অন্যদিকে ঝিনাইদহ কার্যালয়টি ঝিনাইদহ, মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গা— এই তিন জেলার সমন্বিত জেলা কার্যালয় হিসেবে কাজ করবে। গোপালগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে দুদকের নতুন দুটি কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়েছে।

জামালপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মলয় কুমার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত এখানে মাত্র দুটি অভিযোগ এসেছে। এর ভেতরে একটা অভিযোগ বেসরকারি স্কুল সম্পর্কিত। এটা আমাদের শিডিউলে পড়ে না। ছুটি শেষে অফিস শুরু হয়েছে। ঈদের ছুটি গেলো। আগের সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে কিছু ফাইল আসবে বা আসছে। পুরোপুরি যে আমরা মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে পেরেছি তা কিন্তু নয়। মানুষ জানছে এখানে কোথায় অফিস, কীভাবে অভিযোগ জানাতে হয়।’

গোপালগঞ্জের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সিফাত উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা মোটামুটি ১২টার মতো অভিযোগ পেয়েছি। যাচাই-বাছাই কমিটি আছে। মাসে একদিন আমরা সেই অভিযোগগুলো নিয়ে বসি, সেগুলো যাচাই-বাছাই করি। এখনো অভিযোগ নিয়ে বসিনি।’

শিডিউলবহির্ভূত অভিযোগও আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতারণা নিয়ে একটা অভিযোগ এসেছে। একটা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগের জন্য ২৭ জন মিলে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছে এক দালালকে। একটা বিষয়ে, ভুক্তভোগীরা টাকাটা এক দালালকে দিয়েছে। এটা আমাদের তফসিলভুক্ত নয়। তারপরও প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে সেই দালাল। সেটা আমাদের দেখার বিষয়। আমরা কাজ করছি। যাচাই-বাছাই করে অভিযোগগুলো ঢাকায় পাঠানো হবে, সেখান থেকে সিদ্ধান্ত হবে।’

অন্যদিকে গাজীপুরে জমি-জমা সংক্রান্ত অভিযোগ আসছে। তার বেশিরভাগই তফসিলবহির্ভূত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

গাজীপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক মোজাহার আলী সরদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘কার্যালয়গুলোতে মানুষ আসছে। বেশিরভাগই ব্যক্তিগত জমিজমা সংক্রান্ত। এর জমিও নিয়েছে, দখল করেছে-এসব অভিযোগই বেশি। আমাদের শিডিউল অনুযায়ী খুব একটা অভিযোগ আসছে না। তবে মানুষ অভিযোগ করার নিয়ম-কানুন জানছে, শিডিউলভুক্ত অভিযুক্ত আসবে। সরকারি কোনো ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে না।’

কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ কার্যালয়েরই অবকাঠামো ও ফার্নিচার সম্পূর্ণ হয়েছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে মিলছে বেশ সাড়া। কোনো দিক থেকে চাপ বা প্রভাব প্রয়োগ করা হচ্ছে না।

অন্যদিকে কার্যালয়গুলোর মাধ্যমে দুদকের কাজে গতি বাড়বে বলে জানিয়েছেন দুদক সংশ্লিষ্টরা। কার্যালয়গুলোতে অভিযোগও বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।

দুদক কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক বলেন, নতুন কার্যালয়গুলো হওয়ার ফলে দুদকের কাজের গতি বাড়বে। আগে তিন-চারটা জেলার মানুষকে দূরের একটি কার্যালয়ে আসতে হতো। এখন আর সেটা হচ্ছে না। মানুষ সহজে অভিযোগ করতে পারছেন। মানুষের দোরগোড়ায় দুদকের সেবা পৌঁছে গেছে।

১৯৫৭ সালে দুর্নীতি দমন ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হয়। পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪ জেলায় ব্যুরো অফিস স্থাপন করা হয়। পরে নানা কারণে স্থবির হয়ে পড়ে ব্যুরোর কার্যক্রম।

অভিযোগ আসছে কম, বেশিরভাগই তফসিলবহির্ভূত

দুদক কার্যালয়ের ফাইল ছবি

২০০৪ সালে জাতীয় সংসদে দুদক সংক্রান্ত আইন (২০০৪ সালের ৫নং আইন) পাস হয়। আইনের মাধ্যমে সেই বছর সৃষ্টি হয় স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিলুপ্ত হয় দুর্নীতি দমন ব্যুরো।

যদিও তখন ৬৪ জেলায় ব্যুরোর কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। কমিশন গঠনের পর ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৭ সালে দুদক সেভাবে কোনো কাজই করতে পারেনি। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার জেলা অফিস বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে ওই বছরই দেশের ২২ জেলায় সমন্বিত জেলা কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি কক্সবাজারে (কক্সবাজার ও বান্দরবান সমন্বিত জেলা কার্যালয়) ও ৩০ মার্চ মাদারীপুরে (মাদারীপুর ও শরীয়তপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়) চালু হয় দুদকের নতুন দুটি কার্যালয়। আর জুলাইয়ের শুরুতে নতুন ১২টি কার্যালয় উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশে দুদকের মোট কার্যালয় সংখ্যা এখন ৩৬টিতে দাঁড়িয়েছে।

যেসব অভিযোগ নিয়ে মানুষ দুদকে যেতে পারবেন সেগুলোই দুদক আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ। এ অপরাধগুলো হলো:

>>সরকারি কর্তব্য পালনের সময় সরকারি কর্মচারী/ব্যাংকার/সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক উৎকোচ (ঘুস/উপঢৌকন) গ্রহণ।

অভিযোগ আসছে কম, বেশিরভাগই তফসিলবহির্ভূত

দুদকের একটি সমন্বিত জেলা কার্যালয়-ছবি সংগৃহীত

>>সরকারি কর্মচারী/সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি বা অন্য যে কোনো দায়িত্বরত ব্যক্তির নামে বেনামে সম্পদ অর্জন।

>>সরকারি অর্থ/সম্পত্তি আত্মসাৎ বা ক্ষতিসাধন।

>> সরকারি কর্মচারী উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা।

>> সরকারি কর্মচারী কর্তৃক জ্ঞাতসারে কোনো অপরাধীকে রক্ষার চেষ্টা।

অভিযোগ আসছে কম, বেশিরভাগই তফসিলবহির্ভূত

কার্যালয়গুলোর মাধ্যমে কাজে গতির আশা সংশ্লিষ্টদের-ছবি সংগৃহীত

>>কোনো ব্যক্তির ক্ষতি সাধনের জন্য সরকারি কর্মচারী কর্তৃক আইন লঙ্ঘন।

>> মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর অধীন সংঘটিত অপরাধসমূহ এবং

>>সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক জাল-জালিয়াতি এবং প্রতারণা ইত্যাদি।

এসএম/এসএইচএস/জেআইএম