ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড: রুমিন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:৩৩ পিএম, ০৬ জুন ২০২২

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৪৯ জন মারা গেছে, যার মধ্যে ১২ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০০ জন।

তিনি এ ঘটনার তদন্তসাপেক্ষে কনটেইনার ডিপোর মালিক চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমানের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

সোমবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে রুমিন ফারহানা এ দাবি জানান।

একই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাও কনটেইনার ডিপোর মালিকসহ যারা অনৈতিকভাবে এ ধরনের বিস্ফোরক রেখেছিলেন তাদের শাস্তির দাবি জানান।

রুমিন ফারহানা বলেন, বাংলাদেশে দুর্ঘটনারগুলোর একটা বড় উদাহরণ- নিমতলী অগ্নিকাণ্ড। ২০১০ সালে এ অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১২৪ জন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এত মানুষ আগুনে পুড়ে মারা গেলেও সেখানে কোনো মামলা দায়ের হয়নি, হয়েছে একটা জিডি। আবার এই জিডির তদন্তকাজ এখনো চলমান। এ ঘটনার কোনো শাস্তি বা বিচার হয়নি।

এরপর চুরিহাট্টায় কেমিক্যাল বিস্ফোরণে মারা যায় ৭৭ জন। এ দুটি ঘটনার জন্য দায়ী কেমিক্যাল। সে সময় সরকার বলেছিল, কেমিক্যাল গুদাম সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু এখনো তা সরিয়ে নেওয়া হয়নি। সেখানে এখন ১৫ হাজার কেমিক্যাল গুদাম বা বারুদের দোকানের ওপর লাখ লাখ লোক বসবাস করে। সেখানে আবারও যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

রুমিন বলেন, সীতাকুণ্ডের ঘটনার বিষয়ে একটি কথা আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, সীতাকুণ্ডে দুর্ঘটনা ঘটেনি এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। গত রোববার চট্টগ্রামের বিস্ফোরক পরিদর্শক তোফাজ্জেল হোসেন পরিষ্কার করে বলেছেন, এ ডিপোতে দাহ্য পদার্থ রাখা হয়েছে তা আমাদের জানানো হয়নি। এ ধরনের পণ্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ধরনের অবকাঠামো প্রয়োজন। কিন্তু ডিপোতে সে অবকাঠামো, ব্যবস্থা ছিল না। অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু এদেশে দায়িত্বে অবহেলার জন্য মন্ত্রীর পদত্যাগের কোনো সংস্কৃতি নেই, তাই আমি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি না।

রুমিন আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের একজন পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাদের কেউ জানায়নি এখানে কেমিক্যাল রাখা রয়েছে। তাহলে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা হতো একেবারে অন্য পদ্ধতিতে। তাতে বিস্ফোরণের ঘটনা অনেকটা কম হতো।

সে ক্ষেত্রে কনটেইনার থেকে নিরাপদ দূরত্ব থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করতেন এবং এতগুলো মানুষ মারা যেত না। এ মানুষগুলো মারা গেছে একমাত্র ডিপোর মালিকের চরম উদাসীনতায়। এ ডিপোটি ছিল অনুমোদনহীন, এমনকি যখন আগুন লেগেছে তখন মালিকপক্ষ থেকে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়নি এখানে কেমিক্যাল আছে।

রুমিন ফারহানা বলেন, এ স্পর্ধা তিনি (মালিক) কেন পেয়েছেন? কেননা তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান বলে। এমন একটি পদে থেকে কোনো নিয়মকানুন মানার বিষয় তিনি ভাবতেও পারেননি। ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনেও অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় ১১২ জন। যার মালিক-এমডি ছিলেন দেলোয়ার হোসেন। যাকে বর্তমানে ঢাকা উত্তরের মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে।

সীতাকুণ্ডের ঘটনার দুদিন পার হলেও সেখানকার মালিকের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ তিনি আইন ভঙ্গ করে ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের মতো দাহ্য পদার্থ রেখেছিলেন। বিশেষ কোনো অবকাঠামো ছাড়াই তিনি এ ধরনের দাহ্য পদার্থ রেখেছিলেন। তা ফায়ার সার্ভিসকেও তিনি জানানোর প্রয়োজনবোধ করেননি। তাহলে এত মানুষ মারা যেত না। আমি এ ডিপোর মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাও সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, যদিও এটাকে আমরা নিছক অগ্নিকাণ্ড বলে মনে করছি, কিন্তু এটা নিছক অগ্নিকাণ্ড নয়। এর পেছনে কোনো নাশকতা রয়েছে কি না, তা সরকার তদন্ত করে দেখবে। যদিও কোনো তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না। এ দুর্ঘটনার পর অনেক প্রশ্ন আসছে।

তিনি বলেন, সীতাকুণ্ডের মতো একটি জনবহুল এলাকায় কীভাবে এ ধরনের ডিপো থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমরা সাড়ে ছয় লাখ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করি, কিন্তু কেন ফায়ার সার্ভিসের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনতে পারি না।

বাবলা বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নিজেদের ট্যাক্সের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করি তখন বিশ্বের দরবারে আমরা প্রশংসিত হই, কিন্তু আগুন নেভাতে গিয়ে যখন এত সংখ্যক ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মারা যান তখন আমরা লজ্জায় মুখ লুকাবো কোথায়? আমরা ফায়ারকর্মীদের হাতে যদি আধুনিক যন্ত্রপাতি তুলে দিতে পারতাম তাহলে গল্পটা প্রশংসিত হতো।

তিনি এত মানুষের মৃত্যু ও আহতদের ঘটনার জন্য দায়ী ডিপোর মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

এইচএস/বিএ/এএসএম