ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

উত্তরাঞ্চলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টায় জেএমবি

প্রকাশিত: ০২:০৩ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

উত্তরাঞ্চল কেন্দ্রীক আবারো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় বিদেশিদের হত্যা, মসজিদে বোমা হামলা ও জঙ্গি তৎপরতার ঘটনায় এমনটাই মনে করছে গোয়েন্দা পুলিশ। শুধু তাই নয়, উত্তরাঞ্চলে ঘাঁটি গেড়েছে এমন ১৪ স্থানও শনাক্ত করেছে তারা।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী জঙ্গি সংগঠনগুলো সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায় রয়েছে। একে অপরকে অনুকরণ করার চেষ্টা করছে। একই ধারায় প্রভাবিত জেএমবিও চেষ্টা করে যাচ্ছে। দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়লেও দেশে দেড়/দুই বছর ধরে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জেএমবি। যদিও গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতা ও নজরদারির কারণে দুই-একটি ঘটনা ছাড়া সব পরিকল্পনাই তাদের ভেস্তে গেছে।
 
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দাবি, জেএমবির একটি অংশ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে সক্রিয়ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপর একটি অংশ ছিনতাই ও ডাকাতি করে অর্থযোগানের চেষ্টা করছে।

জেএমবির যে অংশটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সক্রিয় তাদের অর্থ জোগানদাতারা বাংলাদেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা করছে বলেও দাবি ডিবি পুলিশের।
 
সূত্রটি জানায়, জেএমবির সক্রিয় গ্রুপটিতে আছে মূলত তরুণ কর্মীরা। এই গ্রুপটির কিছু সদস্য আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রতি ঝুঁকেছিল। কেউ কেউ আনসারুল্লাহর সদস্য হিসেবে গ্রেফতারও হয়েছিল।

রাজধানীর গোপীবাগের স্বঘোষিত ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি লুৎফুর রহমানসহ ছয় খুন এবং রাজাবাজারে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যার ঘটনায় জেএমবির এই গ্রুপটি জড়িত বলেও সূত্র জানায়।
 
ডিবি পুলিশ জানায়, ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতায় কোনঠাসা জেএমবি এখন উত্তরাঞ্চলেই পুনরায় ঝুঁকে পড়ছে। তারা উত্তরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণদের সঙ্গে মিশে জঙ্গি তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে।
 
সম্প্রতি বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলা, রাজশাহীতে আহমদিয়া মসজিদে আত্মঘাতী হামলার পর এমন জোরালো দাবি পুলিশের।

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ ও জামিনে ছাড়া পাওয়াদের উপর নজরদারির ভিত্তিতে উত্তরাঞ্চলে ঘাঁটি গেড়েছে এমন ১৪টি জেএমবির ঘাঁটিও শনাক্ত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
 
সম্প্রতি ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে মো. আরমান, জাহিদ হাসান রানা ওরফে মুসহাব ও নুর মোহাম্মদ ওরফে লেংড়া মাস্টার নামে সন্দেহভাজন তিন জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতারের পর তাদের নিয়ে হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এসময় বন্দুকযুদ্ধে দুই জঙ্গি নেতা নিহত হয়।

ডিবি পুলিশ দাবি করে গ্রেফতার দুজন হলো- জেএমবি ঢাকা উত্তরের সামরিক কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে আব্দুল্লাহ এবং ইতোপূর্বে বন্দুক যুদ্ধে নিহত সামরিক কমান্ডার আলবানী ওরফে হোজ্জা ওরফে মাহফুজ এর সেকেন্ড ইন কমান্ড কামাল ওরফে হিরণ। পুলিশ সদস্য ইব্রাহিমের হত্যাকারী ও হোসেনি দালানে আক্রমনকারীও হিরণ।
 
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আগের জেএমবি সদস্য আর এখনকার জেএমবি সদস্যের মান এক নয়, বরং অনেক পার্থক্য। এখনকার জেএমবি সদস্যরা অনেক বেশি স্মার্ট। তারা গোয়েন্দা পুলিশকে ফাঁকি দেয়ার জন্য আধুনিকতার সবই ধারণ করেছে।’
 
তিনি বলেন, সম্প্রতি বন্দুকযুদ্ধে নিহত ২জন ও গ্রেফতাররা সবাই জেএমবিতে আমির মুফতি সাইদুর রহমানের বিরোধী পক্ষ। তারা শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাইয়ের অনুসারী।
 
মনিরুল ইসলাম বলেন, শাকিল নামে এক জেএমবি সদস্যসহ পলাতক রয়েছে তিনজন। হিরণ ও আলবানির অনুসারী শাকিলই এখন জেএমবির একটি গ্রুপ পরিচালনা করছে। সাভারে পুলিশ সদস্য হত্যায় সেই শাকিলকে খোঁজা হচ্ছে।
 
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট একসঙ্গে সারা দেশে বোমা হামলা চালিয়ে আলোচনায় এসেছিল জেএমবি। পরে দলটি নিষিদ্ধ হয়। দলের আমির শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলাভাইসহ শীর্ষনেতাদের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর হয় সাত বছর আগে।
 
এখন জেএমবিতে সক্রিয় অংশটি শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলাভাইয়ের পথ অনুসরণ করছে জানিয়ে মনিরুল বলেন, শায়খ আব্দুর রহমানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া পর এরা চুপ হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
 
মনিরুল বলেন, ‘যারা দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়, তারা জেএমবির একাংশের অর্থের জোগানদাতা। মূলত উত্তরবঙ্গেই তাদের বর্তমান ঘাঁটি বলে তথ্য রয়েছে।’
 
ডিএমপির এ গোয়েন্দা প্রধান দাবি করে বলেন, এই জেএমবির সদস্যরা দুই মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ নিয়ে টার্গেট ঠিক করে। একেকজন একেক টার্গেট বাস্তবায়ন করতে কাজ করে। গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান ও নজরদারি অব্যাহত থাকায় সে পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন করতে পারছে না তারা।

জেইউ/একে/আরআইপি