ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বেসরকারি স্কুলে ইচ্ছেমতো ভর্তি ফি ও বেতন আদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

রাজধানীসহ সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নীতিমালা অমান্য করে চলছে অতিরিক্ত অর্থ আদায়। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হয়েছে মাসিক বেতন। কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতন প্রায় দ্বিগুন বাড়ানো হয়েছে। অভিভাবকরা এটাকে অস্বাভাবিক বলে আন্দোলন করলেও ফল পাচ্ছেন না। অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) নির্দেশনা বা সতর্কীকরণ নোটিশ দিলেও কোন প্রতিষ্ঠানই তা আমলে নিচ্ছে না। ফলে অভিভাবকরা অসহায় হয়ে পড়ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ৭৫ শতাংশ বাড়ানোর অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ হাজার টাকা নেয়ার বিধান থাকলেও প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবিতে রোববার বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন অভিভাবক ফোরাম। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফি প্রত্যাহার না করলে ১৭ জানুয়ারি থেকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট পালনের হুমকি দিয়েছেন তারা।

বিদ্যালয়ের অভিভাবক শামীম আরা জাগো নিউজকে বলেন, তৃতীয়, ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে আমার তিন সন্তান পড়ে। তৃতীয় শ্রেণির টিউশন ফি এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার একশ`, ষষ্ঠ শ্রেণির টিউশন ফি এক হাজার ১৫০ টাকা থেকে দুই হাজার ৫৫০ টাকা ও নবম শ্রেণির এক হাজার ৫৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ৬৫০ টাকা করা হয়েছে। আমাদের না জানিয়েই ফি বাড়ানোর প্রতিবাদ করলে ভারপ্রাপ্ত (অধ্যক্ষ) শিক্ষক-কর্মচারীদের দিয়ে আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচারণ করায়। এত টাকা বেতন দিয়ে সন্তানদের কোন ভাবেই লেখাপড়া করানো সম্ভব নয় দাবি করে অতিরিক্ত বেতন প্রত্যাহারের দাবি জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খিলগাঁও ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি ফি নেয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৬৬০ টাকা। এই স্কুলের প্রতি শ্রেণিতে মাসিক বেতন দুইশ` টাকা, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাসিক বেতন আটশ` টাকা থেকে এক হাজার দু্ইশ` টাকা করা হয়েছে। আর কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুলের বেতন দেড় হাজার থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করা হয়েছে। জুনিয়র ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে মাসিক বেতন পাঁচশ` টাকা, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রতিটি শ্রেণিতে একশ` টাকা, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে একশ` টাকা, ধনিয়া একে হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে সব শ্রেণিতে মাসিক বেতন ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এভাবে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি স্কুলেই বাড়ানো হয়েছে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন। মাসিক বেতনের সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), পরীক্ষাগার (ল্যাব), গ্রন্থাগারসহ অন্যান্য খাতের ফিও বাড়ানো হয়েছে।

শুধু রাজধানীতেই মাসিক বেতন ও সেশন চার্জ বাড়ানো হয়নি। সারাদেশেই চলছে এই নৈরাজ্য। চট্টগ্রাম ও সিলেটে এ নিয়ে চলছে আন্দোলন।  মাউশি বিষয়টি টের পেয়ে ভর্তিতে মাত্রাতিরিক্ত ফি আদায়কে ‘অনভিপ্রেত’ আখ্যায়িত করে ৫ জানুয়ারি একটি অফিস আদেশ জারি করেছে। কিন্তু ওই আদেশ কেউই মানছে না।

এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, সেশন চার্জ সরকার নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। কিন্তু বেতন কী পরিমাণ বাড়াতে পারবে বা কোন পরিপ্রেক্ষিতে বেতন বাড়াবে সে ব্যাপারে কোনো নীতিমালা নেই। এজন্য স্কুলগুলো ইচ্ছেমতো বেতন বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদারকি বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ ও বেতন বাড়ানো প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দাবি, অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন দ্বিগুন বাড়ানো হয়েছে। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর জন্য চাপ রয়েছে। সেজন্যই তারা শিক্ষার্থীদের বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।

মাউশির উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) একেএম মোস্তফা কামাল বলেন, অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে আমরা নির্দেশনা জারি করেছি। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেটা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমপিও বন্ধ করাও হতে পারে।
 
এনএম/জেডএইচ/এএইচ/আরআইপি