ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

চট্টগ্রাম বন্দরের ৫৩ জন করোনায় মারা গেলেও বন্ধ ছিল না কাজ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:৩৫ পিএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

করোনায় চট্টগ্রাম বন্দরের ৫৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা গেছেন। তা সত্ত্বেও বন্দর এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয়নি। এভাবে দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে এই বন্দর বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। গত ২০২১ সালে এই বন্দর রেকর্ড পরিমান ৩.২১ মিলিয়ন টি.ই.ইউ কন্টেইনার হ্যান্ডেল করেছে বলে জানিয়েছেন বন্দরটির চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান।

বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৪২তম বৈঠকে কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা যায়।

এর আগে কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক উন্নয়ন হলেও তা বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সমন্বিতভাবে করা হয়নি। ফলে বিদেশি বন্দরের মতো চট্টগ্রাম বন্দর অতটা আকর্ষণীয় নয়। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরকে পরিকল্পিতভাবে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক এবং দর্শণীয় বন্দরে উন্নীত করার পরিকল্পনা প্রণয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

এর জবাবে করোনার মধ্যেও বন্দরের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় ধন্যবাদ জানিয়ে এম শাহজাহান আরও বলেন, ১৩৪ বছরের পুরনো এই চট্টগ্রাম বন্দর। চাহিদার প্রেক্ষিতে এবং প্রয়োজনীয়তার নিরিখে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা কালক্রমে বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে। ফলে বন্দরটিকে পরিকল্পনামাফিক গুছিয়ে দর্শনীয়ভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। যেহেতু এটি একটি ব্রাউনফিল্ড বন্দর তাই এটিকে পরিকল্পনামাফিক গুছানো দুরূহ ব্যাপার। তারপরও বন্দরটিকে যতটুকু সম্ভব ‘রিমডেলিং’ এর মাধ্যমে সুন্দরভাবে গুছিয়ে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক ও দর্শনীয় বন্দরে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের গ্রিন ফিল্ড প্রজেক্ট বে-টার্মিনাল এলাকায় পরিকল্পিতভাবে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক ও আকর্ষণীয় বন্দর সুবিধাদি নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি।

এরপর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ অব প্ল্যানিং মো. মাহবুব মোরশেদ চৌধুরী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বর্তমান সমস্যা ও সমাধান, রাজস্ব আয় ব্যয়, চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক বন্দরে উন্নীত করার জন্য কী করণীয় সে বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট-এর মাধ্যমে উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, একটি আদর্শ বন্দরে প্রায় ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত যন্ত্রপাতি থাকা সুবিধাজনক। চট্টগ্রাম বন্দরে এই অতিরিক্ত যন্ত্রপাতির ঘাটতি আছে। চলমান একটি প্রকল্পের আওতায় ১০৪টি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ওই প্রকল্প শেষ হলে বর্তমান সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা যায়।

তিনি আরও বলেন, কাস্টমস এর অকশন প্রক্রিয়া জটিল ও ধীরগতির হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৭ হাজার টিইইউ অকশন কন্টেইনার দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। এ বিষয়ে কাস্টমসকে বারংবার চিঠি দেওয়া এবং বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করেও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।

কমিটির সভাপতি বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেন।

মো. মাহবুব মোরশেদ চৌধুরী বলেন, বন্দর সংরক্ষিত এলাকায় অবস্থিত পুরাতন কাস্টমস অকশন গোলাটির বদলে নতুন করে একটি কাস্টমস অকশন গোলা চট্টগ্রাম বন্দর নির্মাণ করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিকট হস্তান্তর করেছে। কিন্তু এখনও পুরাতন কাস্টমস অকশন গোলাটি স্থানান্তর করা হয়নি। পুরাতন অকশন গোলাটির স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর হতে সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া হবে বলে তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ হতে এ ব্যাপারে এখনও কোনো ধরনের উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে বিপজ্জনক কার্গো অত্যন্ত মূল্যবান জায়গা নিয়ে রাখা আছে এবং যথাযথ পরিবেশ না থাকায় বিপজ্জনক কার্গোগুলোর কারণে যে কোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই বিপজ্জনক কার্গোগুলো লোকালয় হতে দূরবর্তী কোনো অফডক হতে ডেলিভারির ব্যবস্থা করা নিরাপদ হবে বলে চট্টগ্রাম বন্দর মনে করে।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, বিপজ্জনক কার্গোর ব্যাপারে এর আগে সুস্পষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে দুর্ঘটনা এড়াতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এরপর মাহবুব চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের গত ৫ অর্থ বছরের আয়, ব্যয় ও উদ্বৃত্ত অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের পাঁচটি চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি সভায় উপস্থাপন করে তিনি জানান, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্পটি আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা যায়। সরকারি সিদ্ধান্তে টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য পিপিপিজিটুজি ভিত্তিতে বেসরকারি অপারেটর নিয়োগের জন্য পিপিপি কর্তৃপক্ষ ট্র্যানজ্যাকশন অ্যাডভাইজার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অপারেটর নিয়োগ পর্যন্ত টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিদ্যমান পদ্ধতিতে পরিচালনা করবে।

বৈঠকে বাংলাদেশের সকল নদী ও সংযুক্তকারী বড় খালসমূহ নদী রক্ষা কমিশনের আওতায় এসেছে কি-না, সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। প্রয়োজনীয় স্টাডি করে পরবর্তী সভায় উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে অবৈধ নদী দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে কিনা? এ ক্ষেত্রে কত সংখ্যক অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে নদী দখল উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ক্রয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকদেরকে মন্ত্রণালয়ে বাজেট উপস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের সভাপত্তিবে বৈঠকে কমিটির সদস্য নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মো. মজাহারুল হক প্রধান, রনজিত কুমার রায়, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর এবং এস এম শাহজাদা অংশ নেন।

এইচএস/এসএইচএস/জিকেএস