ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সাহাবুদ্দীন আহমদ: ম্যাজিস্ট্রেট থেকে রাষ্ট্রপতি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০১:৩২ পিএম, ১৯ মার্চ ২০২২

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৫৪ সালে কর্মজীবনের শুরুতে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। এরপর তিনি মহকুমা কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালের জুনে তাকে বিচার বিভাগে বদলি করা হয়। ১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সাহাবুদ্দীন আহমদকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ করা হয়। এরপর ১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

ওই বছরের (১৯৯০ সালের) ৬ ডিসেম্বর এরশাদবিরোধী গণ-আন্দোলনের মুখে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করার পর তাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পদত্যাগ করলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ সময় তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ছিলেন।

১৯৯৬ সালের ৯ অক্টোবর সাহাবুদ্দীন আহমদ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। তার পিতা তালুকদার রিসাত আহমেদ একজন সমাজসেবী ও এলাকায় জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সাহাবুদ্দীন ময়মনসিংহের নান্দাইলে তার বোনের বাড়িতে বড় হন। তার স্ত্রীর আনোয়ারা বেগম। তিনি তিন কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। তার জ্যেষ্ঠ কন্যা ড. সিতারা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। দ্বিতীয়া কন্যা সামিনা পারভীন একজন স্থপতি। তার পুত্র শিবলী আহমেদ পরিবেশ প্রকৌশলী।

সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৪৫ সালে নান্দাইলের চন্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৪৮ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানি সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রথমে লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমি এবং পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রশাসনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তার কর্মজীবনের সূচনা। এরপর তিনি গোপালগঞ্জ ও নাটোরের মহকুমা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি সহকারী জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি পান। এর পর ১৯৬০ সালে তিনি প্রশাসন হতে বিচার বিভাগে বদলি হন। তিনি ঢাকা ও বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে এবং কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তাকে ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

১৯৭২ সনের ২০ জানুয়ারি হাইকোর্টের বেঞ্চে তাকে বিচারক হিসেবে উন্নীত করা হয়। ১৯৭৩-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৮০ সনের ৭ ফেব্রুয়ারি তাকে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ঢাকা ল রিপোর্ট, বাংলাদেশ লিগ্যাল ডিসিশন এবং বাংলাদেশ কেস রিপোর্টসে সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রচুরসংখ্যক রায় প্রকাশ করা হয়। চাকরিসম্পর্কিত, নির্বাচন নিয়ে কলহ, শ্রম ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক ইত্যাদি কেসে তার গৃহীত বিচারের রায় বহুল সমাদৃত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৮ম সংশোধনী সম্পর্কিত মামলায় তার দেওয়া রায় যুগান্তকারী এবং বাংলাদেশের সংবিধানের পরিশোধনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়।

বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রপতি এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি শনিবার (১৯ মার্চ) সকাল ১০ টা ২৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সাহাবুদ্দীন আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা আহমদ ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি মারা যান। তার বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সিতারা পারভিন ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। ওই দুর্ঘটনায় তার আরেক মেয়ে শাহানা স্মিথের স্বামী গুরুতর আহত হয়ে পরের বছর মারা যান। শাহানা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রেই রয়েছেন।

এফএইচ/কেএসআর/এমএস