ইমোতে পরিচয়-প্রেম, ঢাকায় এসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার তরুণী
কয়েকমাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে মিস কলের সূত্রধরে মো. মনির হোসেন শুভ (২২) নামে এক তরুণের সঙ্গে পরিচয় হয় পটুয়াখালীর এক তরুণীর। এরপর তাদের দুজনের মধ্যে নিয়মিত ইমোতে কথা হতো। ধীরে ধীরে তা প্রেমের সম্পর্কে রূপ নিলে একে অপরের সঙ্গে ভিডিওকলে কথা বলা শুরু করেন। সম্পর্কের একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই তরুণীকে ঢাকায় আসতে বলে শুভ। এরপর গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রেমের টানে ঢাকায় এলে শুভ, তার বন্ধু আল-আমিন ওরফে বিল্লাল ও সবুজের ধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী। এ ঘটনায় মো. মনির হোসেন শুভসহ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে অভিযুক্ত শুভকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অন্যদিকে, রমনা বিভাগের একাধিক টিম ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃতে অভিযুক্ত আল-আমিন ওরফে বিল্লাল ও সবুজ গ্রেফতার করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ।
তিনি বলেন, ঢাকায় বসবাসরত মনির হোসেন শুভর সঙ্গে কয়েকমাস আগে ইমো কলের মাধ্যমে পরিচয় হয় পটুয়াখালীর এক তরুণীর। পরিচয়ের সূত্রধরে তাদের মধ্যে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক হয়। এরপর শুভ মেয়েটিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় আসতে বলে। আগে কখনো সরাসরি দেখা নাহলেও ভিডিওকলে একে অপরকে দেখেছে তারা। গত ১২ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী থেকে শুভর আহ্বানে ঢাকায় আসে তরুণী। লঞ্চে করে ঢাকায় এসে সদরঘাটে নামে। সদরঘাট থেকে শুভ মেয়েটিকে লালবাগ কেল্লা মোড়ে আসতে বলে। এরপর শুভ মেয়েটিকে লালবাগের একটি বাসায় নিয়ে যায়।
এডিসি শাহেন শাহ্ বলেন, প্রথমদিনেই শুভ তরুণীকে বাসায় নিয়ে গিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এরপর শুভ তার বন্ধু আল-আমিন ওরফে বিল্লালের সঙ্গে ওই তরুণীকে পরিচয় করিয়ে দেয়। রাতে শুভর বাসায় থাকা যাবে না বলে তরুণীকে আল-আমিনের বাসায় থাকতে বলে এবং আল-আমিন তরুণীকে নিয়ে যায় তার বাসাবোর বাসায়। আল-আমিনের বাসায় গিয়ে তরুণী দেখে সে একটি মেস বাসায় থাকে। সেই বাসায় আল-আমিন ছাড়া আর কেউ নেই। বাকি ফ্ল্যাটগুলো মেস ভাড়া দেওয়া। এরপর মেয়েটির মনে সন্দেহ হতে থাকে। শুভকে ফোন করে মেয়েটি কান্নাকাটি করে এবং সেখান থেকে উদ্ধার হওয়ার জন্য সহযোগিতা চায়। এরপর আল-আমিন ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে। ওই মেসে সবুজ নামে এক যুবক আসে। সেও ধর্ষণের চেষ্টা করে, কিন্তু তরুণীর বাধায় পারেনি।
আল-আমিন একাধিকবার মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে জানিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, আল-আমিনের মেসে ১৩ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান অভিযুক্ত মনির হোসেন শুভ গিয়ে তরুণীকে পটুয়াখালী ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। কিন্তু মেয়েটি তখন বলে, কেন আমাকে বিয়ের কথা বলে ঢাকায় নিয়ে এলে। এ সময় শুভ ও আল-আমিন মেয়েটিকে মারধর করে। এরপর শুভ ও আল-আমিনকে দিয়ে ভুক্তভোগী তরুণীকে রিকশায় পাঠিয়ে দেয়। আল-আমিন টিএসসিতে এসে তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে কোনো উপায়ন্ত না পেয়ে সেখান থেকে ওই তরুণী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসাপাতালে যায়।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি, তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন। মামলাটি লালবাগ অথবা চকবাজার থানায় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলেও জানান এডিসি শাহেন শাহ্।
গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ভিক্টিম তরুণীটির বক্তব্যের সঙ্গে গ্রেফতারদের কথার মিল রয়েছে। এছাড়া ভিক্টিম আরও দুজনের নাম বলতে পারেনি। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ভুক্তভোগী তরুণীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে রমনা বিভাগের এডিসি শাহেন শাহ্ বলেন, মেয়েটির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সে আগের চেয়ে ভালো আছে। মেয়েটি কলেজছাত্রী কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না মেয়েটি আমাদের জানিয়েছে সে পড়ালেখা করে না।
এর আগে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে আটক মো. মনির হোসেন শুভকে গ্রেফতারের পর দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানীর লালবাগ এলাকায় এক তরুণীকে তুলে নিয়ে চারদিন আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। চারদিন আটকে রেখে ধর্ষণ শেষে বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় শাহবাগ এলাকায় ফেলে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী তরুণী। ধর্ষণের শিকার তরুণী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন।
টিটি/এমএএইচ/এএসএম