ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

‘বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দিকনির্দেশনা জরুরি’

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:১৬ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২২

করোনা জাতীয় ও বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মাত্রায় ক্ষতির সৃষ্টি করেছে। সমগ্র বিশ্ব যখন এই ক্ষত কাটিয়ে উঠছিল, ঠিক তখনই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশও সেই অনিশ্চয়তার ফল ভোগ করছে। বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। পিছিয়েপড়া মানুষ নতুন করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এমন অবস্থায় আগামী বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা জরুরি বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।

এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান খাতে মহামারির ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে ব্যাপক আকারে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

রোববার (১৭ এপ্রিল) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর আয়োজনে ‘আসন্ন বাজেট নিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংলাপে পিছিয়েপড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা অংশ নেন।

তারা পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে আরও সুষ্ঠুভাবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান।

সূচনা বক্তব্যে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) যুগ্ম পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য বলেন, দুই বছর আগে উদ্ভূত মহামারির অভিঘাত এখনো বিদ্যমান। বিভিন্ন গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে, মহামারির প্রভাব পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর ওপর সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া, বৈশ্বিক পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন ও দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি–এসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে আগামী বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক এবং সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা উচিত। বাজেট প্রস্তাব পেশ করার আগেই জনসাধারণের জন্য একটি খসড়া নীতিমালা উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত, যেন জনগণ সরাসরি তাদের প্রত্যাশাগুলো ব্যক্ত করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির চাকা সচল করতে একটি সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন জরুরি। বর্তমান প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করে পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে সরাসরি বিভিন্ন প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এজন্য আগের সব প্রণোদনা কর্মসূচির পরিবীক্ষণ প্রয়োজন।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের পরিচালক টনি মাইকেল গোমেজ বলেন, মহামারির কারণে শিশুদের পড়াশোনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরকেন্দ্রিক বিদ্যালয়গুলো চালু থাকলেও, গ্রামাঞ্চলে বা দুর্গম জায়গায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। একই কারণে বিগত দুই বছরে শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে দুটোই বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন কারণে যারা ঝরে পড়েছে, তাদের স্কুলে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এই সমস্যাগুলো নিরসনে শিশু বাজেট নতুন আঙ্গিকে প্রণয়ন করা দরকার। বাজেট প্রণয়নে শিশুদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত।

সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজেবিলিটির (সিএসআইডি) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, প্রতিবন্ধীদের বাজেট বলতে শুধুমাত্র সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়য়ের বাজেটকে বোঝায়। অন্যদিকে প্রতিবন্ধীদের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় মাসিক মাত্র ৭৫০ টাকা ভাতা দেওয়া হয়, যা দৈনিক হিসাবে ২৫ টাকা। এই ভাতার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। আমরা লক্ষ্য করছি যে, প্রতিবছর ভাতাপ্রাপ্যদের সংখ্যা বাড়লেও, ভাতার পরিমাণ বাড়ে না।

আসন্ন বাজেট থেকে ট্রান্সজেন্ডার গোষ্ঠীর প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ট্রান্সজেন্ডারের সংজ্ঞায়ন সুস্পষ্ট নয়। এমনকি ট্রান্সজেন্ডারদের বা হিজড়াদের ওপর অতীতে কখনই কোনো শুমারি পরিচালনা করা হয়নি। ফলে তাদের দাবি ও চাওয়া-পাওয়া এক অর্থে হিসাবের বাইরে রয়েছে।

ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য তিনি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে রয়েছে- ট্রান্সজেন্ডারদের স্বল্পসুদে ব্যবসায়িক ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা, তাদের কর্মসংস্থানে যুক্ত করার লক্ষ্যে নিয়োগদাতাদের সুনির্দিষ্ট প্রণোদনা প্রদান, ট্রান্সজেন্ডারদের স্বাভাবিক পারিবারিক জীবন নিশ্চিত করতে পরিবারকে প্রণোদনা প্রদান করার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

কর্ডএইডের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শাকিব নবী বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক বর্তমানে অনানুষ্ঠানিকভাবে কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। এতে দেখা যাচ্ছে যে তারা সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষি খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতির উন্নয়নে সামগ্রিক কৃষি কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে।

অক্সফাম ইন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মো. মোস্তফা আলী বলেন, কৃষি নিয়ে সরকারের আরও পরিকল্পিত নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। অঞ্চলভেদে প্রয়োজনীয় কৃষি কর্মকর্তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এসব সমাধান করতে কৃষি সংক্রান্ত সব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার মীম বলেন, স্থানীয় সরকার কাঠামোকে আরও শিশুবান্ধব করতে হবে। এই লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে মোট বাজেটের ১০ শতাংশ শিশুদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। এই এলাকাগুলোতে শিশুদের তথ্য হালনাগাদের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এমনকি জবাবদিহিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে শিশুদের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেটের সব তথ্য উন্মুক্ত করতে হবে।

মহামারির ফলে স্কুলশিক্ষকরা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে বোগাজান আদর্শ শিক্ষালয়ের প্রধান শিক্ষক সাধন কুমার সরকার বলেন, বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা সমাজে অবহেলিত। বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও উদ্ভূত পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে আসন্ন বাজেটে তাদের চাকরি জাতীয়করণের জন্যে আলাদা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।

সোশ্যালিস্ট লেবার ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব বুলবুল বলেন, পেশাগত কারণে দীর্ঘসময় কাজে নিয়োজিত থাকায় পরিবহণ শ্রমিকদের খুব অল্প বয়সেই কর্মক্ষমতা হারাতে হয়। নানা ধরনের রোগ-ব্যাধিতেও তাদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। এজন্য তিনি প্রস্তাব করেন, আসন্ন বাজেটে শ্রমিকদের জন্য ভর্তুকিমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া পরিবহণ শ্রমিকদের দুর্ঘটনা বিমার আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

এসময় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সব নারীই এক ধরনের প্রান্তিক অবস্থানে বিরাজ করে। মহামারিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক নারী উদ্যোক্তার আবির্ভাব ঘটেছে।

তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পে সাম্প্রতিককালে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ক্রমহ্রাসমান। এর প্রধান কারণ হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির আবির্ভাব। তাই নিত্যনতুন প্রযুক্তির আগমনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিদ্যমান নারী কর্মীদের দক্ষ করে তুলতে বাজেটে বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও অভিবাসী নারীদের গৃহকর্মী হিসেবে পাঠানোর পরিবর্তে আরও দক্ষ কর্মী হিসেবে পাঠানো যায় কি না সেটার পরিকল্পনাও আসন্ন বাজেটে থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

নারীপক্ষের প্রকল্প পরিচালক সামিয়া আফরীন, জাতীয় হকার ফেডারেশনের সভাপতি আরিফ চৌধুরি প্রমুখ সংলাপে অংশ নেন।

এসএম/ইএ/জিকেএস