মেরামতের নামে ২৩১ বুথ থেকে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা চুরি
ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ২৩১টি এটিএম বুথ থেকে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। এ অভিযোগে গার্ডা শিল্ড সিকিউরিটি কোম্পানির সাবেক ক্যাশ অ্যাটেনডেন্ট ও মেশিন মেইনটেন্যান্স পদে কাজ করা দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের দাবি, গ্রেফতাররা পেশাগত দায়িত্ব পালনের আড়ালে একটি চক্রের হয়ে কাজ করছিলো। গ্রেফতাররা হলেন- তাহমিদ উদ্দিন পাঠান (২৭) ও আব্দুর রহমান বিশ্বাস (৩২)। তারা এরই মধ্যে আদালতে নিজেদের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও পিবিআই মেট্রো উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এর আগে চক্রের আরও ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি পুলিশের গোয়েন্দা শাখা।
১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে গ্রেফতাররা জানান, তারা গার্ডা শিল্ড সিকিউরিটি কোম্পানিতে ক্যাশ অ্যাটেনডেন্ট ও মেশিন মেইনটেন্যান্স হিসেবে চাকরি করতেন। ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড বনানী শাখা থেকে মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকার এটিএম বুথে টাকা লোডের জন্য গার্ডা শিল্ড সিকিউরিটি কোম্পানিতে বুথের তালিকা ও টাকা লোডের পরিমাণসহ রিকুইজিশন আসতো।
চক্রের সদস্যরা প্রতিটি দলে ২ জন মোট ১১ জন ভাগ হয়ে যেতো। এরপর এটিএম বুথে টাকা লোড ও মেশিন মেইনটেন্যান্সের কাজ করতো। ডিউটির সময় তারা এটিএম মেশিনে টাকা লোড করার পর ফলস ট্রানজেকশন করতো। এভাবে ২০২১ সালের অক্টোবর মাস থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই টাকা চক্রের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে।
এসপি জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে তারা গার্ডা শিল্ড সিকিউরিটি কোম্পানিকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। গার্ড শিল্ড কোম্পানি ঘটনার বিষয়ে যাচাই করে প্রাথমিকভাবে তাহমিদ উদ্দিন পাঠান ও আব্দুর রহমান বিশ্বাসের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের সত্যতা পায়। গার্ডা শিল্ড সিকিউরিটি কোম্পানির পক্ষে সৈয়দ আব্দুল আলম বাদী হয়ে গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় একটি মামলা করেন।
মামলাটি কাফরুল থানা পুলিশ প্রাথমিক পর্যায়ে একমাস তদন্ত করে। তদন্তকালে এজাহারে আসামিসহ আরও ৯ জন আসামিদের পর্যায়ক্রমে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। তদন্ত পর্যায়ে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলাটি পিবিআই'তে হস্তান্তর হয়।
গ্রেফতারের পর আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগ স্বীকার করে জানায়, তাদের চক্রে জড়িত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কামরুল হাসান, তারেক আজিজ, আলী, রবিউল হাসান, আব্দুল কাদের, হাবিবুর রহমান, সুজন মিয়া, তরিকুল ইসলাম ও শিশির কুমার একই উদ্দেশ্যে মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকার ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের এটিএম বুথসমূহে টাকা লোড দিয়ে নিজে ও আত্মীয়দের নামে ইস্যুকৃত এটিএম কার্ড দিয়ে ফল্স ট্রানজেকশনের মাধ্যমে টাকা তুলে হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিত। এভাবে চক্রটি পাঁচ মাসে দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
বর্তমানে এই ঘটনায় মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা।
টিটি/এমআরএম/জিকেএস