নারায়ণগঞ্জে লঞ্চ চলাচলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবি মালিকদের
সম্প্রতি শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন নৌপথে চলাচল করা ৭০টি লঞ্চের সময়সূচি স্থগিত করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। মানবিক বিবেচনায় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে বন্ধ হওয়া এই লঞ্চগুলোকে আবারও চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মালিকরা।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর পুরোনো পল্টনে অবস্থিত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। সম্মেলনে সংস্থাটির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমদ দাবির পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর থেকে ছোট ছোট লঞ্চ স্বল্প দূরত্বে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-মতলব, নারায়ণগঞ্জ-মাছুয়াখাল, নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ-ওয়াপদা-সুরেশ্বর ও নারায়ণগঞ্জ-রামচন্দ্রপুর নৌপথে চলাচল করে আসছিলো।
‘গত ২০ মার্চ নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট এলাকায় কোস্টাল জাহাজ এমভি রুপসী-৯ এর ধাক্কায় এম এল আফসার উদ্দিন লঞ্চটি ডুবে যায়। এতে ১০ জন লোকের প্রাণহানি ঘটে। এই রুটে এ পর্যন্ত যতগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে তার সবকটিই কোনো না কোনো কার্গো জাহাজের ধাক্কায় হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই রুটগুলোতে এখন পর্যন্ত কোনো লঞ্চ দুর্ঘটনার শিকার হয়নি।‘
‘লঞ্চ দুর্ঘটনার পর বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক আইনের তোয়াক্কা না করে ২১ মার্চ এক চিঠির মাধ্যমে ৭০টি লঞ্চের সময়সূচি স্থগিত করেন। এতে ৭০টি পরিবার পথে বসে গেছে। প্রতিটি লঞ্চে ৬ জন করে স্টাফ রয়েছে। ফলে ৪২০টি পরিবার আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। লঞ্চ মালিকদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা, জীবন-জীবিকা ও আয়ের একমাত্র অবলম্বন ছিল এই নৌযানগুলো।‘
মাহবুব উদ্দিন আরও বলেন, এই লঞ্চের মালিকরা এক বছরের অগ্রিম আয়কর, ভ্যাট, বিআইডব্লিউটিএ'র তত্ত্বাবধান, ডিজি শিপিং সার্ভে ও রেজিষ্ট্রেশন এবং নৌরুট অনুমোদন ফি দিয়ে সময়সূচি গ্রহণ করেছেন। এগুলো চলাচলের জন্য সার্ভে মেয়াদ রয়েছে। একটি যাত্রীবাহী জাহাজ স্থগিত করার কিছু নিয়ম রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএ কোনো নিয়ম অনুসরণ করেনি।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় নিয়ে তিনি বলেন, সামনে ঈদুল ফিতর। ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য এই লঞ্চগুলো চলাচলের অনুমতি একান্ত প্রয়োজন। দু-তিনটি ধার করা লঞ্চ দিয়ে এত যাত্রী পারাপার করা সম্ভব হবে না।
‘লঞ্চ না চলায় যাত্রীরা এখন অবৈধ ট্রলারযোগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। লঞ্চ চালু না হলে যেকোনো সময় শ্রমিক অসন্তোষও দেখা দিতে পারে।‘
‘এরই মধ্যে এমভি নিউ আরিফ নামের যে লঞ্চটিকে সময়সূচি দেওয়া হয়েছিল সেটি অন্য একটি কার্গো জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষ লেগে ডোবার উপক্রম হয়েছিল। সুতরাং সানকেন ডেকের (সমতল ডেকবিশিষ্ট ছোট লঞ্চ) পরিবর্তে হাইডেক অথবা ওয়েদার ডেকবিশিষ্ট নতুন ছোট জাহাজ তৈরি করলেও ক্ষুদ্র আকৃতির কারণে পৃথক লেনে সেগুলো পরিচালনা করতে হবে। নতুবা এরূপ সংঘর্ষের সম্ভাবনা থেকেই যাবে।‘
উপরোক্ত যুক্তি তুলে ধরে মানবিক দিক বিবেচনায় ও লঞ্চ সংশ্লিষ্টদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেওয়ার জন্য বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান মাহবুব উদ্দিন আহমদ।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ৭০টি লঞ্চের জন্য গত ৩ এপ্রিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ডিজি শিপিংকে যে নকশা তৈরি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি দিতে হবে। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চ চলাচলের জন্য নদীতে পৃথক লেন করে দিলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে যাবে।
এমএএস/এমপি/এএসএম