ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

দুর্নীতিতে বিশ্বে ১৩তম বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:১৩ এএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশে এখনও দুর্নীতি কমেনি বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। ২০১৪ সালের ন্যায় সদ্য বিদায়ী ২০১৫ সালেও দুর্নীতির বৈশ্বিক সূচকে একই অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এবছর ১৬৮ দেশের মধ্যে এ দেশের অবস্থান ১৩৯তম। ২০১৪ সালে ১৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৫তম। দুর্নীতির নিম্নমুখী ক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। গত বছর ছিল ১৪তম। বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা এখনও উদ্বেগজনক বলেও জানিয়েছে টিআই।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয় ভুটানে। একমাত্র আফগানিস্তান ছাড়া এ অঞ্চলের সবগুলো দেশেই বাংলাদেশের তুলনায় কম দুর্নীতি হয়। এছাড়া বিশ্বে সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয় ডেনমার্কে আর বেশি হয় সোমালিয়ায়। বুধবার সকালে দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০১৫ এর বৈশ্বিক প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি এসব তথ্য জানায়।

বুধবার বার্লিন থেকে টিআই’র মূল প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি ঢাকার ধামন্ডিতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন ও জরিপ এবং ‘বিশেষজ্ঞ মতামতের’ ভিত্তিতে টিআই কেন্দ্রীয়ভাবে এ সূচক তৈরি করে।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম. হাফিজউদ্দিন খান ও উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবছর বাংলাদেশের সঙ্গে একই স্কোর প্রাপ্ত অন্য পাঁচটি দেশ হল: গিনি, লাওস, কেনিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি ও উগান্ডা। যুদ্ধবিধস্ত দেশ সুমালিয়া এবার নিয়ে পর পর ৯ বার দুর্নীতিতে ‘চ্যাম্পিয়ান’ হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্থ দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে উত্তর কোরিয়া, এরপরই রয়েছে আফগানিস্তান, দক্ষিন সুদান, এঙ্গোলা, লিবিয়া ও ইরাকের স্থান। আর সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্থ দেশের মধ্যে ডেনমার্কের পরই রয়েছে ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কানাডা, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য।

বিশ্বের ১৬৮টি দেশ ও অঞ্চলে ২০১৫ সালের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা এই সূচকে ২৫ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভাল থেকে খারাপ) ১৩৯ নম্বরে। আর উল্টোভাবে হিসেব করলে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় এবার বাংলাদেশ রয়েছে ১৩তম স্থানে।

আগের বছর ১৭৫টি দেশ ও অঞ্চলের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত এই সূচকে একই স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভাল থেকে খারাপ) ছিল ১৪৫ নম্বরে। আর উল্টোভাবে হিসেব করলে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় ছিল ১৪তম অবস্থানে।

১০০ ভিত্তির এই সূচকে শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসনের দেশ হিসাবে বিবেচনা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।

গড়ে দশভিত্তিক সূচকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরা হলেও ২০১২ সাল থেকে ১০০ ভিত্তির এই সূচক প্রকাশ করা হচ্ছে।  পুরনো প্রতিবেদনগুলো থেকে দেখা যায়- ২০১৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৭, তার আগের বছর ছিল ২৬।

এসময় ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘স্কোর অপরিবর্তিত থাকলেও অবস্থান এক ধাপ কমেছে। বাংলাদেশের এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে সংসদ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরো কার্যকর করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে একথা বলা যাবে না। তবে আরো প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি।’  

তিনি আরো বলেন, ‘উচ্চক্রম অনুযায়ী ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ছয় ধাপ অগ্রগতি কিছুটা সন্তোষজনক মনে হতে পারে, যদিও বাস্তবে তা হয়েছে যে সাতটি দেশ এবার জরিপের আওতাভুক্ত হয়নি তারা সবসময় বাংলাদেশের তুলনায় বেশি স্কোর পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সমূহের মধ্যে এবারো বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশ এবার ২০১৪ সালের ১৪তম অবস্থানের একধাপ নিচে ১৩তম, যা ২০১৩ সালের তুলনায় ৩ ধাপ নিচে ও ২ পয়েন্ট কম। অর্থাৎ সার্বিক বিবেচনায় এবারো আমাদের অগ্রগতি হলো না।’

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘যেসব কারণে আমাদের অগ্রগতি হচ্ছে না, তার মধ্যে রয়েছে, সরকার ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু দুর্নীতি বিরোধী উদ্যোগ স্বত্ত্বেও প্রয়োগ ও চর্চার ঘাটতির ফলে প্রকটতর হয়েছে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ । দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান দুদকের কার্যকরতা ও স্বাধীনতা খর্ব করার অপপ্রয়াস যেমন অব্যাহত রয়েছে তেমনি দুদকের নিজস্ব সক্রিয়তা, দৃঢ়তা ও নিরপেক্ষতার ঘাটতি রয়েছে চলমান। এছাড়াও সরকারের নীতি কাঠামো দুর্নীতি সহায়ক, দুর্নীতিতে লাভবান ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয়দানকারী মহলের করাভূত হওয়ার ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে।’

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘সিপিআই র্যাংকিংয়ে আমাদের স্কোর গতবারের চেয়ে কমে না যাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পেলেও আমাদের কিন্তু বসে থাকলে চলবে না। কারণ আমরা এখনও গড় যে স্কোর তার কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারিনি। তাছাড়া সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়ন হলেও উন্নয়নের সঙ্গে আমাদের দেখতে হবে যে দুর্নীতি কমছে কিনা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা। গণতন্ত্রের বিনিময়ে উন্নয়ন কতটা গ্রহণযোগ্য সেটা নিয়েও ভাবার অবকাশ রয়েছে।’

এইচএস/জেএইচ/এমএস