ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে দুঃসহ অভিজ্ঞতা যাত্রীদের

আসিফ আজিজ | প্রকাশিত: ০৮:৩৯ পিএম, ২৩ জুলাই ২০২২

আসামের গৌহাটি থেকে কলকাতা হয়ে কানেক্টিং ফ্লাইটে গন্তব্য ঢাকা। পাঁচ ঘণ্টার ট্রানজিটে ক্লান্ত টিমের সবাই। কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৩৯৬ ফ্লাইটটি ছাড়ার কথা স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে। এর ঠিক তিনদিন আগে একই সময়ের ফ্লাইটে বিমানের বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজের মধ্যে রানওয়েতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটকে ছিলেন যাত্রীরা। তাই এদিন কী হয় সেটা নিয়ে চলছিল জোর জল্পনা।

ঢাকা থেকে ফ্লাইটটি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলো যথাসময়ে। ফিরতি ফ্লাইটে আমাদের যাত্রা। একটি ফ্লাইট শেষে সাধারণত উড়োজাহাজটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তবেই আবার যাত্রী তোলে। বিমান করবে কি না সেটা নিয়ে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা গেলো। যাত্রীরা নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই উড়োজাহাজে প্রবেশের ঘোষণা এলো। ভেতরে ঢুকেই টের পাওয়া গেলো ভ্যাপসা গরম। আমাদের তিনজনের আসন সবার শেষ সারিতে। উড়োজাহাজে সাধারণত শেষের দিক থেকে আসন হিসাব করে আগে ওঠানো হয় নানান সুবিধার কথা চিন্তা করে। এই তিনটি আসন অনেক সময় খালি রাখা হয়। কারণ ঠিকঠাক বসা যায় না।

একে একে পুরো ফ্লাইট ভরে গেলো। বাড়তে থাকলো গরম। এসি চালু হয়নি তখনও। একজন কেবিন ক্রুর কাছে জানতে চাইলে বললেন, চলতে শুরু করলে এসি চালু হবে, একটু অপেক্ষা করুন। এসি নিয়ে হইচই শুরু হলো প্রথম থেকেই। এর মধ্যে দেখা দিলো দুটি বিপত্তি। প্রথমত, শেষ দিকে দুই পাশে যে দুটি লাগেজ কেবিন থাকে সেখানে যাত্রীরা লাগেজ ভরে ফেললেন। জায়গার অভাবে একজন লাগেজ রাখতেই পারলেন না। তাকে বলা হলো সামনে গিয়ে রেখে আসতে। ওই নারী যাত্রী সামনে গিয়ে লাগেজ উপরে তুলতে সাহায্য প্রার্থনা করলে কেবিন ক্রু কোনো রকম সহযোগিতা না করে আপনারটা আপনি তোলেন বলে এড়িয়ে যান।

সুকন্যা আমীর নামে ওই যাত্রী জাগো নিউজকে বলেন, বিমান বাংলাদেশের ক্রু হিসেবে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা যাত্রীদের প্রতি একেবারেই কেয়ারিং না। যখন আমি হ্যান্ড লাগেজ নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম তখন প্রায় লাগেজ কেবিনগুলো বুকড। ক্রুদের মধ্যে একজনকে লাগেজ রাখার জন্য অনুরোধ করলাম, উত্তরে তিনি জানান, আমার লাগেজ রাখতে তিনি পারবেন না, এমনকি ব্যবস্থাও করে দিতে পারবেন না। অতঃপর আমাকেই লাগেজ রাখতে হয় কোনোরকম।

‘এছাড়া ভোগান্তির শেষ ছিল না। প্রচণ্ড গরম, এসি বন্ধ, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। প্রথম দিকে বোর্ডিং পাস নিলেও শেষে সিট পাওয়া, তারপর আবার ফ্লাইট ডিলে। এমন অব্যবস্থাপনা যেন তাদের দৈনন্দিন ব্যাপার, যেটা একজন যাত্রী হিসেবে কখনো কাম্য নয়।’

এরই মধ্যে একজন ক্রু এসে শেষের দুটি লাগেজ কেবিন থেকে যাত্রীদের লাগেজ নামাতে বললেন, জানতে চাইলেন এখানে রেখেছেন কেন। সেখানে যে লাগেজ রাখা যাবে না সেটা কেউ বলেনি কিংবা লেখা নেই। যাত্রীদের জানার কথাও নয়। তাদের বলার ধরন মোটেও ভালো ছিল না। যাত্রীরা সবাই অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। লাগেজ কেবিনগুলোও ছিল সব অপরিচ্ছন্ন।

বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে দুঃসহ অভিজ্ঞতা যাত্রীদের

অপরিষ্কার লাগেজ কেবিন

আসনে বসার সময় দেখা গেলো সেখানে একটি করে ওয়েট ওয়াইপস রাখা (শেষের তিনটি সিটে সেটিও ছিল না। মানে ক্রুরাও হয়তো ধরে নিয়েছিলেন এখানে যাত্রী বসবে না)। বিষয়টি বড়ই দৃষ্টিকটূ। ইন ফ্লাইটে কিছু দিলে সেটা সাধারণত কেবিন ক্রুরা সুন্দর করে যাত্রীর কাছে পৌঁছে দেন। সেটাও দেখা গেলো না। বসার সময় পা রাখতে গিয়েও বিপত্তি। পা স্বাচ্ছন্দ্যে রাখা যাচ্ছিল না। এর মধ্যে সামনের যাত্রী আসন হেলিয়ে একটু আরাম করতে চাইলেও পেছনের যাত্রীর আপত্তিতে তা সম্ভব হলো না। মানে পা তো রাখা যাচ্ছিলই না, সিটও চলে আসছিল প্রায় মুখের কাছে।

করোনার পর থেকে প্রতিটি ফ্লাইটে জীবাণুমুক্তকরণ এক ধরনের গ্যাস প্রায় ২০-৩০ মিনিট ছাড়া হয়। অনেকটা ধোঁয়াচ্ছন্ন হয় এসময়। গত কয়েকদিনের ভারত ভ্রমণে সবগুলো ফ্লাইটে দেখা যায় এ চিত্র। কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থায় সেটাও অনুস্থিত দেখা গেলো। ভ্যাপসা গরমের মধ্যে ফ্লাইট ছাড়লো ২৫ মিনিট দেরিতে। তবে এসির দেখা মিললো না। মোবাইল সুইচ ফ্লাইট মোডে রাখা, সব ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকাসহ কিছু ঘোষণা শুরুতে দেওয়া হয়। সেটাও শোনা গেলো না।

যাই হোক আকাশে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর স্ন্যাক্স এলো। সেটাও যথেষ্ট মানসম্পন্ন ছিল না। ইন্টারন্যাশনাল একটি ফ্লাইটের খাবার যতটুকুই দেওয়া হোক সেটা আরও মানসম্পন্ন হওয়া উচিত। অসঙ্গতি পিছু ছাড়ছিল না পুরো ফ্লাইটে। তীব্র গরমে অনেক যাত্রী বারবার পানি চাচ্ছিলেন। তাতেও নাখোশ হন কেবিন ক্রুরা। কেউ কেউ কাগজকে পাখা বানিয়ে বাতাস খাচ্ছিলেন। এমন একজন যাত্রী নুরুল ইসলাম হাসিব জাগো নিউজকে বলেন, গরমে কাগজকে পাখা বানিয়ে বাতাস খেতে হচ্ছে। এসি চলে না। টয়লেটে গিয়ে দেখি ফ্লাশটা ভাঙা। কোনো রক্ষণাবেক্ষণ নেই বোঝাই যায়। ফ্লাইটটি ফুল। মানে এটি লাভজনক একটি রুট। একজন কেবিন ক্রুকে দেখলাম যাত্রীদের সঙ্গে তর্কে জড়ালেন। নেমে বেল্টে এসে সেই ক্রুসহ কয়েকজন ওই যাত্রীদের কাছে এলেন। ভাবলাম হয়তো স্যরি বললেন। কিন্তু দেখা গেলো সেখানেও তারা রীতিমতো মাস্তানি মুডে। এত অব্যবস্থাপনা, অপেশাদারত্ব থাকার কথা নয়। বিমানের সার্ভিস হবে আন্তর্জাতিক মানের। এমন সার্ভিস অকল্পনীয়।

বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে দুঃসহ অভিজ্ঞতা যাত্রীদের

সোজা হয়ে বসেও ঠিকঠাক রাখা যায় না পা

সামনের একটি যাত্রীর সিটের হাতলে সমস্যা ছিল। তিনি বলেন, আমি যে সিটে বসে আছি সেটার হাতলের উপরের লেয়ারটা নেই। হাত রাখতে সমস্যা হচ্ছিল। পরে কেবিন ক্রুকে জানালে তিনি একটি কম্বল এনে দেন।

সার্বিক অবস্থা থেকে যাত্রীরা বারবার ঢাকার সড়কে চলা লোকাল বাস আট নম্বর ও তুরাগের সঙ্গে বিমানের সার্ভিসের তুলনা করছিলেন। স্ন্যাক্স দেওয়ার সময় ও বর্জ্য পরিষ্কারের সময়ও ক্রুদের সার্ভিস ভালো ছিল না। খাবারের ট্রে নেওয়ার সময় কয়েকজনের পায়ে লাগিয়ে ব্যথা দিয়েছেন। ময়লার পলিব্যাগ যখন টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেটার সঙ্গেও যাত্রীরা তুলনা করছিলেন ময়লা কুড়ানিদের সঙ্গে। যারা নিয়মিত ট্রাভেল করেন তারা জানেন এ কাজটিরও এক ধরনের সৌন্দর্য আছে।

যাত্রীরা ঢাকা পৌঁছে বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেন। এতে জানান তিক্ত অভিজ্ঞতা ও কেবিন ক্রুদের অসৌজন্যমূলক ব্যবহারের কথা। পরে শনিবার (২৩ জুলাই) কর্তৃপক্ষ চার কেবিন ক্রুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে

এএসএ/জেআইএম