‘পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে’
পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান দিন দিন বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
তিনি বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তব রূপে। আগামী ২৫ জুন যানবাহন চলাচলের জন্য পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মুক্ত হচ্ছে। এটি চালু হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা সরাসরি যুক্ত হবে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। পদ্মা সেতুর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। সেতুর দুই পাশে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্পকারখানা। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানও দিন দিন বেড়েই যাবে।
শনিবার (৪ জুন) দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং অন্যতম বৃহৎ ভোগ্য ও নিত্যব্যবহার্য পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ ‘বাংলাদেশের অংশীদার’ প্রতিপাদ্যে ‘সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট ২০২১’ প্রকাশ করে। রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ওই প্রতিবেদনে ইউনিলিভার বাংলাদেশের কর্মপ্রক্রিয়া, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও বাংলাদেশের সমাজে কোম্পানিটির প্রভাবের মতো বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ইউনিলিভারের সঙ্গে সরকারের অংশীদারত্ব থাকায় আপনাদের সাফল্য ও বিস্তৃতি নিয়ে আমরা গর্ববোধ করছি। কোম্পানিটি সারাদেশে প্রায় ১০ লাখ উদ্যোক্তাকে নিয়ে কাজ করছে। ফলে কর্মসংস্থান তৈরিতেও বিশাল অবদান রাখছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ।
সরকার বর্তমানে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে শামিল হতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং পরিবেশ রক্ষায় সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। পরিবর্তিত জলবায়ু ও বিশেষ বিপর্যয়ের প্রভাব থেকে জনগণকে সুরক্ষা দিয়ে সরকার প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ইউনিলিভার বাংলাদেশে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে শুধু ব্যবসা পরিচালনাই করছে তা নয়, একই সঙ্গে নৈতিক ও আদর্শনির্ভর একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশের সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়নের জন্য অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চাটার্টন ডিকসন বলেন, ইউনিলিভারের ‘সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট ২০২১’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি আনন্দিত। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এক গভীর সংকট রয়েছে এবং যার ফলে আমরা সবাই জলবায়ু পরিবর্তনের ভুক্তভোগী। সংকট মোকাবিলায় আমাদের অবশ্যই কার্বন-ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ কমিয়ে আনতে হবে। আমি এ পর্যন্ত যেসব কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের মধ্যে ইউনিলিভারই সবচেয়ে টেকসই ভাবনার মূলধারার কোম্পানি, যেটি এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সংকট সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, আমি মনে করি ইউনিলিভারের জন্য সবচেয়ে প্রশংসাযোগ্য বিষয়- প্রতিষ্ঠানটি অসাধারণ ও উদ্ভাবনে সক্ষম কর্পোরেট সিভিল সোসাইটি এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়েছে। যাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ উপকৃত হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, জলবায়ু সংকটে বাংলাদেশের কিছু চ্যালেঞ্জ ও দুর্বলতা সত্ত্বেও সরকার, প্রভাবক এবং বেসরকারি খাতের উদ্দেশ্যমুখী প্রতিষ্ঠান ও দাতা হিসেবে ইউনিলিভার এবং তৃতীয় সেক্টরের সক্ষমতার অংশ হিসেবে কর্পোরেট সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলো সমাজের উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
‘ইউনিলিভার বৈশ্বিক স্ট্র্যাটেজি কম্পাসের প্রতিশ্রুতিগুলোর আঙ্গিকে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত আমাদের ব্র্যান্ডগুলোর মাধ্যমে আমরা মানুষের জীবনযাত্রা ও দৈনন্দিন অভ্যাসে ইতিবাচক পরিবর্তন আনাকে উৎসাহিত করেছে। শুধু তাই নয়, টেকসই উন্নয়নকে ব্যবসার প্রতিটি অংশে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে এবং টেকসই বাংলাদেশ গড়ার যাত্রায় সরকারসহ অন্যান্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ইউনিলিভার বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন কৌশল তিনটি মূল স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এক- পৃথিবীর স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, দুই- মানুষের স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস ও সুস্থতার উন্নয়ন এবং তিন আরও ন্যায্য ও সামাজিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব তৈরিতে অবদান রাখা। এগুলো প্রতিষ্ঠানের মূল কম্পাস স্ট্র্যাটেজি হিসেবে পরিচিত।
