ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

স্বামীর সন্দেহে বাবার বাড়ি, প্রেমিকের সন্দেহে খুন

মিজানুর রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম | প্রকাশিত: ০৮:৫২ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

তিন সন্তানের জননী শাহিদা আক্তার সুমি (৩৫)। থাকতেন চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানার কলসি দিঘীর পাড় এলাকায়। কয়েক বছর ধরে তার সঙ্গে অন্য পুরুষের সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ করেন স্বামী। এ নিয়ে নিয়মিত পারিবারিক কলহ হতে থাকে। একপর্যায়ে বাবার বাড়ি চলে যান সুমি। নগরের হালিশহরে সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে এক বছর ধরেই থাকছেন তিনি।

এরই মধ্যে তার সঙ্গে সম্পর্ক হয় গ্রামের বাড়িতে পূর্ব পরিচিত আরেক যুবক আশরাফুল ইসলাম ওরফে সুজনের (২৬)। মোবাইলে কথা ও দেখা হতো নিয়মিত। একপর্যায়ে সেই আশরাফও সন্দেহ করতে থাকেন সুমিকে। তার সঙ্গে অন্য পুরুষের সম্পর্ক আছে মনে করে তাদের মধ্যে প্রায়ই কথাকাটাকাটি হতো। এ অবস্থায় আশরাফ পরিকল্পনা করেন সুমিকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার। পরিকল্পনা অনুযায়ী হালিশহর থানার একটি আবাসিক হোটেলে সুমিকে ডাকেন তিনি। সেখানেই কৌশলে হত্যা করে সুমির মরদেহ রেখে পালিয়ে যান আশরাফ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দেন তিনি।

পুলিশ সূত্র জানায়, ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে হালিশহরের উড নামের একটি হোটেলের ৮০২ নম্বর কক্ষ থেকে সুমির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর অজ্ঞাত হিসেবে ওই নারীর মরদেহ পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ময়নাতদন্ত করা হয়। তার পেটে ও গলায় ছুরিকাঘাত ছিল।

ঘটনার শুরুটা হয় ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে। এদিন এক ব্যক্তি ওই আবাসিক হোটেলটিতে একাই উঠেছিলেন। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া আইডি কার্ডটি ছিল আরেকজনের। নিজে উঠার কয়েক ঘণ্টা পর একই দিন বিকেলে এক নারীকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে হোটেলে নিয়ে আসেন তিনি। এর ঘণ্টাখানেক পর পুরুষ ব্যক্তিটি একাই বের হয়ে যান হোটেল থেকে। এরপর দীর্ঘক্ষণ ওই রুম থেকে সাড়া না পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ দরজা ভেঙে কক্ষ থেকে উদ্ধার করে নারীর গলাকাটা মরদেহ।

cctv1

হত্যায় অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার কোনো কুল-কিনারা পাচ্ছিলো না পুলিশ। কারণ মরদেহ পাওয়া নারী অজ্ঞাত। আবার যে আইডি কার্ড দিয়ে পুরুষ ব্যক্তিটি রুম বুকিং নিয়েছিলেন, সেটি আরেকজনের। এছাড়া মাস্ক পরিহিত থাকায় সিসিটিভি ফুটেজে নারী-পুরুষ কারও চেহারা শনাক্ত করা যাচ্ছিলো না। এ অবস্থায় নগরের হালিশহর থানায় একটি হত্যা মামলা করে পুলিশ। সেই মামলার তদন্তে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় কয়েকদিনের মধ্যেই শনাক্ত হন অভিযুক্ত ব্যক্তি।

তার নাম আশরাফুল ইসলাম ওরফে সুজন (২৬)। তিনি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নুরুল ইসলামের ছেলে। বর্তমানে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় থাকেন। এছাড়া উত্তরা ল্যাবএইড হাসপাতালে রিপোর্ট ডেলিভারি সেকশনে চাকরি করতেন বলে জানা গেছে। সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাতে ঢাকার আশুলিয়ার বোনের স্বামীর বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে খুন হওয়া নারীর পরিচয় জানান আশরাফ।

হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর আশরাফ ওই হোটেলে কিছু আলামত রেখে যান। সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করি। এছাড়া আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যে পরিচয় শনাক্ত করি আশরাফের। এরপর ঢাকার উত্তরা ল্যাবএইডে গিয়ে নিশ্চিত হই আশরাফ সেখানে চাকরি করেন। তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য নিয়ে আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তাকে মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।

মিজানুর রহমান/জেডএইচ/এমএস