ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

নিত্যপণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে অনেক বেশি: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:০৭ পিএম, ২০ মার্চ ২০২২

করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে বাড়ছে জ্বালানি তেলের মূল্য। ফলে সারাবিশ্বেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উন্নত অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষের বার্ষিক আয় কম। তবুও সেসব দেশের চেয়েও বেশি দামে চাল, তেল, ডিম, আটার মতো পণ্য কিনতে হচ্ছে এদেশের মানুষকে। বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার অভাব, চাহিদা-জোগান সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকাসহ একাধিক কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বলে মনে করছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সংস্থাটির মতে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়তি থাকলেও সিগারেটের মতো ক্ষতিকারক পণ্যের মূল্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। এমন অবস্থায় আগামী বাজেটে সিগারেটের ওপর কর আরোপ ও মূল্যস্ফীতির সঠিক চিত্র প্রকাশের তাগিদ দিয়েছে সিপিডি।

রোববার (২০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পথে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এই অভিমত প্রকাশ করে গবেষণা সংস্থাটি।

অনুষ্ঠানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি, বহিঃখাত, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, ব্যাংকখাত এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোচনা হয়। এখানে সিপিডির গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।

আলোচনা সভায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমরা বলছি সারা বিশ্বে পণ্যের দাম বাড়ছে, সে কারণে বাংলাদেশেও বাড়ছে। চাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম একবছর ধরে ওঠানামা করছে। তারপরও এসব পণ্যের দাম বিশ্ববাজারের চেয়েও অনেক বেশি।

তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেক বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের বার্ষিক আয় সেসব দেশের তুলনায় অনেক কম।

থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশে চালের দাম বেশি জানিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, অথচ এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে চাল বেশি উৎপাদন হয়। এছাড়া অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ময়দার দাম অনেক বেশি। তেলের ক্ষেত্রে আমরা একই চিত্র দেখছি। দামের ফারাকটা অনেক বেশি। গরুর মাংসেও একই অবস্থা। চিনি, পেঁয়াজের মূল্যেও ঊর্ধ্বগতি। ইউরোপ, আমেরিকার বাজারের তুলনায় দাম কয়েকগুণ বেশি।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, গুঁড়ো দুধের মূল্য ইউরোপের বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি। কিন্তু দেখা গেছে তাদের মাসিক আয় আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। দেশে ডিম প্রতি ডজন ১১০ টাকা হলেও আমেরিকায় ১০৩ ও মালেশিয়ায় ৮৫ টাকা।

অন্যদিকে সিগারেটের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় প্রায় ৮ গুণ কম। নির্দিষ্ট একটি ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে দেখা যায় ২০ শলাকার এক প্যাকেট সিগারেটের মূ্ল্য অস্ট্রেলিয়ার পার্থে দুই হাজার ৫১৬ টাকা, নিউজিল্যান্ডে দুই হাজার ১০৩ টাকা, ইংল্যান্ডে এক হাজার ৪৮৮ টাকা হলেও বাংলাদেশে মাত্র ৩০১ টাকা।

এসব বিষয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী, কিন্তু আবার আমরা দেখছি সরকারি তথ্যে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল। এটি একটি বিপরীতমুখী প্রবণতা। যখন এতো মূল্য বাড়ছে তখন মূল্যস্ফীতি কীভাবে স্থিতিশীল থাকে তা আশ্চর্যের বিষয়। কোভিডকালীন সারাবিশ্বে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এখন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেটা আরও বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে তা স্থিতিশীল!

তার মতে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির একটি বাড়লে আরেকটি কমে। এটাই বিগত কয়েক বছরের ট্রেন্ড। ফলে ওভারঅল একটা স্থিতিশীল মূল্যস্ফীতি বজায় থাকে। কিন্তু এটি আসলে বাজারের সঠিক চিত্র প্রকাশ করে না।

‘পণ্য কিনতে গিয়ে আমরা কিন্তু স্থিতিশীল মূল্যস্ফীতি লক্ষ্য করছি না। এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করার জন্য স্ট্যার্ন্ডাড ধরা হয় সেটা গত কয়েক বছর ধরে একই আছে।’

গত এক বছরে জ্বালানি তেলের মূল্য প্রায় ৫০ ভাগ বেড়েছে বলেও জানায় গবেষণা সংস্থাটি।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে কী ধরনের কৌশল নেওয়া যেতে পারে সেটা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। আমরা দেখছি বিভিন্ন দেশ তেলের মজুত সমৃদ্ধ করার জন্য তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোতে ধরনা দেওয়া শুরু করেছে। আমাদেরও একইভাবে রির্জাভ করার উদ্যোগে নেওয়ার প্রয়োজন আছে।

বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সিপিডি যেসব সুপারিশ দিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে ব্যবস্থা নেওয়া, বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারি ও তদারকি বাড়ানো, রোজায় পণ্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়া।

এছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ন্যায্যমূল্যে পণ্য নিশ্চিত করতে টিসিবি ও ওএমএসের কার্যক্রম বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, খাদ্য ও পণ্যের চাহিদা-জোগান সম্পর্কে সরকার সঠিক তথ্য পায় না। ফলে বাজার ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। চাহিদা ও জোগান সম্পর্কে সরকারের স্পস্ট ধারণা রাখতে হবে। একই সঙ্গে দরিদ্রদের জন্য প্রত্যক্ষ আর্থিক সহায়তা দিতে হবে ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানিত ফেলো মাহফুজুর রহমান, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এসএম/কেএসআর/জিকেএস