ইউনিলিভারের বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি (গ্লোবাল কম্পাস কমিটমেন্ট) অনুযায়ী, ইউনিলভার বাংলাদেশ তার উদ্দেশ্যমুখী ব্র্যান্ড সমূহের মাধ্যমে ভোক্তাদের অভ্যাস পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি ব্যবসায়ের প্রতিটি ধাপে টেকসই কাঠামো নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং টেকসই বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির পথচলায় বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন সেক্টরের বৈচিত্র্যময় অংশীদারদের নিয়ে একটি মাল্টি-স্টেকহোল্ডার (বহুমুখী-অংশীজন) মডেল গঠন ও সুপরিচালনায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ সবসময় সচেষ্ট রয়েছে।
এছাড়া ইউনিলিভার বাংলাদেশে ২০২১ সালে ১০টি ভিন্ন ভিন্ন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে টেকসই উদ্যোগ সমূহের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছে ৪৩ কোটি টাকারও বেশি।
বেশ কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ায় ২০২১ সাল ছিল কোম্পানির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ এসময় প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে পৌরসভা ভিত্তিক সর্ববৃহৎ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের প্রকল্প পরিচালনা করেছে, সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মানুষের জন্য, এছাড়া তৈরি-পোশাক খাতের (আরএমজি) শ্রমিকদের নিষ্পত্তিযোগ্য আয় (ডিসপোজেবল ইনকাম) বাড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটি ১০ শতাংশ বাংলাদেশির জীবনমানের উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
কোম্পানির উদ্দেশ্যমুখী ব্র্যান্ড ও বিস্তৃত নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যে বিষয়টি বোঝতে ও মূল্যায়ন করতে পেরেছে তা হলো- এটির কার্যক্রম শুধু বর্ধিত ভ্যালু চেইন বা ‘আউটার কোর’ এর ২০ হাজার মানুষকেই প্রভাবিত করবে না বরং উপকৃত হবে বাংলাদেশ জুড়ে ১১ লাখ খুচরা বিক্রেতা (রিটেইল পার্টনার) ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
পারস্পরিক অংশীদারিত্ব, ইতিবাচক প্রভাব বজায় রাখা ও সম্ভাবনাকে সঙ্গে নিয়ে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউনিলিভার বাংলাদেশে ও এই পথচলায় প্রতিষ্ঠানটির পাশে রয়েছে পাঁচ অংশীদার- ‘ফ্রেন্ডশিপ’, ‘জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি)’, ‘ভূমিজ’, ‘ব্র্যাক’, ‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’, যারা ২০২১ সাল জুড়ে প্রতিষ্ঠানটির সামাজিক প্রতিশ্রুতি পূরণে একসঙ্গে কাজ করেছে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী একটি রিফিল মেশিনও উদ্বোধন করেন, যা প্রযুক্তি এবং ভোক্তাদের আচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে প্লাস্টিক ব্যবহার কমাতে ইউনিলিভার বাংলাদেশের একটি অনন্য উদ্যোগ।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার বলেন, বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার বিগত পাঁচ দশকে ইউনিলিভার দেশ ও মানুষের কল্যাণে সম্মুখ সারিতে থেকে কাজ করে আসছে। ইউনিলিভারের বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমরা আমাদের উদ্দেশ্যমুখী ব্র্যান্ডগুলোর মাধ্যমে মানুষকে অভ্যাস পরিবর্তনে অনুপ্রাণিত করি। একই সঙ্গে ব্যবসার প্রতিটি ধাপে টেকসই ভাবনাকে প্রোথিত করতে চাই এবং টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণের এই যাত্রায় সরকার ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে মাল্টি-স্টেকহোল্ডার মডেল বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা জোরদার করে থাকি।
তিনি আরও বলেন, ইউনিলিভার বাংলাদেশের ‘সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট’, টেকসই বাংলাদেশ গড়তে আমাদের নেওয়া উদ্যোগ সমূহ নিয়ে আলোচনার ছোট একটি উপলক্ষ মাত্র। এটা সর্বশেষ কোনো প্রাপ্তি নয়। কিন্তু বৃহৎ কোনো লক্ষ্যে উচ্চাশার শুরু যেটি একা নয় বরং অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে পারে।
আইএইচআর/আরএডি/জিকেএস