ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ভুক্তভোগী ছাত্রী ও এসআই রতনের বক্তব্যে বিস্তর গড়মিল

প্রকাশিত: ০৪:৪৭ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আদাবর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রতন কুমার হালদারের বিরুদ্ধে হয়রানি ও নিপীড়নের অভিযোগকারী ছাত্রী ও অভিযুক্ত এসআইয়ের বক্তব্যে গড়মিল পেয়েছে তদন্ত কমিটি। পৌনে এক ঘণ্টা ধরে ওই ছাত্রীকে রাস্তায় আটকে নিপীড়ন করার অভিযোগ করা হলেও এসআই রতন তা অস্বীকার করেছেন। রয়েছে ঘটনার সত্য মিথ্যে নিয়ে নানা প্রশ্ন।

তবে ‘বিস্ফোরক আইনে চার্জশিট দেয়া মামলার আসামির স্ত্রীকে রাস্তায় আটকে কথা বলতে কেন গেছেন এসআই রতন’ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এমন যুক্তিতেই ফেঁসে যেতে পারেন তিনি।

ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আশা ইউনির্ভাসিটির অভিযোগকারী ওই ছাত্রীর কথা ও ঘটনায় বৈপরীত্য পাওয়া গেছে। সেদিক থেকে খালাসও পেতে পারেন এসআই রতন। শুধু তাই নয়, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যেও এসআই নির্দোষ।

স্বামীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়ায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ফাঁসানো কিংবা আক্রোশের মনোভাব থেকেও অভিযোগ করে থাকতে পারে ওই ছাত্রী। তদন্তে এমন আভাসও মিলেছে তদন্তকারী সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে।

এর আগে, গত রোববার দুপুর সোয়া ২টার দিকে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদের সামনে রাস্তায় আশা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ফারহানা আক্তারকে হেনস্তা ও নিপীড়নের চেষ্টা চালানো হয় বলে তিনি অভিযোগ তোলেন।


ফারহানা সাংবাদিকদের জানান, ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে বই কিনতে শিয়া মসজিদের দিকে রিকশায় যাচ্ছিলেন তিনি। মসজিদ সংলগ্ন একটি ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানের সামনে তাকে আটকায় আদাবর থানার এসআই রতন কুমারসহ পুলিশের তিন সদস্য।

রিকশা থেকে জোর করে নামিয়ে দোকানটির ভেতরের নেয়া হয়। সেখানে ইয়াবা আছে বলে ব্যাগ চেক করার কথা বলে। এরপর দেয়া হয় অনৈতিক কাজের প্রস্তাব।

ভুক্তভোগী ফারহানা আক্তার বলেন, ঘটনার পরপরই থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করি। আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে অভিযোগকারী ওই ছাত্রীর বক্তব্যে স্বামী সজিব আহমেদ রানা যে বিস্ফোরক আইনের করা মামলার চার্জশিটভুক্ত ৮নং আসামি তা একবারও উঠে আসেনি।

অভিযুক্ত এসআই রতন কুমার হালদার জাগো নিউজকে বলেন, ওই মেয়ের ভুল তথ্যের কারণে অনেকবার সজিবকে গ্রেফতার করা যায়নি। সজিব বিস্ফোরক আইনে করা মামলার ৮নং আসামি। সজিব আদাবর থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদকও।


এসআই বলেন, ‘গতকাল আমার ডিউটি ছিল শিয়া মসজিদ এলাকায়। সেখানে রিকশায় যেতে দেখা হয় ওই মেয়ের আপুর সঙ্গে। সজিব এখন কোথায় জানতে চাইলেই রেগে যান তিনি। আমাকে বলেন, “ওহ আপনি? আপনার কারণে আমার সংসার ভাঙছে। আপনি মিথ্যে মামলায় জেল খাটাইছেন রানাকে। আপনি আমার স্বামীকে জেল খাটাইছেন না? আপানাকেও আমি দেখে নিবো।”

“আমার সঙ্গে থাকা এক কনস্টেবল ও এক এএসআই আমাকে ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসেন। শ্রেফ দেড়-দুই মিনিটের কথোপকথনকে তিনি ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করেছেন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে।”

