ঢাকায় ঘুরছে না গাড়ির চাকা
ঢাকা শহর আজ স্থবির শহর। বাস প্রাইভেটকারের মতো চলার সব যানবাহনই আছে। কিন্তু নড়ছে না এক চিলতে পথও। যেন সেই গানের বিপরীত দৃশ্য। ‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে। যানজট দেইখা আমার পরাণ হারাইছে।’
সোমবার দুপুর থেকে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে, গলি পথে যানজটে বসে হা-হুতাশ করতে থাকলেও সহসা নিস্তার নেই। ট্রাফিক আইনের সব নিয়মই হার মেনেছে রাজনৈতিক পরিচয়ে। আজ যে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। সে উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশের কারণে বন্দি যেন সারা ঢাকা। সড়ক বন্ধ করে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বক্তব্য উদ্যানের ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সড়ক বন্ধ করে তাদের অবস্থান নিতে হয়েছে। তবে এজন্য সাধারণ মানুষকে যে কি পরিমাণ দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সে সম্পর্কে উদাসীন তারা।
দৃশ্যমান যানজট নিরসনে অদৃশ্য ট্রাফিক কর্মকর্তারা। ঊর্ধ্বতন ট্রাফিক কর্তৃপক্ষের কাউকে সংশ্লিষ্ট যানজটের রাস্তায় দেখা মেলে নি। যাদেরকে বা দেখা যাচ্ছে তাদের মুখ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে কতোটা অসহায় তারা। তাদের বক্তব্য, কিছু হলেই দোষ ট্রাফিকের। সরকার দলীয় সমাবেশের কারণে যানজট। সমাবেশ শেষ না অবধি যানজটের নিরসন আশাতীত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুর ২টার দিকে সমাবেশের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে হাইকোর্ট মোড় ও শাহবাগ পর্যন্ত সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। ৩টা নাগাদ কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট পেরিয়ে আসাদগেট পর্যন্ত লেগেছে যানজট। অন্যদিকে হাতিরঝিল, মগবাড়ার, সাতরাস্তা, মহাখালী, বনানী রুটেও লেগেছে যানজট।
মতিঝিলে একটি কর্পোরেট অফিসে চাকরি করেন তৌহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়েই তিনি নিয়মিত চলাচল করেন। তবে সমাবেশের কারণে নিউমার্কেট থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাহিরে প্রবেশের প্রায় সব রাস্তাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে কার্যত এসব রুট আজ অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে এত জায়গা থাকার পরও রাস্তা বন্ধ করে দুর্ভোগ সৃষ্টি না করলেও হত।
বাড্ডা থেকে মোহাম্মদপুরগামী যাত্রী আসিফ হান্নান জাগো নিউজকে জানান, নিয়মিত কার্যদিবসে সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টায় বাসে মোহাম্মদপুর পৌঁছান। তবে গুলশান-১, মহাখালী-আমতলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সড়ক, বিজয়সরণী এবং আসাদগেটে তীব্র যানজটের খবর পেয়ে হাটা শুরু করেছেন তিনি।
একই কথা বললেন সদরঘাট থেকে বিমানবন্দরগামী জামিল হায়দার বলছেন, গুলিস্তানেই আটকে আছি দেড় ঘণ্টা।
রাজধানীর এই তীব্র যানজটের কারণ জানতে চাইলে ট্রাফিক উত্তর উপ-কমিশনার প্রবীর কুমার রায় জানান, সমাবেশের কারণে তো একটু যানজট হবেই। যানজট নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ।
ট্রাফিকের দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার খান মুহাম্মদ রেজওয়ান জানান, এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ অনেকটাই অসহায়। সময়ক্ষেপণ ছাড়া রাস্তায় কিছু করার থাকছে না। আমরা চেষ্টা করছি। বিকল্প রুটে বাস ছাড়ার চেষ্টা চলছে।
জেইউ/জেডএইচ/পিআর