বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নির্দেশনা মানতে অনীহা
রাত সাড়ে ৯টা। রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় দেখা গেলো একটি ভবন। নাম খাঁন মঞ্জিল। পুরো ভবনই রঙিন আলোয় সাজানো। ঝলমল করছে বাড়িটি। শুধু তাই নয়, ভবনে প্রবেশের গলিটিও সাজানো হয়েছে রঙিন বাতিতে।
ভেতরে চলছে বিয়ের আনন্দ। এসময় সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এক ব্যক্তি উঠে এসে বলেন, ‘ভাই, বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। একটা রাতই তো। সারাবছর তো আর জ্বলবে না। আজ বিয়ের অনুষ্ঠান। প্লিজ আতঙ্ক ছড়াইয়েন না।’ বৃহস্পতিবারের (২৩ জুলাই) ঘটনা এটি।
শুধু যে বিয়ে বাড়িতেই এমন আলোকসজ্জা তা কিন্তু নয়, দোকানপাট ও বিভিন্ন মার্কেটেও এমনটি দেখা যায়। রাত ৮টার পরও বাতি জ্বলে কোনো কোনো মার্কেটে।
অথচ দেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সবশেষ ঘোষণা দিয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংও হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বিদ্যুৎ অপচয় না করতে জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। সরকারি সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরেও বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জ্বালানি তেলের সংকটের কারণে নেওয়া হয়েছে এসব সিদ্ধান্ত। যাতে ভবিষ্যতে দেশে যেন বড় ধরনের কোনো সংকট তৈরি না হয়।
তবে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। সরকারি নির্দেশনা মানতে যেন কারও কারও অনীহা। যেমনটি দেখা গেলো খাঁন মঞ্জিল ভবনে। বিয়ের আলোকসজ্জায় যে বিদ্যুৎ অপচয় হয়, তা সাশ্রয় করতেই সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ভবনে দেখা গেলো আলোকসজ্জা করতে।
অন্যদিকে দোকানপাট, শপিংমল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করতে দেওয়া হয়েছে কড়া নির্দেশনা। কিন্তু রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ঘণ্টাখানেক পর দোকান বন্ধ করতে। মার্কেটের মূল ফটক বন্ধ করে ভেতরে জ্বলতে থাকে আলো।
শুধু ভবন নয়, গলিও সাজানো হয়েছে রঙিন বাতিতে
রাজধানীর নিউমার্কেটে দেখা যায়, ‘মেন স্টাইল’ নামে একটি দোকানের কর্মচারীরা রাত সাড়ে ৮টার দিকে পোশাক গোছগাছ করছেন। অথচ তাদের রাত ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধ করার কথা।
আকাশ নামে ওই দোকানের বিক্রয়কর্মী জাগো নিউজকে বলেন, ‘মার্কেট বন্ধ হইছে আগেই। গোছগাছ করছি আরকি।’
গোছগাছ করতে সবগুলো বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হয় কি না প্রশ্ন করলে তিনি হেসে বলেন, ‘ভাই, বেশিক্ষণ নয়। বন্ধ করে চইলা যাবো।’
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুরো ভবন আলোকসজ্জা করা হয়েছে
এদিকে উত্তর বাড্ডা ও শাহজাদপুর এলাকায় দেখা যায়, রাত ৮টার পর বেশ কয়েকটি স্টিলের দোকানের অর্ধেক সাটার নামিয়ে কর্মচারীদের ভেতরে বসে থাকতে।
রাত ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধ করেননি জানতে চাইলে ‘একলাস স্টিলে’র এক বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘মাল আইবো ভাই। এজন্য অপেক্ষা করতাছি।’
এর মধ্যে আবার এমনও দেখা গেছে, নির্ধারিত সময়ে দোকান বন্ধ না করায় বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। সেসব অভিযানে জরিমানাও করা হয়েছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, বিদ্যুতের অপচয় রোধে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু অভিযান পরিচালনা করলেই যে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ হবে তা কিন্তু নয়। এজন্য জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। সচেতন হতে হবে তাদের।
বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক ডিন ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এজাজ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ অপচয় রোধে সরকারের যে নির্দেশনা এসেছে, তা জনগণকে অবশ্যই মানতে হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ করা যাবে না। এটা আপদকালীন সময়। এসময় নিজেদের একটু সাশ্রয়ী হতে হবে।
লোডশেডিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি আগেও লোডশেডিংয়ের কথা বলেছি। যখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গ আসে, তখনও বলেছিলাম দাম না বাড়িয়ে বরং একটু সময় নির্ধারণ করে লোডশেডিং করলে মানুষ অবশ্যই মানবে।
এমআইএস/জেডএইচ/এসএইচএস/জেআইএম