এসআই রতন আরও বলেন, আদাবর থানার অনেক মানুষ আমাকে চেনেন। সুষ্ঠু তদন্ত আশা করছি। সুষ্ঠু তদন্ত হলে আমি অবশ্যই অভিযোগ থেকে খালাস পাবো।

অন্যদিকে ঘটনার পর আজ (সোমবার) বিকেলে ঘটনাস্থল শিয়া মসজিদ সংলগ্ন ওই ইলেক্ট্রনিক্স দোকানে যাওয়া হলে কয়েকজনের বক্তব্যে উঠে এসেছে এসআই নির্দোষের কথা। আবুল হোসেন নামে এক ফ্লেক্সি দোকানদার জানান, ‘ঘটনা ছোট্ট, পরে ফাটিয়ে বড় করণ হইছে।’

রবি রেফ্রিজারেশন ও ইলেক্ট্রনিক্স ওয়ার্কসপের মালিক রবি চন্দ্র মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ওই মাইয়ার লগে স্যার (এসআই) গতকাল ২/৩ মিনিট কথা কইছে। বাইরে কিল্লাই কথাবার্তা হইছে তা বলতে পারতাছি না। আজ পুলিশের বড় তিন স্যার আইসা কথা শুইনা গেছে।”


তবে জাপান গার্ডেন সিটি ইলেক্ট্রনিক্স দোকানের মালিক হেমন্ত জানান, ঘটনা জানি না। তবে মেয়েকে খুব ফাপড় মাইরা কথা কইতে দেখছি। আর কিচ্ছু জানি না, এমনটাই বড় স্যারদের জানাইছি।

আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শাহিনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এসআই রতন আদাবর থানার সবচেয়ে চৌকস অফিসার। আমি নিজেও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের বক্তব্যে অভিযোগের সত্যতা আমি পাইনি।

আমিনুল নামে এক এসআই জাগো নিউজকে বলেন, অভিযোগকারী ওই মেয়ের স্বামী সজিব যুবদলের সঙ্গে জড়িত। স্বামী বিস্ফোরক মামলায় রতনের হাতে গ্রেফতারের পর জেল খেটেছেন। জামিনে বেড়িয়ে আসলেও পলাতক রয়েছেন। স্বামীর ঘটনায় আক্রোশে স্ত্রী ফারজানা রতনকে ফাসানোর চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন তিনি।

এঘটনার তদন্তে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন কিরেছে তেজগাঁও বিভাগ পুলিশ। এডিসি হাবিবুন্নবী আনিছুর রশিদ এবং সহকারী কমিশনার হাফিজ আল ফারুক ঘটনার তদন্ত করছেন।


এব্যাপারে তদন্ত কমিটির এক সদস্য নিজের পরিচয় গোপন করার শর্তে বলেন, তদন্তে এসআই ও ভুক্তভোগীর অভিযোগের ফারাক রয়েছে। এসআই-এর সঙ্গে কথা হয়েছে এটা সত্যি। তবে অভিযোগকারীর যা অভিযোগ তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

‘সময়, কতোক্ষণ কথা হয়েছে, কী কথা হয়েছে এতে একদমই মিল নেই। তাছাড়া প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যেও মেয়ের কথা মনগড়া মনে হয়েছে। অভিযোগকারী এখনো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’ তবে নিবিড় তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে এব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এব্যাপারে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, বিস্ফোরক মামলার আসামি সজিবের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন এসআই রতন। তার কাজ শেষ। আদালত দেখার পালা এখন। কিন্তু ওই মেয়েকে রাস্তায় আটকে কথা বলতে যাওয়াটা মোটেও সমীচীন হয়নি। এমন যুক্তিতেই রতনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।


কারণ হিসেবে ডিসি বলেন, আমরা নারী ও শিশুদের বিষয়গুলো সংবেদনশীল হিসেবে দেখি এবং গুরুত্ব সহকারে এতদসংক্রান্ত অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে থাকি। এদিক থেকেই অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন ও ওই এসআইকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তদন্তে এসআই নির্দোষ হলে সাসপেন্ডেরে আদেশ প্রত্যাহার করা হবে।

আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলেও জানান তিনি।

জেইউ/বিএ

আরও পড়ুন